হরতাল প্রত্যাহার-সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ

বিএনপি এবং তার মিত্র দলগুলোর ১২ মার্চের মহাসমাবেশ থেকে ডাকা ২৯ মার্চের হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয় এবং জনপ্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। লাঙ্গলবন্দের পুণ্যস্নান একই দিনে পড়ায় হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের অনুরোধে বিএনপি নেতৃত্ব হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।


তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে এটাও এড়িয়ে যায়নি যে, হরতালের নতুন কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। অর্থাৎ তারিখ বদল করে হলেও হরতাল করতে হবে_ এমন অবস্থানে তারা আপাতত নেই। আমরা মনে করি, যারাই বিরোধী দলে থাকুক না কেন বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় এটাই রাজনৈতিক কৌশল হওয়া উচিত। বিএনপি জোট দেশব্যাপী লংমার্চ ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠানের পর ১২ মার্চ চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি দিয়েছিল। মহাজোট সরকারের তরফে এ কর্মসূচি পালনে নানাভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হলে আমরা তা সঠিক বলে মনে করিনি। সুশীল সমাজও 'ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলার' সরকারি পদক্ষেপের সমালোচনা করে। বিএনপি অবশ্য শেষ পর্যন্ত সফলভাবেই সমাবেশ সম্পন্ন করে এবং সেখান থেকে 'সরকারি দমননীতির প্রতিবাদে' হরতাল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে তিন মাসের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। হরতাল প্রত্যাহার হলেও তাদের মূল দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। সরকার কীভাবে তা মোকাবেলা করবে, সেটা দেখার বিষয়। তবে আমরা মনে করি, রাজনৈতিক ইস্যুর নিষ্পত্তি আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া উত্তম এবং এ জন্য সবচেয়ে কার্যকর ফোরাম হচ্ছে জাতীয় সংসদ। বিএনপি এবং তার মিত্ররা ১২ মার্চের মহাসমাবেশের পর জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছে এবং সেখানে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া একটানা প্রায় দুই ঘণ্টা বাধাহীনভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এক বছর অনুপস্থিত থাকার পর একটানা কয়েকদিন বিরোধীদলীয় সদস্যরা সংসদে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। এ সময় তাদের একাধিক সদস্য যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন তার ভাষা সবক্ষেত্রে সংসদীয় ছিল না। সরকারি দলের কোনো কোনো সদস্যের জবাবি ভাষণেও ছিল একই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অসংসদীয় আচরণ। আমরা মনে করি, সংসদ বর্জন নয়, বরং অসংসদীয় আচরণ বর্জন করাই শ্রেয়। বিরোধী দল তাদের দাবি আদায়ের জন্য আলটিমেটাম দিয়েছে। এ সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই বসবে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। এ অধিবেশনে বিরোধী দল উপস্থিত থাকবে, এটাই আশা করব। ধরে নেওয়া যায়, এ সময় তাদের সমাবেশ-মিছিল ও বিক্ষোভের কর্মসূচি থাকবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি কাম্য নয়। তবে আশা করব, নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার জন্য জাতীয় সংসদের অধিবেশনকেই প্রধান ফোরাম হিসেবে তারা ব্যবহার করবে। এ বিষয়টি নির্বিঘ্ন রাখায় সরকারি দলের নেতৃত্ব এবং বিশেষ করে স্পিকারের সক্রিয় ভূমিকা থাকা চাই। এক্সপাঞ্জ করার মতো বক্তব্য অবশ্যই বাদ পড়বে এবং এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের হুইপের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বিশেষভাবে এটাও মনে রাখতে হবে, দেশ যেভাবে চলছে তার অনেক কিছুই সমালোচনাযোগ্য এবং এ ক্ষেত্রে বক্তব্য উপস্থাপনে কোনো ধরনের বাধা প্রদান সংসদের বাইরের রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকেই বিরোধীদের বেশি বেশি করে ঠেলে দেবে।

No comments

Powered by Blogger.