বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করুন, মানুষের নিরাপত্তা দিন-আইনশৃঙ্খলার অবনতি

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যখন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগছেন, তখন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে বা ক্রসফায়ারে মারা গেছেন ৩০ জন।


অর্থাৎ প্রতি তিন দিনে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। এই সময়ে ৪০ জন সাংবাদিকও নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এ ছাড়া ধর্ষণের শিকার ১৪৮ জন নারী, তাঁদের মধ্যে ২২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন সাতজন নারী।
আসকের তথ্যকে পূর্ণাঙ্গ বলা যাবে না। উল্লিখিত সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যেসব অপরাধমূলক খবর ছাপা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি। সে ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায়, এর বাইরেও অপরাধের বহু ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা হয়রানির ভয়ে সব সময় থানা-পুলিশের কাছে যান না, আবার গেলেও সব ঘটনা পত্রিকায় আসে না।
এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে পারে না। একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে উপর্যুপরি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে আক্রান্ত নারীরা অপরাধী চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার পথ বিছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। একে কোনোভাবেই আইনের শাসন বলা যায় না।
এতে যে কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে তা-ই নয়, মানুষের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। থানা-পুলিশ ও আইনের প্রতি তারা আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থা চলতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো নয়। তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে অপরাধীরা এতটা আশকারা পেত না।
সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করা হয়, অপরাধমূলক ঘটনা আগের চেয়ে কমেছে। এর কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারবে কি? থানায় মামলার সংখ্যা দিয়ে অপরাধের মাত্রা নির্ধারণ করা যায় না। অতএব, আইনশৃঙ্খলা ভালো আছে, এই আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের প্রতিই মনোযোগী হতে হবে। মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। কোনো সভ্য দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা অপরাধ দমনের উপায় হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.