যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ফাটল সারাবে কে?-যমুনা সেতুর সর্বনাশা ফাটল

২০০৫ সালের ফাটল ২০১১-তে যেমন হওয়ার কথা তেমনই হয়েছে; তিন গুণ বেড়েছে ক্ষতি, মেরামত ব্যয় বেড়েছে ১২০ কোটি টাকা। দরপত্র বদল হয়েছে চারবার এবং এখনো পর্যালোচনা-সমীক্ষা-ফাইল চালাচালি চলছে। সেতু রক্ষার কোনো উদ্যোগেই এখনো হাত পড়েনি এবং এই চরম গাফিলতির শাস্তি হয়নি কারও।


যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু দেশের বৃহত্তম স্থাপনা, কৌশলগত দিক থেকেও এর গুরুত্ব ব্যাপক। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বাদবাকি বাংলাদেশের এটিই প্রধান সড়ক সংযোগ। সেতুটির কল্যাণে কেবল যোগাযোগেই গতি আসেনি, সমগ্র উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিও গতি পেয়েছে। এটি কেবল রড-সিমেন্টের একটা কাঠামো নয়, দেশের প্রশস্ততম নদীর ওপর দীর্ঘতম এই সেতু জাতীয় আত্মবিশ্বাসেরও প্রতীক। সে রকমই একটি সেতুর ফাটল ছয় বছর যাবৎ মেরামতের অভাবে বাড়তে থাকা যে কত বড় দায়িত্বহীনতা, তা বোঝার ক্ষমতা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মনে হয় নেই। ফাটলটা তাই শুধু সেতুতে নয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বনিষ্ঠাতেও। এর মধ্যে নির্বাচিত দুটি এবং অনির্বাচিত একটি মিলে তিনটি সরকার ক্ষমতায় ছিল ও আছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতুর ফাটলের চিকিৎসা জোটেনি!
সুস্থ কাণ্ডজ্ঞানে এটা বোধগম্য নয় যে, এ রকম একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার প্রতি এত অবহেলা সরকারি তরফে কীভাবে সম্ভব। প্রায় এক দশক লেগেছিল সেতুটি নির্মাণ করতে। নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিল কোরীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাই। ফলে প্রথম দায় তাদের। ২০০৬ সালে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে সেতুর নকশাতেই গলদ চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এর জন্য হুন্দাইকে কোনো জবাবদিহিই করতে হয়নি। সেই প্রতিবেদনে দ্রুত মেরামতের উদ্যোগের সুপারিশ করা হয়। তারপর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজটা হয়নি। এ জন্য দায়ীদের কোনো জবাবদিহি করতেও দেখা যাচ্ছে না। এখন দেখা যাচ্ছে, চতুর্থ দফা দরপত্র আহ্বান শেষে মেরামত শুরু হতে আরও এক বছর লাগবে। তত দিনে ফাটল যে ভাঙনে পরিণত হবে না, তা কে বলতে পারে? সুতরাং ক্ষতি যত অপূরণীয় দায়ও ততটাই ক্ষমাহীন হওয়া উচিত। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বাণিজ্যিক স্বার্থেই এই গড়িমসি। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা এখন সরকারের কর্তব্য।
এ রকম হতাশাজনক অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন, আপনি হস্তক্ষেপ করুন, যত দ্রুত সম্ভব সেতুটিকে বাঁচানোর ব্যবস্থা নিন। তার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নামের সম্মান এবং জাতীয় আত্মবিশ্বাস দুইকেই বিপন্নতার হাত থেকে বাঁচান।
ফাটল সৃষ্টির দায়ও হুন্দাইকে নিতে হবে, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে মেরামতের খরচও জোগাতে হবে তাদের। একই সঙ্গে মেরামত না হওয়ার দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। বিদেশি কোম্পানি হলেই কাজ ভালো হবে, বা তাদের ভুল ধরাছোঁয়ার বাইরে, এমন ধারণাও ত্যাগ করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.