আল বিদা মাহে রমজান by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

১৪৩২ হিজরির ২৫ রমজান আজ। দেখতে দেখতে আমরা রমজান মাসের শেষ প্রান্তে এসে উপস্থিত। হতে পারে এই রমজানই অনেকের জীবনের শেষ রমজান। গত বছর যারা রমজান পেয়েছিল তাদের অনেকেই এ বছর আর দুনিয়াতে নেই।


তাই চলমান এই রমজানে আমরা আল্লাহতায়ালার অবারিত রহমত লাভ করে, মাগফিরাত অর্জন করে মুক্তির ব্যবস্থা করতে পেরেছি তার হিসাব করতে হবে। রমজানে যদি আমাদের হিসাবের খাতা শূন্য থাকে, তাহলে সেটা হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যজনক। তাই আমাদের উচিত হলো রমজানের এই শেষ কয়েকটা দিন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অতিবাহিত করা।
আমরা জানি, রমজান ইবাদত-বন্দেগির মাস। রোজাদার ব্যক্তি ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করে ইফতার, তারাবি, সেহরি, ইতেকাফ, সদকাতুল ফিতরে সবকিছুর মধ্য দিয়ে খোঁজেন আল্লাহর সানি্নধ্য। এরপর ঈদুল ফিতরের উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে রমজানের পরিসমাপ্তি ঘটে। রমজান মাসের সম্পূর্ণ কার্যক্রম ইসলামী সংস্কৃতির মহান ঐতিহ্য বহন করে। তাই আমাদেরও উচিত রমজানের শেষ কর্মসূচিগুলো সে অনুযায়ী কাটানো।
শবেকদর : আল্লাহতায়ালা যে মহিমাময় রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন, যে রাতের ইবাদত-বন্দেগি হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক পুণ্যের কালপরিক্রমায় রমজানে সেই মহিমান্বিত রাত মুসলমানদের জীবনে ফিরে আসে। মহিমাময় সেই রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। সাধারণ হিসেবে আগামীকাল দিবাগত রাতই সেই রাত। অবশ্য রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবেকদর অন্বেষণের কথা বলা হয়েছে হাদিসে।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উলেল্গখ আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, 'তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবেকদর সন্ধান করো।' (বুখারি ও মুসলিম) আরেকটি হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবেকদর সন্ধান করো।' বুখারি
সদকাতুল ফিতর : দ্বিতীয় হিজরিতে রমজানের রোজা ফরজ করার সঙ্গে সঙ্গে নবী করিম (সা.) মুসলমানদের 'সদকাতুল ফিতর' আদায় করার নির্দেশ দেন। একে সাধারণত 'ফিতরা' বলা হয়। ইসলামের পরিভাষায় রমজান শেষে ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে মাথাপিছু যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্য গরিব-মিসকিনদের করা হয় একে 'সদকাতুল ফিতর' বলে।
যে ব্যক্তির কাছে ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সমমূল্যের অন্য কোনো সম্পদ থাকে তার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। এসব সম্পদ বা অর্থ যদি কারও হাতে ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময়ও আসে, তবুও তাকে ফিতরা দিতে হবে। কেউ যদি সামর্থ্যবান নাও হন, অথচ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় করেন, তাহলে তিনি অশেষ সওয়াব পাবেন।
খেজুর, কিশমিশ, মুনাক্কা এবং যব দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা হলে এক সা অর্থাৎ তিন কেজি ৩০০ গ্রাম অথবা এর মূল্য আদায় করতে হবে। আটা বা গম দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা হলে অর্ধ সা অর্থাৎ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর মূল্য আদায় করতে হবে। মাথাপিছু এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা আটা অথবা এর স্থানীয় বাজারমূল্যের সমান ফিতরা দিতে হয়। উলেল্গখ্য, এবারের ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৫৩ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঈদুল ফিতর : ঈদ মানেই আনন্দ ও খুশির উৎসব। বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে বছরে দু'বার ঈদ হাজির হয়। একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতর পালিত হয় ১ শাওয়াল আর ঈদুল আজহা পালিত হয় ১০ জিলহজ। আরবে প্রথম ঈদুল ফিতর মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরি ২ সনের ১ শাওয়াল শুক্রবার মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ পালিত হয়। অন্যদিকে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে রমজান মাসে মক্কা বিজয়ের ৮-৯ দিন পরে মক্কা মুকাররামায় সর্বপ্রথম ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছিল।
ঈদুল ফিতরে হক্কুল্লাহ আদায়ের পাশাপাশি হক্কুল ইবাদ আদায়ের বিধান সমানভাবে বাস্তবায়িত হয়। ইসলাম সব ধনাঢ্য ও সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ঈদুল ফিতরে 'ফিতরা' আদায়ের বিধান অত্যাবশক করেছে। ঈদে শুধু সামর্থ্যবানরাই আনন্দ করবে, গরিব অসহায়রা নয়, এমন রীতি ইসলাম সমর্থন করে না। জাকাত আদায়ের জন্যও সাধারণত ঈদুল ফিতরের সময়টাকেই বেছে নেওয়া হয়। সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যই আল্লাহতায়ালা জাকাতের বিধান দিয়েছেন। এই প্রতীকী সাম্য ও ঐক্য বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ। আত্মশুদ্ধি তথা কলুষমুক্ত নতুন জীবনের উপলব্ধির মধ্যেই ঈদুল ফিতরের মূল তাৎপর্য নিহিত।
muftianaet@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.