পাকশীতে পর্যটন-নদীমাতৃক দেশে নন্দিত উদ্যোগ

পাবনার পাকশীতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হলেও সাধুবাদযোগ্য। সেখানকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যায়, তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শন করেছে বলে মঙ্গলবার সমকালে


খবর প্রকাশিত হয়েছে। সন্দেহ নেই, দেশের বৃহত্তম রেলসেতু ও রেলওয়ে জাদুঘর সমৃদ্ধ ওই শহর পর্যটনের ক্ষেত্রে অবদান রাখতেই পারে। কিন্তু কমিটির পরিদর্শনের ফলে যে বিশেষ মাত্রা যুক্ত হয়েছে, তা হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পদ্মা নদীকেই কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হচ্ছে। বস্তুত কেবল পাকশী নয়, নদীমাতৃক সমগ্র বাংলাদেশেই এমন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সবেধন নীলমণি দুই-একটি নদীকে কেন্দ্র করেই পর্যটনের বিকাশ ঘটিয়েছে। অথচ জালের মতো ছড়িয়ে থাকা হাজার নদীর এই দেশে এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনাই হয়নি। অবশ্য আধুনিক পর্যটন বলতে যা বোঝায়, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা গাঙ্গেয় বদ্বীপে তার প্রসার অনেককালই আশাব্যঞ্জক ছিল না। আশার কথা, গত এক দশকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল, বঙ্গোপসাগর সৈকত এবং সুন্দরবনে পর্যটন ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। কিন্তু নদীপ্রধান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলো রয়ে গেছে অবহেলিতই। যমুনা ও পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে দুই-একটি বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র যদিও গড়ে উঠেছে, সরকারি উদ্যোগ কোথাও দেখা যায় না। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের ছায়াঢাকা হিজল-করচ-বরুণ শোভিত ও অতিথি পাখিমুখর হাওরাঞ্চলও রয়েছে একেবারেই অনুন্মোচিত। আমরা মনে করি, এ দেশের বুক চিড়ে প্রবাহিত ছবির মতো সুন্দর নদীকে কেন্দ্র করে আরও আগেই পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারত। তবে সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। নদীগুলো দখল, দূষণ ও ভরাটের কবলে পড়লেও সেগুলো সি্নগ্ধ সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা কঠিন নয়। বড় কথা, খোদ পর্যটন শিল্পের বিকাশও নদী রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আর মানুষ যত নদীর কাছাকাছি যাবে, প্রকৃতির এ কন্যার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতাও বাড়বে। আমরা মনে করি, নদী রক্ষায় বর্তমান সরকারের বহুমাত্রিক উদ্যোগের মধ্যে এ বিষয়টিও স্থান পেতে পারে। পদ্মা তীরের পাকশীকে নদী পর্যটন স্থল হিসেবে গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই তা সূচিত হোক।
 

No comments

Powered by Blogger.