ভালো সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ-হরতাল প্রত্যাহার

পরমতসহিষ্ণুতা ও সহনশীলতার একটি নজির স্থাপন করল বিরোধী দল। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় উৎসব যাতে নির্বিঘ্নে উদ্যাপিত হতে পারে, সে জন্য বিএনপি ২৯ মার্চের হরতাল প্রত্যাহার করেছে। নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নান উদ্যাপন কমিটির নেতারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ


জানিয়েছিলেন। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও স্বাভাবিকভাবে এই কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবিতে উচ্চকিত ছিল। ক্ষমতাসীনদের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদে ১২ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত চার দলের মহাসমাবেশ থেকে এই হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আমরা নীতিগত কারণেই এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির বিরোধিতা করে আসছি। কারণ, ক্ষমতাসীনদের কোনো নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হরতাল-অবরোধ ডাকা হলে তা প্রতিকারের পরিবর্তে জনজীবনে বহুমাত্রিক পীড়ন ও লাঞ্ছনা বয়ে আনে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি সবার ধর্ম পালনের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এ দিকটি বিবেচনায় নিয়ে চারদলীয় জোট হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে আমরা ধর্ম সম্পর্কে বিএনপির এই দৃষ্টিভঙ্গির ধারাবাহিকতা আশা করি। কারণ, ১২ মার্চ তারা যে কারণে ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছিল, তার অন্যতম দাবি ছিল—সংবিধান থেকে সর্বশক্তিমানের নাম তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ করা। ’৭২-এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও ধর্মহীনতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। সব ধর্মের অধিকার স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যার যা ধর্ম, তা-ই সে পালন করবে। সেই ধর্ম পালনে যাতে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না হয়, সেই উদ্দেশ্যেই বিএনপি ২৯ মার্চের হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।
একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকবে, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগের বিষয়টি তারা মাথায় রাখবে। যেহেতু বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণের জন্য সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, সেহেতু অন্তত তার আগে এ ধরনের কঠিন কর্মসূচি দেওয়ার যুক্তি নেই। তা ছাড়া হরতাল-অবরোধে সরকারের তেমন ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় দেশ ও জনগণের। একই সঙ্গে সরকারকেও বাড়াবাড়ির পথ পরিহার করতে হবে।
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পূর্বশর্ত হলো, রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাত দেখাবে না। বিশ্বের বহু দেশে যেখানে রাষ্ট্রধর্ম নেই, সেখানেও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ ভিন্ন ভাষাভাষী ও ধর্মের অনুসারী জনগোষ্ঠী বাস করে। সেসব দেশ যদি ধর্মনিরপেক্ষতার পথ ছেড়ে ধর্মাশ্রয়ী হয়ে ওঠে, তাহলে ভিন্ন ধর্মের জনগোষ্ঠীর ওপর কমবেশি তার বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। ধর্মের প্রকৃত আদর্শ অনুসরণ না করে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বহু অঞ্চলে দুঃখজনক রাজনৈতিক উল্লম্ফন চোখে পড়ে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত জোটটি পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণু হয়ে যদি ২৯ মার্চের হরতাল প্রত্যাহার করে থাকে, তাতে তাদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বলই হবে।

No comments

Powered by Blogger.