পুলিশের পোশাকে সন্ত্রাসী-অন্য সন্দেহও অমূলক নয়

সমাজে অপরাধ বেড়ে গেলে তা দমনের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করে, তেমনি অপরাধী চক্রও বদল করে নিজেদের কৌশল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে তাদের মদদেই অপরাধী চক্র নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকে_এমন অনেক অভিযোগ


পাওয়া যায়। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে নিজেদের আড়াল করে রাখে অপরাধ জগতের অনেকে। এ রকমই এক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবারের কালের কণ্ঠে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে রাজধানীর লালবাগ এলাকার চিহ্নিত দুই সন্ত্রাসীর কথা। পুলিশের তালিকাভুক্ত এই দুই সন্ত্রাসী পুলিশের পোশাক পরে চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধ। তাদের কাজের ফিরিস্তি শুনলে অবাক হতে হয়। পুলিশের পোশাক পরে মাইক্রোবাস ভাড়া করে সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিলসহ নেশাদ্রব্য নিয়ে আসা হয় রাজধানীতে। পুলিশের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো এই দুই সন্ত্রাসী চলার পথে দায়িত্বরত পুলিশকেও ফাঁকি দেয় এই পোশাকের গুণে। পুলিশের পোশাক পরে সীমান্ত এলাকা থেকে আনা মাদকদ্রব্য লালবাগের নির্দিষ্ট এলাকায় রেখে বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়। পুলিশের পোশাক পরে এই দুই সন্ত্রাসী এলাকার কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করে। আদায় করে থানার অলিখিত মাসোহারা। এলাকার লোকজনকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা নেওয়ার উদাহরণও আছে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে দুই সন্ত্রাসীর ছবি ছাপা হলেও এই চক্রের সঙ্গে আরো অনেকেই জড়িত বলে জানা গেছে। এই সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে থানা-পুলিশের একটি গোপন আঁতাত আছে বলে জানা যায়। অনেক সময় চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীদের পুলিশের সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ আছে, প্রবাসীরা দেশে ফিরলে এই সন্ত্রাসী চক্র থানায় গিয়ে খবর দেয়। এই চক্রের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী বিদেশ থেকে ফিরে আসা অনেককে থানায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। মাদকদ্রব্যসহ কোর্টে চালান দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা আদায়ের অভিযোগও আছে। যদিও পুলিশ শেষ পর্যন্ত তা অস্বীকার করেছে।
পুলিশ না হয়ে পুলিশের পোশাক পরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো অপরাধ। সেই পোশাক পরে অপরাধীদের অপরাধ করে বেড়ানোর কথা তো ভাবাই যায় না। সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষের চোখের সামনে এভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরে ঘুরে বেড়ালে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। র‌্যাব-পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কাজের খবর এর আগে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীরা ধরা পড়লেও এমন আরো অনেক অপরাধী এই কাজটি করছে। এর সঙ্গে থানা-পুলিশের যোগসাজশের খবরটি সত্যি হলে তা রীতিমতো দুর্ভাগ্যজনক। সাধারণ বিবেচনায় তখন পুলিশের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো সন্ত্রাসী ও এই সন্ত্রাসীদের সহযোগী পুলিশ সমান অপরাধী। এ সন্দেহটা একেবারে অমূলক বলা যাবে না। এ ব্যাপারে পুলিশের নীরবতা ও নির্লিপ্ততা বোধ হয় সেই সন্দেহটা বাড়িয়ে দেয়।

No comments

Powered by Blogger.