এই মৃত্যু কি এড়ানো যেত না?-চট্টগ্রামে পাহাড়ধস

আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকলে বিপদের ভয়ে হয়তো তারা সরেই যেত! যাওয়ার জায়গার অভাবটা হয়তো মরণের চেয়ে বেশি কঠিন ছিল। মরণকেই শেষ পর্যন্ত বরণ করতে হলো চট্টগ্রামের বাটালি হিল এলাকায় পাহাড়ের নিচে বসবাস করা মানুষের অন্তত ১৫ জনকে। মাটির নিচে চাপা পড়া বাকি তিনজনেরও হয়তো একই পরিণতি হয়েছে।


চার বছর আগেও ঘটেছিল একই ঘটনা। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ধসে তখন মারা গিয়েছিল ১২৭ জন। মৃত্যুকে কি আমরা সংখ্যার বিচারেই গুরুত্ব দেব? চার বছরের ব্যবধানে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা কমেছে, এটাই কি সান্ত্বনা?
চার শিশুসহ তিনটি পরিবারের ১৮ জনের এই মৃত্যু কি এড়ানো যেত না? এ ধরনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে, এটা জানা কথা। বাটালি হিলে রেলওয়ে ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের জায়গায় যে বস্তিঘরগুলো ছিল, সেগুলো যে বৃষ্টির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা কর্তৃপক্ষ যে অনুমান করেনি, তাও তো নয়। সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দিয়ে মাইকিংও করা হয়েছে। এতে কাজ হয়েছে, অধিকাংশ বাসিন্দাই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। কর্তৃপক্ষ যদি শুধু মাইকিংয়েই দায়িত্ব না সারত তাহলে এই ১৮টি প্রাণও বাঁচানো যেত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন হয়েছে ঠিকই, পুরোটা নয়, অর্ধেক।
চার বছর আগের দুর্ঘটনার পর পাহাড়ধস ঠেকাতে প্রতিরক্ষা দেয়াল বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুই বছর আগে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে তা এখনো চলছে। এবারের ধসে এই প্রতিরক্ষা দেয়ালের একটি অংশসহ পাহাড়ের মাটির বিরাট খণ্ড ২৫টি বাড়িকে চাপা দেয়। কতটুকু মানসম্মতভাবে এই প্রতিরক্ষা দেয়ালের নির্মাণকাজ চলেছে এবং চলছে সে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। বিষয়টির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০৭ সালের ওই ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনার পর পাহাড়ের নিচে ঝুঁকির মধ্যে এ ধরনের বস্তি গড়ে ওঠে কী করে? পাহাড়ের এসব জায়গা কোনো না কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের। এসব স্থানে বাড়িঘর গড়ে তোলার কোনো সুযোগ নেই। পুরো ব্যাপারটিই অবৈধ। শুক্রবার সকালে এই পাহাড়ধসের ঘটনার পর সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক বৈঠক হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের এসব জায়গা অবৈধভাবে দখল করে এলাকার চিহ্নিত কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ঘর তুলে নিম্ন আয়ের লোকজনের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় থাকলে ‘প্রভাবশালী’ এই ব্যক্তিরা এই অবৈধ কাজ করার সুযোগ পায় কীভাবে?
এ ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটির প্রধান কাজ হওয়া উচিত কোন প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে সেখানে বস্তি বানিয়েছিল, তাদের এবং তাদের সঙ্গে সরকারের যে বিভাগের জমি তাদের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে, তাদের চিহ্নিত ও বিচারের মুখোমুখি করা। এই মৃত্যুর দায়ভার আসলে তাদেরই।
এই মৃত্যু আমাদের শোকার্ত করেছে। আমরা সবার আত্মার শান্তি কামনা করছি। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি রইল আমাদের সমবেদনা।

No comments

Powered by Blogger.