বিশৃঙ্খলা রোধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিন-মিছিলে সরকারি কর্মচারী

রাজনৈতিক দলের শোভাযাত্রায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ ‘সরকারের মধ্যে সার্বিক বিশৃঙ্খলা’ বলে যে মন্তব্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত করেছেন, তা যথার্থ। তবে এই অপ্রিয় সত্য ক্ষমতাসীন দল (যারাই যখন থাকে) সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করে বলে আমরা প্রমাণ পাই না।


বাংলাদেশের সংবিধান বলেছে: ‘আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।’ তথাকথিত জনতার মঞ্চে যেসব সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তা যোগ দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ তাঁদের পুরস্কৃত করেছিল। আওয়ামী লীগ তত্ত্ব দিয়েছিল, অবৈধ নির্দেশ মানতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাধ্য নন। কিন্তু বৈধ-অবৈধ এই বিতর্কের সুরাহা কীভাবে হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর জানা নেই। তারা শুধু সাময়িকভাবে দলের লাভ-লোকসানের বিষয়েই ব্যতিব্যস্ত থাকে। এর আগে বিএনপির পক্ষে একশ্রেণীর আমলা গাঁটছড়া বাঁধার তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছিলেন, মিডিয়া যাকে ‘উত্তরা ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সুতরাং, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহারের একটা প্রবণতা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আছে। কিন্তু এটা সুষ্ঠুভাবে জনপ্রশাসন পরিচালনার প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির পরিপন্থী।
গত এক দশকে দলীয় বিবেচনায় জনপ্রশাসনে পদোন্নতি, বিদেশ ভ্রমণ ও কর্মস্থল নির্ধারণের ক্ষেত্রে দলীয় বিচার-বিবেচনার প্রাধান্যের একটা রুগ্ণ ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যায়। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের মন্তব্য একটি অপ্রিয় সত্যের উচ্চারণ। তাঁর যুক্তি: জিয়া পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ইত্যাদি সংগঠনের ব্যানারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মিছিল বা শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া ঠিক নয়।
৭ মার্চের উদ্যাপন যদি গণকর্মচারীদের ‘অধিকার’ হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে ১২ মার্চের মতো কর্মসূচি কি অধিকার হিসেবে পালন করতে দেওয়া হবে? এ ধরনের জটিলতা ও বিতর্ক এড়াতেই দল-নির্বিশেষে গণকর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে দূরে রাখার আইন বহাল রয়েছে। প্রশাসনের শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনস্বার্থে তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.