প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরঃ প্রত্যাশা ও কিছু প্রশ্ন by ড. মাহবুব উল্লাহ্



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যাসন্ন ভারত সফর বাংলাদেশ ও ভারতের মিডিয়াতে অনেক জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে যখনই একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে তখন নতুন প্রধানমন্ত্রীর দুটি প্রধান প্রতিবেশী দেশ সফর একটি রুটিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ দুটি হলো ভারত ও চীন।
নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কোন দেশটি আগে সফর করলেন এবং কোন দেশটি পরে, তার তাত্পর্য খুঁজতে মিডিয়া ও বিশিষ্টজনেরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভারত বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। এ কারণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিও জন্মলগ্ন থেকে ভারতনির্ভরতা এড়িয়ে চলতে পারছে না। এ যেন এক অমোঘ নিয়তি। দেশে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন, অথচ ভারত সফরে যাওয়া হয়ে উঠেনি—এ যেন একটি ফরজ ধর্মীয় অনুশাসন পালন না করার গুনাহ্র শামিল হয়ে দাঁড়ায়। অপরদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণচীনের ভূমিকা নেতিবাচক থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে আগ্রহের কমতি থাকে না। কারণ ১৯৭১-এ গণচীনের বিশেষ অবস্থান সত্ত্বেও এদেশের জনগণের মনে একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, গণচীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অকৃত্রিম বন্ধু। এই ধারণা বদ্ধমূল হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো ১৯৬২’র চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধের পর ভারত-চীন সম্পর্কে গভীর টানাপোড়েনের সৃষ্টি। সত্যিকার ইতিহাস হলো, চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতি ১৯৬২’র সীমান্ত যুদ্ধের সময় থেকেই সূচিত হয়নি। এর অনেক আগে থেকেই ভেতরে ভেতরে চীন-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাইলামার প্রতি ভারতের আগ্রহ এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া চীন-ভারত সীমান্তরেখা বহাল রাখার ব্যাপারে ভারতের একগুঁয়েমি উভয় দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ’৬২-র সীমান্ত যুদ্ধের আগে থেকেই টানাপোড়েনের উদ্ভব ঘটিয়ে ছিল। ’৬২-র সীমান্ত যুদ্ধের পর উভয় দেশের সম্পর্ক প্রায় বৈরিতার পর্যায়ে নেমে আসে। রাজীব গান্ধীর সময়ে উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হলে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি ঘটে। এই পর্যায়ে চীন ও ভারত বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোকে একপাশে রেখে অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়; কিন্তু সম্প্রতি এই দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল রাজ্যকে চীন তার নিজস্ব ভূখণ্ড বলে দাবি করে বসেছে। অরুণাচল রাজ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সফরকেও চীন ভালোভাবে নেয়নি। এই যখন চীন-ভারত সম্পর্কের অবস্থা, তখন বাংলাদেশের জনগণের চীনকে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা একটি কথাই প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা করলেও বাংলাদেশের অভ্যুদয়লগ্ন থেকে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আচরণ বাংলাদেশের জনগণ কখনোই পছন্দ করেনি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অজস্র বিরোধীয় বিষয় আছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের সমস্যা, ফারাক্কায় বাঁধ নির্মাণ করে ভারত কর্তৃক গঙ্গা নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং বাংলাদেশকে চুক্তি মোতাবেক গঙ্গার পানির অংশ না দেয়া, পুশ ব্যাক ও পুশ ইন, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে তাকে বিদ্যুতায়িত করার চেষ্টা, ১৯৭৪’র মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশী ছিটমহল দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতায় যেতে বাংলাদেশকে তিনবিঘা করিডোর অনন্তকালের জন্য লিজ প্রদান না করা, তালপট্টি দ্বীপ দখল, ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ, ছিটমহল সমস্যা জিইয়ে রাখা, উভয় দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ফয়সালা না করা, টিপাইমুখে নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে ভারতের সক্রিয় মদতদান, ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানাবিধ শুল্ক ও অশুল্ক বাধা সৃষ্টি করে বাংলাদেশী পণ্যের ভারতীয় বাজারে প্রবেশে বাধা দান, তিস্তা নদী থেকে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার প্রভৃতি সমস্যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে গভীর ছায়াপাত করেছে। এর একটি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও ভারত আজ পর্যন্ত ন্যূনতম আন্তরিকতা কিংবা বন্ধুসুলভ আচরণ প্রদর্শন করেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণের ধারণা—গণচীনের বন্ধুত্ব ছাড়া ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বার্থ আদায় প্রায় অসম্ভব।

স্নায়ু যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে চীন-মার্কিন সম্পর্কেও নতুন ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। একটি বিশাল অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে চীনের ক্রমঅভ্যুদয় বিশ্ব মোড়লিপনায় অভ্যস্ত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এখন ভারতকে তার ‘চীন ঠেকাও নীতি’র অংশীদাররূপে পেতে আগ্রহী। এই পথে মার্কিন-ভারত সম্পর্কও অনেক দূর এগিয়ে গেছে; কিন্তু বাদ সেধেছে বিশ্ব আর্থিক সঙ্কট। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জন্য চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবকিছু মিলে বাংলাদেশের নেতৃত্ব যদি ধীশক্তির সঙ্গে তার আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক পরিচালনা করতে সক্ষম হয় তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই তার জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে অতি চমত্কার সাফল্য অর্জন করতে পারে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ অতীতের মতো এখন আর সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়েও চলতে পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমাদের দেশের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী জনগণের মধ্যে এমন এক বিভ্রান্তির কুয়াশা সৃষ্টি করে চলেছেন যে, ভারতের মনোরঞ্জন করে চলাটাই হলো বাংলাদেশের অমোঘ নিয়তি। অথচ পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করে, নেতৃত্ব কীভাবে জনগণকে প্রস্তুত করে তোলে। কিউবা যদি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের উদরের মধ্যে অবস্থান করেও তার স্বকীয়তা ও মর্যাদা রক্ষা করে চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশে ও ভারতে সংবাদ মাধ্যমে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের এজেন্ডা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ও খবরাখবর প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের একটি ভারতবান্ধব দৈনিক আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা (ক্ষমতাসীন জোট ও প্রধান বিরোধী দল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ) বলেছেন, দিল্লিতে ১৯ ডিসেম্বর (এই তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নির্ধারিত ছিল) অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যকার বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। দু’দেশের নেতৃত্বের দীর্ঘদিনের মানসিকতা পরিবর্তন সম্পর্কোন্নয়নে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। তবে বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের যে ইতিবাচক উত্তরণ হবে, তা বজায় রাখতে হলে বিভিন্ন স্তরে নিয়মিতভাবে আলোচনার মাধ্যমে ঝুলে থাকা বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত যেমন উপকৃত হবে, পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে সুদৃঢ় অবস্থান অর্জন করতে পারে দক্ষিণ এশিয়া। এক দেশের ভূখণ্ড অন্য দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করার যে অভিযোগ আছে, সেটা দূর করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে।
প্রশ্ন হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যকার একটি বৈঠক কী করে ৩৮ বছর ধরে ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান আনবে? আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধীয় বিষয়গুলো এরই মধ্যে উল্লেখ করেছি। এর একটিও কি ৯ জানুয়ারির সফরের মধ্য দিয়ে ফয়সালা হবে? ভারতবান্ধব সংবাদপত্রগুলো অনেক আশার বাণী শুনিয়েছিল। অথচ সরকারের তরফ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানানো হয়নি, আসন্ন এই শীর্ষ বৈঠকে এজেন্ডা কী। জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এসব ব্যাপারে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকেও আস্থায় নিতে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। অবশেষে ৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে তিনটি চুক্তি হতে পারে। এগুলো হলো—সন্ত্রাসবাদ, সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বিনিময় ও ফৌজদারি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধি। খাস কথা হলো, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের যত মাথাব্যথা, বাংলাদেশের ততটা নয়। কারণ ভারত উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদ্রোহী গ্রুপ উলফাসহ অন্য স্বাধীনতাকামী গ্রুপগুলোকে দমনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সক্রিয় সহায়তা কামনা করে এসেছিল। বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন নাগরিকরা মনে করেন, এ ধরনের কোনো সহায়তা দিতে গেলে বাংলাদেশই বরং অহেতুক এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর রোষানলে পড়বে। বাংলাদেশে যে ইসলামী জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর তত্পরতা লক্ষ্য করা যায়, তারা কোথা থেকে অস্ত্র ও অর্থ পায়—তা আজ পর্যন্ত আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জনগণের কাছে স্পষ্ট করেনি। অনেকেরই ধারণা, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এদের মদত দিচ্ছে। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাতে বাংলাদেশ বাধ্য হয় ভারতকে তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে। সাধারণ মানুষ দারুণ এক বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি যেভাবে বিভাজিত, তাতে মনে হয় না অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জনগণের কাছে সত্য উন্মোচিত করা হবে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বিনিময় চুক্তির আশু সুবিধাভোগী আসলে ভারত। উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়ে দণ্ডভোগ করার পর এখনও কারাগারে আছে। এই চুক্তি হলে তাকে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অনুপ চেটিয়ার মতো উচ্চপর্যায়ের কোনো বাংলাদেশী বন্দি ভারতে রয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে তালিকাভুক্ত কিছু অপরাধী ভারতে বসবাস করছে বলে মিডিয়া রিপোর্ট থেকে জানা যায়। এদেরও ভারত বাংলাদেশে নাশকতামূলক কাজে ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফৌজদারি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তা চুক্তি হলে এ ধরনের অপরাধী ব্যক্তিদের ব্যাপারে একটি ফয়সালা হতে পারে। তবে ভারতের ট্র্যাক রেকর্ড যা তা থেকে মনে হয় না এই চুক্তি করেও বাংলাদেশ বাস্তব কোনো সুবিধা পাবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির ফলে বাংলাদেশ অতিদ্রুত সংবিধান সংশোধন করে বেরুবাড়ি (আড়াইবর্গ কিলোমিটার জায়গা) ভারতের কাছে হস্তান্তর করলেও বিনিময়ে তিনবিঘা করিডোর আজও পায়নি। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে মিডিয়াতে আশাবাদ সৃষ্টি করা হলেও সে ব্যাপারে কোনো চুক্তি হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে টিপাইমুখ বাঁধ, ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নদী খনন, দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয় আলোচ্যসূচিতে স্থান পাবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বাধা নিয়েও আলোচনা হবে। বাংলাদেশের জন্য যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো নিয়ে শুধু আলোচনাই হবে, কোনো চুক্তি হবে না। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর এক বছর কেটে গেছে। এই এক বছরেও বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর মতো অবস্থা তৈরি হলো না—সেটা এক অবাক বিস্ময়ের ব্যাপার। এর জন্য কোন পক্ষের অদক্ষতা ও অনাগ্রহ দায়ী তা প্রমাণাদিসহ বলা মুশকিল। তবে ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব সম্পর্কে এ দেশের সাধারণ মানুষের মনে যে সন্দেহ দানা বেঁধে আছে, তার ওপর ভিত্তি করে জনগণ ভারতকেই দায়ী করবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিরোধী আমরা নই। কারণ কূটনীতিতে অব্যাহতভাবে নানা পর্যায়ে সংযোগ চালিয়ে যেতে হয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এটুকুই আশা করবে যে, তিনি ভারতবান্ধব আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের স্বার্থ তিনি সংরক্ষণ করবেন—এই প্রত্যাশা বাংলাদেশের মানুষ সঙ্গতভাবেই করতে পারে। তিনি যদি আন্তরিকভাবে সেই পথই বেছে নেন তাহলে তার প্রতি বাংলাদেশের জনগণের থাকবে অকুণ্ঠ সমর্থন।
লেখক : অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.