পুলিশের ‘তত্ত্বাবধানে’ মিলন হত্যা-মামলায় পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হয়নি by মাহবুবুর রহমান,

বিদায়ী বছরে কিশোর সামছুদ্দীন মিলনকে (১৬) পুলিশের ‘তত্ত্বাবধানে’ পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ছিল নোয়াখালীসহ সারা দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। কিন্তু ওই পৈশাচিকতায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের আজও সম্পৃক্ত করা হয়নি মিলনের মায়ের দায়ের করা মামলায়। শুধু তা-ই নয়, মামলায় ওই পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে অনুমতি চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো ফাইলের অনুমোদন গত চার মাসেও মেলেনি। একইভাবে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা


বিভাগীয় মামলার তদন্তও অসমাপ্ত রয়েছে। এ অবস্থায় হত্যার সুষুম বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে মিলনের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বিল্লাল হোসেন শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিওচিত্র দেখে এ পর্যন্ত সাতজনকে মিলন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ সদস্যদের মামলায় সম্পৃক্ত করার বিষয়ে ওসি বিল্লাল বলেন, ঘটনার ভিডিওচিত্র পর্যবেক্ষণ এবং তদন্তে ঘটনার সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট। কিন্তু তাঁদের এই মামলায় আসামি করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। পুলিশ সদর দপ্তরে এ-সংক্রান্ত ফাইল পাঠানো হয়েছে। এখনো জবাব পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এরই মধ্যে মিলনের মা কোহিনূর বেগম ও চরকাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু নাছেরের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। একই সঙ্গে আসামিদেরও জেরা করা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করা হবে।
মিলনের মা কোহিনূর বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর নিরপরাধ ছেলেকে যে পুলিশ সদস্যরা টেকেরহাট বাজারে জনতার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন এবং যারা মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের অনেকে ধরা পড়েনি। আবার, মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। হাইকোর্ট থেকে তারা জামিন নিয়ে এসেছে বলে তিনি শুনেছেন।
কোহিনূর বেগম বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মিলন হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তাকে তিনি বলেছেন, পুলিশ মিলনকে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে জনতার হাতে তুলে দেয় বলে স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য এবং ভিডিওচিত্রেও তথ্য পাওয়া গেছে। তাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরকাঁকড়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মিলন হত্যার ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা যে জড়িত ছিলেন, তা দিনের আলোর মতো সত্য। কিন্তু মিলনের মায়ের দায়ের করা মামলায় এত দিনেও ওই পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এতে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের টেকেরহাট মোড়ে গত ২৭ জুলাই সকালে কিশোর মিলনকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে ডাকাত সাজিয়ে কিছু লোকের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর স্থানীয় লোকজন মিলনকে পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে চরকাঁকড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে জনতা ডাকাত সন্দেহে আরও পাঁচজনকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ধারণ করা মুঠোফোনের ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ফাঁস হয়।

No comments

Powered by Blogger.