ডলারের দর বাড়ায় রড সিমেন্টের দাম বাড়ল by একরামুল হক

সিমেন্ট ও রডের দাম বাড়ছে। ৫০ কেজির এক বস্তা সিমেন্টের দাম এক দফায়ই বেড়েছে ২০ টাকা। একইভাবে রডের পাইকারি দাম প্রতি টনে কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেড়েছে। গত শুক্রবার থেকে সিমেন্টের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। অন্যদিকে সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই ধাপে ধাপে রডের দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার কারণে এলাকাভেদে ও কোম্পানির গুণগত মান অনুযায়ী এক বস্তা সিমেন্টের দাম সর্বনিম্ন ৩৪০ এবং সর্বোচ্চ ৪৪০ টাকা হয়েছে।
রডের দাম সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা বেড়েছে। গুণগত মান ও পরিবহন খরচের হেরফেরের কারণে সিমেন্ট ও রডের দামেও তারতম্য ঘটে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং চলতি বছরে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে রড ও সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে মিলমালিকেরা দাবি করেন।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক খালিক পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো ব্যবসা করতে এসেছি। এতে লাভ ও লোকসান দুটিই থাকে। সাম্প্রতিক কালে লোকসানের অঙ্ক বেড়ে যাচ্ছিল। আমরা মূল্য সমম্বয় করে লোকসানের অঙ্ক কমিয়েছি। কয়েক দিন পর আবার দাম বাড়ানো হবে।’
সিমেন্ট কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরে দেশে চাহিদা প্রায় দেড় কোটি টন, যা ৩৪টি কারখানায় উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় ৬৫টির মতো কারখানা আছে। যদিও সবগুলোর উৎপাদনক্ষমতা দুই কোটি ৩০ লাখ টন। চাহিদা ও উৎপাদনের সঙ্গে সমম্বয় না করে ১৫-২০ বছর আগে হুজুগে অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি সিমেন্ট কারখানা স্থাপন করেছিলেন। এ কারণে ৩০টির মতো বন্ধ আছে।
কনফিডেন্স সিমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জহিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সিমেন্ট উৎপাদনের শতভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ডলারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা উৎপাদন খরচ নির্ণয় করি। এ কারণে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’
জহিরউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, গত ১০-১২ বছরের মধ্যে সিমেন্টের দাম এক লাফে ২০ টাকা বাড়ানোর কোনো নজির নেই। এবার তা ঘটেছে। কয়েক দিনের মধ্যে আরও ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়ানো হবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা গত বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কয়েক দিন পর তাঁরা আবার বৈঠকে বসতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে সমিতির কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে স্টিল রি-রোলিং মিল কারখানার মালিকেরা সপ্তাহ দুয়েক আগে রডের দাম ধাপে ধাপে বাড়াতে থাকেন। এর সঙ্গে বিলেট (খনি থেকে উত্তোলিত আকরিক লোহা সরাসরি প্রক্রিয়া করে বিলেট তৈরি হয়) থেকে উৎপাদিত রডের দাম সাড়ে ছয় হাজার টাকা এবং জাহাজভাঙা শিল্পকারখানায় উৎপাদিত রডের দাম সাত হাজার টাকা বেড়ে যায়।
বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অস্বাভাবিক অবমূল্যায়নের কারণে আমরা প্রতি টনে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা করে দাম বাড়িয়েছি।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নগরে গতকাল মঙ্গলবার বিলেট থেকে তৈরি রড ৬৮ হাজার টাকা এবং জাহাজভাঙা শিল্পের রড ৫৭ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এর দাম যথাক্রমে সাড়ে ৬০ হাজার ও ৫০ হাজার টাকা ছিল।
রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সূত্র জানায়, দেশে বছরে ৪০ লাখ টন রডের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে বিলেট থেকে ১২-১৩ লাখ টন এবং বাকি ২৭-২৮ লাখ টন জাহাজভাঙা শিল্পকারখানা থেকে আসে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিলেট থেকে রড উৎপাদনের কারখানার সংখ্যা ২৪-২৫টি।

No comments

Powered by Blogger.