থানায় সেবা কমে গেছে-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা

থানাগুলোয় জনগণের সেবার মান কমে গেছে। সাধারণ মানুষ প্রতিকার পাচ্ছে না, ভালো ব্যবহার পাচ্ছে না। যানবাহন চেকিং ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্টের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের কাজের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। মন্ত্রণালয় তার ৯ ভাগ সময়ের এক ভাগও পুলিশের জন্য ব্যয় করে না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে


আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সঙ্গে সেতুবন্ধনের দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা এসব ক্ষোভের কথা বলেন। টেলিকম মিলনায়তনে এসব কথা বলতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন তিনি তার এক সহকর্মীর। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
এ বক্তব্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদমর্যাদা) বেনজীর আহমেদ প্রায় দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, 'আমি এর জবাব দিতে চাই।' তবে প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু তাকে থামিয়ে দেন।
ক্ষণিকের জন্য বক্তব্য থামিয়ে দেওয়া ফণীভূষণ তখন বলেন, 'আমার বক্তব্য শেষ করি। তারপর বলেন।'
ফণীভূষণের পর পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার তার আসনে বসেই পুলিশ বিভাগের উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ফণীভূষণ বলেন, 'আত্মজিজ্ঞাসা আমাদের করতে হবে। আমাদের অনেক তরুণ অফিসার রয়েছেন। এই তরুণ প্রজন্ম অনেক ভালো কাজ করছে।'
এরপর বক্তব্যে শামসুল হক টুকু পুলিশ সমন্বয়ক ফণীভূষণের কথা কিছুটা স্বীকার করে বলেন, 'পুলিশের দায়িত্ব পালনে কিছু ব্যর্থতা রয়েছে। ফণীবাবু যা বললেন, কিছুটা বাড়িয়ে বললেও আসলে তার অস্তিত্ব রয়েছে।' এসব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার পরামর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী।
মন্ত্রণালয়ে পুলিশের ফাইল আটকে থাকা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'পুলিশের দাবি-দাওয়া ও সংস্কারের বিষয়গুলো ফাইলবন্দি হয়ে নেই, এগুলো নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় এগুলো নিয়ে পড়ালেখা করছে।' তার এই কথার সময় পুরো সম্মেলনস্থলে কিছুটা হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যে র‌্যাব ও পুলিশের কাজে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি ফের উঠে আসে। এ পর্যায়ে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা র‌্যাবের ইউনিটকে স্থানীয় পুলিশ সুপারের অধীনে দেওয়ার কথাও বলেন। তবে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে বলেন, এতে সমন্বয় থাকবে না।
এ ছাড়া যানবাহন সংকট, পুলিশের কাজের সমস্যা, রাজনৈতিক প্রভাবের চেষ্টার অভিযোগও করেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
পুলিশ সপ্তাহ-২০১২ উদ্বোধনের পর পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকারের সভাপতিত্বে মতবিনিময়ের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ সমন্বয়ক (অতিরিক্ত আইজিপি) ফণীভূষণ চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজিপি শহীদুল হকসহ সব অতিরিক্ত আইজিপি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি এবং পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আইজিপি সমমর্যাদার পুলিশ সমন্বয়ক ফণীভূষণ চৌধুরী বলেন, থানাগুলোয় জনগণের সেবার মান হ্রাস এবং মামলা নিতে না চাওয়ার অভিযোগ অহরহই উঠছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্টের মাধ্যমে তল্লাশির নামে অনেক ক্ষেত্রে হয়রানি, পুলিশে দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে। দায়িত্বে অবহেলার যে অভিযোগ উঠেছে, তা অমূলক নয়। এ ব্যাপারে সবাইকে আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
পুলিশে দুর্নীতি নিয়ে এরপর ফণীভূষণ বলেন, 'পুলিশের মধ্যে দুর্নীতি বাড়ছে। ক্ষমতার নানা রকম অপব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। এতে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে কি-না, সে বিষয়গুলো আলোচনার সময় এসেছে।'
সূত্র জানায়, বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের কাজের প্রতি উদাসীন। মন্ত্রণালয় বরাদ্দ অর্থের ৯ ভাগের এক ভাগও পুলিশের জন্য ব্যয় করতে চায় না। ফলে পুলিশের কার্যকলাপে গতি আসছে না। তিনি একজন পুলিশ মহাপরির্দশককে দায়িত্ব দিয়ে পুলিশের জন্য আলাদা ডিভিশন গঠনেরও প্রস্তাব দেন।
ডিএমপির জয়েন্ট কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরেশী ডিএমপিতে চারটি পুলিশ লাইনের প্রস্তাব করে বলেন, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাকে ধারণক্ষমতা ৪ হাজার। সেখানে বর্তমানে ১১ হাজার পুলিশ সদস্য বাস করছেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.