সমাধান নেই আফগান সংকটের?

ফগান সংকট নিয়ে একের পর এক সম্মেলন, বৈঠক চলছেই। এ ইস্যুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। বন সম্মেলনেও আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা, তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা হয়ে গেল। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। তবে আশার কথা হলো, তালেবান জঙ্গিরা বলেছে, তারা কাতারে একটি দলীয় কার্যালয় খুলতে চায়।


আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও এতে সমর্থন দিয়েছেন। ওই কার্যালয় থেকে পশ্চিমা ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া চলবে বলে জানা গেছে।
মার্কিন প্রশাসনে বিভক্তি, ইরানকে বয়কট করা, পাকিস্তানের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক—এসব কারণে আফগানিস্তান ইস্যুতে আলোচনায় কোনো সমাধান আসেনি। ইস্তাম্বুলে গত ২ নভেম্বর আঞ্চলিক সম্মেলন হয়। সেখানে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোয় হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে প্রতিবেশী দেশগুলো সম্মত হয়। কিন্তু ইস্তাম্বুলের আঞ্চলিক সম্মেলনেও কোনো সুফল আসেনি। এর অন্যতম কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অভ্যন্তরীণ অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর কেউই জানত না, যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তানের কৌশলগত চুক্তিতে কী আছে। ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে কী পরিমাণ মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের ঘাঁটি প্রত্যাহার করা হবে—এ সম্পর্কে কিছুই জানত না তারা। এ কারণে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কোনো ফলাফল আসেনি ওই সম্মেলনে।
গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ইসলামাবাদ সফর করেন। সে সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান জঙ্গিদের মধ্যে একটি আলোচনার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শঙ্কার কারণে তা ভেস্তে যায়। তালেবান নেতারা পাকিস্তানে ১১ বছর ধরে বসবাস করছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ভয় ছিল যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই) যতটা চাইবে, ততটাই আলোচনা হবে জঙ্গিদের সঙ্গে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে তালেবান জঙ্গি, আফগান সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র কেউ-ই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি। এ কারণে এটিও ভেস্তে যায়।
আসলে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো জানতে চেয়েছিল, দেশটি থেকে কতগুলো মার্কিন সেনাদের ঘাঁটি প্রত্যাহার করা হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর আরও দাবি ছিল তালেবান নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া যে কবে তাঁরা পাকিস্তান থেকে সরে যাবে।
যাহোক জার্মানির মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে আলোচনা শুরুর আভাস পাওয়া গেছে। আফগান সরকারের মধ্যস্থতাকারী বিভাগের প্রধান বোরহানউদ্দিন রাব্বানির ওপর হামলার পর এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান নেতাদের মধ্যে আলোচনাটি এখনো বিশ্বাস স্থাপনের পর্যায়ে আছে। এজন্য জনগণ ও তালেবানদের মধ্যে সমঝোতা দরকার। কিন্তু বন সম্মেলনের আগে সে উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। ফলে ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বন সম্মেলনও ভেস্তে যায়। এবার দেখা যাক, কাতারে তালেবানদের কার্যালয় স্থাপিত হলে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা বা অগ্রগতি হয় কি না। বিবিসি অবলম্বনে।

No comments

Powered by Blogger.