উইইই রেমিটেন্স প্রবাহে রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে রেমিটেন্স প্রবাহে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বিদায়ী বছর ডিসেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১১৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। এর আগে একক কোন মাসে এ পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে আসেনি। অবশ্য গত বছরের আগস্ট মাসে ১১০ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল; যা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা   পৃষ্ঠা ৫ কলাম ৫
জানিয়েছেন, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা দেশে পরিমাণে বেশি রেমিটেন্স পাঠানোয় এ রেকর্ড হয়েছে। তাদের মতে, অনেক প্রবাসী হয়তো বিদেশে আয় করা অর্থ জমিয়েছিলেন। বর্তমানে ডলারের দাম খুব বেশি বাড়ায় তারা তাদের জমানো অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। ফলে রেমিটেন্স বেশি আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।
রেমিটেন্স বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এটা তারই প্রতিফলন। আমরা চাই ১০০ ভাগ রেমিটেন্সই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসুক। আর সে লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। আর রেকর্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা হলো বিদায়ী বছরের এবং স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স। এ ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার ব্যাংকগুলো প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ৮২ টাকায়। গত এক বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। শুধু ডিসেম্বর মাসেই ডলারের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকার মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৬০৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫৫০ কোটি ডলার। শতকরা হিসেবে এ সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১ শতাংশের সামান্য বেশি। তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১০১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে আসে। আগস্ট মাসে আসে ১১০ কোটি ১৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ৮৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। অক্টোবর ও নভেম্বরে এসেছে যথাক্রমে ১০৩ কোটি ৯৪ লাখ ও ৯০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। সাধারণত দুই ঈদের আগে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়ে থাকে। কিন্তু সে ধরনের কোন উৎসব না থাকার পরও ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে। এদিকে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কিছুটা বেড়েছে। সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৯৬৪ কোটি (৯ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন) ডলার। ১৫ দিন আগেও এই রিজার্ভ ৯২০ কোটি ডলারের নেমে এসেছিল।
রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের গবেষক জায়েদ বখত বলেন, যে মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে সঙ্কট চলছে, তখন এটা একটা খুবই ইতিবাচক সূচনা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে লেনদেনের ভারসাম্যে যে অচল অবস্থা চলছে, তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতে বিদেশে সব দূতাবাসকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যে কোন সমস্যা হলে প্রবাসীদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের (কৃষি ও বেসিক ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ৫ লাখ ডলার। ৩০ বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮১ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। আর নয়টি বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

No comments

Powered by Blogger.