বঙ্গোপসাগরে অবৈধভাবে মাছ ধরছে ৬০ হাজার মেকানাইজড বোট

আশরাফ খান: বঙ্গোপসাগর থেকে প্রতিদিন ৬০ হাজার মেকানাইজড বোট অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ করছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন এই অবৈধ তৎপরতা বন্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মৎস্য আহরণকারী রেজিস্টার মেকানাইজড বোট রয়েছে ১৬ হাজার। অথচ ৭০ থেকে ৭৫    পৃষ্ঠা ২০ কলাম ৪
হাজার মেকানাইজড বোট অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ করায় সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এইসব অ-রেজিস্ট্রি করা মেকানাইজড বোটের পাশাপাশি লাইসেন্স করা বোটও মৎস্য করপোরেশনের নির্মাণ করা মৎস্য আহরণ কেন্দ্রে মাছ অবতরণ করে না। এর উদ্দেশ্য রাজস্ব ফাঁকি দেয়া। চট্টগ্রামের মৎস্য বন্দর, মনোহরখালী মৎস্য অবতরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ কেন্দ্র, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, বরগুনার পাথরঘাটা কেন্দ্র, বরিশাল মৎস্য কেন্দ্রে এই অবৈধ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলে আসছে। এর সঙ্গে জড়িত করপোরেশনের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, ব্যক্তি মৎস্য করপোরেশনের নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে অবতরণ করেন না তাদের লাইসেন্স বাতিল এবং জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর হয় না। মৎস্যজীবীদের মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও মৎস্য করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা সম্ভব হচ্ছে না। এদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হলেও কর্তৃপক্ষ সে তাগিদ বোধ করছে না। অবশ্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত মানবজমিনকে বলেন, সব ধরনের অসাধু ব্যবসা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোস্টগার্ডকে অনেক বেশি সক্রিয় করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনকে প্রখর দৃষ্টি রাখা ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গভীর সমুদ্র থেকে স্টিল বডি ট্রলার দিয়ে আহরিত মাছ কর্ণফুলী নদীতে চোরাই পথে অবতরণ করা হয়। ৬০ হাজার মেকানাইজড বোট এই অবৈধ কাজে জড়িত। বিষয়টি মৎস্য করপোরেশনের চট্টগ্রামের স্থানীয় কর্মকর্তাদের অবগতিতে থাকা সত্ত্বেও তারা এর কোন ব্যবস্থা নেন নি। এমনকি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়কে জানাননি। চট্টগ্রামের মনোহরখালী কেন্দ্রে অবৈধ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সরকারদলীয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। কিন্তু তারা সহযোগিতার হাত বাড়ান নি। এই কেন্দ্রে যাতে একসঙ্গে ১ শ’ ট্রলার, নৌকা নোঙর করতে পারে সে জন্য পন্টুন/জেটি সমপ্রসারণ করা দরকার। কর্তৃপক্ষ সে ব্যবস্থাও করছে না। এ ব্যবস্থা করার পরই বাধ্যতামূলক লাইসেন্স নেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সড়কের মৎস্য অবতরণ ও পাইকারি মৎস্য বাজার কেন্দ্রের জেটি/পন্টুনটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা জরুরি। কেন্দ্রের সম্মুখভাগের অংশে নদী ভরাট হয়ে গেছে। জরুরিভাবে ড্রেজিং দরকার। অবতরণ কেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানে অবৈধ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এখান থেকে প্রাপ্য অর্থও সঠিকভাবে আদায় করা হচ্ছে না।
অপরদিকে মংলার দিগরাজ মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। প্রয়োজনীয় জনবল নেই। বকেয়া পাওনা আদায়ের কোন ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না।
খুলনা মৎস্য অবতরণ ও পাইকারি মৎস্য বাজার কেন্দ্রে মৎস্য ব্যবসায়ীদের স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদা দিতে হয়। স্থানীয় প্রশাসনের অবগতিতে রয়েছে বিষয়টি। কিন্তু প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সরকারিভাবে লাইসেন্সপ্রাপ্তরা করপোরেশনের নির্মিত ৫ নং স্পিডঘাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ আসে না। বেশির ভাগ মৎস্যজীবী লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছেন। বন বিভাগের কর্মচারীরা তাদের হয়রানি করে থাকে। এখানে কোস্টগার্ডের চেকপোস্ট বসানো জরুরি।
বরগুনার পাথরঘাটা এলাকায় জেলেদের ও মৎস্য ট্রলার মালিকরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় কাজ করেন। সার্বিক তদারকের জন্য কোস্টগার্ডের স্থায়ী অবতরণের ব্যবস্থা করা দরকার। মৎস্য ব্যবসায়ীদের টাকা-পয়সা লেনদেনের জন্য এখানে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয় রাস্তাঘাট সংস্কারও জরুরি। কিন্তু সাগরপাড়ের অবহেলিত মৎস্যজীবীদের সমস্যাগুলো সুরাহার ব্যবস্থা হয়নি কয়েক বছরেও। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা, পাথরঘাটাসহ সবগুলো মৎস্য আহরণ ও পাইকারি বিপণন কেন্দ্রের সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ ও দেশের অর্থনীতির উন্নতির লক্ষ্যেই যথাযথ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.