জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রলীগের দুই দফা হামলায় আহত ১৫

ন্নয়ন ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনরত প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীদের ওপর দুই দফা হামলা চালিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হামলায় জোটের ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন ফি পাঁচ হাজার টাকা বাতিলের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টায় ক্যাম্পাসের অগ্রণী ব্যাংক শাখা অবরোধ করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ব্যাংকে


টাকা জমা দিতে বাধা দেন এবং একপর্যায়ে ব্যাংকে যাওয়ার ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর কামালউদ্দীন আহমেদ পুলিশের সহায়তায় তালা ভাঙলেও অবরোধ চলতে থাকে। পুলিশও আরেক দফা চেষ্টা করে আন্দোলনকারীদের থামাতে ব্যর্থ হয়।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তৌফিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন, ওবায়দুল ইসলাম ও মো. ইয়াছিনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক কর্মী প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান। ছাত্রলীগের কর্মীরা জোটের কয়েকজন নেতাকে মারধর এবং দুই নারী নেত্রীকে লাঞ্ছিত করেন। ঘটনাস্থলের কয়েক হাত দূরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক শরিফুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম, মিশু, আজাদ, মোরশেদ, তানিয়া, তিথি, হাবিবা ও আশা আহত হন।
পরে উন্নয়ন ফি বাতিল ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন জোটের নেতা-কর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পরই আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আবারও তাঁদের ওপর হামলা করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় আরও তিন-চারজন নেতা-কর্মী আহত হন।
হামলার কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, জোটের নেতা-কর্মীদের মারধরের সময় ছাত্রলীগের একজন কর্মী না বুঝে নিজেদের আরেক কর্মীর গায়ে হাত তোলেন। এ কারণেই নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রজোটের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাবি আদায়ে সকাল থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করি। কিন্তু কোনো ধরনের সমাধান না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রক্টরের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে আমাদের পেছনে লেলিয়ে দেয়।’ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলেও জানান তিনি।
তবে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের নেতারা হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন। প্রক্টর কামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসন ছাত্রলীগকে কোনো কিছু করতে বলেনি। এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য মেসবাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কথা বলেননি।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছেন নেতা-কর্মীরা। হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
প্রশাসনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: উন্নয়ন ফি কমানোর দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল সন্ধ্যায় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে ভর্তি-প্রক্রিয়ায় বাধাদানের ঘটনায় প্রশাসনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গণসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ৮ জানুয়ারি উপাচার্যের নেতৃত্বে ট্রেজারার, প্রক্টর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালকের (ছাত্রকল্যাণ) সঙ্গে সব ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই আলোচনা করে উন্নয়ন ফি কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জোটের সংবাদ সম্মেলন: গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে উন্নয়ন ফি প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইরান।

No comments

Powered by Blogger.