হতাশ রোনালদোর ১০ কাহন

লিওনেল মেসির সঙ্গে লড়াইটা একটু হলেও জমে উঠছিল। ব্যক্তিগত না হোক, দলীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ একটা সুযোগ এসেছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সামনে। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের এ স্ট্রাইকার। এই ব্যর্থতাই এখন রোনালদোর ক্যারিয়ারের সব ব্যর্থতাকে টেনে এনেছে। এবারের স্প্যানিশ লীগে 'এল ক্ল্যাসিকো'তে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন এ পর্তুগিজ। গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন।


তেমনি ব্যর্থ হয়েছেন ফ্রি-কিক থেকে গোল করার সুযোগ কাজে লাগাতে। একাধিক ফ্রি-কিক প্রতিপক্ষের তৈরি মানবদেয়ালে মেরে নষ্ট করেছেন। অথচ এ ম্যাচে রোনালদো সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে বার্সেলোনার বিপক্ষে দল মূল্যবান এক জয় তুলে নিতে পারত। শুধু তা-ই নয়, শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাও অনেকটা বাড়াতে পারত রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু এই ম্যাচের হার রিয়ালকে পয়েন্টে না হলেও মানসিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে এ জয় বার্সেলোনাকে শিরোপা লড়াইয়ে ভালোভাবে ফিরিয়ে এনেছে। পয়েন্ট টেবিলে রিয়ালকে টপকে গেছে তারা। অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদ একটা ম্যাচ কম খেলেছে। লিখেছেন আতিক হাসান


পর্তুগাল ০-১ গ্রিস
২০০৪ সালের ইউরো ফাইনাল। রোনালদোর বয়স তখন মাত্র ১৯। কিন্তু এ বয়সেই রোনালদো আলোচনার শীর্ষে। আগের বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছিলেন এ পর্তুগিজ। ম্যানইউর ৭ নম্বর জার্সি গায়ে মাঠ মাতানো রোনালদোকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। নিজেদের মাঠের এ খেলায় রোনালদোকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছিল পর্তুগাল। কিন্তু ক্যারিয়ারের প্রথম সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়েছিল রোনালদোর।
পর্তুগাল ০-১ ফ্রান্স
২০০৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। কোয়ার্টার ফাইনালে রোনালদোর নাটকে ইংল্যান্ডের ওয়েন রুনি লাল কার্ডে পেয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। সে কারণে সেমিফাইনাল ম্যাচে ইংলিশ দর্শকরা তাকে দুয়োধ্বনি দিয়েছিল। এর প্রভাব যেন এ ম্যাচে পড়েছিল। একের পর ব্যর্থতা সঙ্গী হয়েছিল তার। সুযোগ পেয়ে যেমন কাজে লাগাতে পারেননি, তেমনি তার পাসগুলোও লক্ষ্যে পেঁৗছাতে পারেনি।
এসি মিলান ৩-০ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ। ম্যানইউ এবং রোনালদো তখন দুর্দান্ত ফর্মে। কোয়ার্টার ফাইনালে রোমার বিপক্ষে ৭ গোল করে ম্যানইউ। ২টি ছিল রোনালদোর। সেই ধারা কিছুটা হলেও সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ধরে রেখেছিল ম্যানইউ। ৩-২ গোলে জয় পেয়েছিল তারা। কিন্তু ফিরতি লেগে এসি মিলান তাদের হতবাক করে দেয়। নিজেদের মাঠে ম্যানইউকে একেবারে বিধ্বস্ত করে ছাড়ে। ৩-০ গোলে জয় পায় এসি মিলান।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ০-১ চেলসি
এসি মিলানের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে বিদায় নেওয়ার মাত্র ১৭ দিন পর রোনালদো এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সামনে সেই ব্যর্থতা মুছে ফেলার সুযোগ আসে। সুযোগ আসে এফএ কাপ জয়ের। কিন্তু আবারও ব্যর্থ হলেন রোনালদো। সেই সঙ্গে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও। ফাইনালে চেলসির কাছে হেরে যায় ম্যানইউ।
বার্সেলোনা ০-০ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
২০০৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচ। এ ম্যাচের আগে বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়ার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল রোনালদোর। গোল করার অভিজ্ঞতাও ছিল। সেই অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ ছিল এ পর্তুগিজের সামনে। কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হলেন রোনালদো। সেই থেকেই বার্সেলোনার বিপক্ষে রোনালদোর গোলখরা শুরু, যা তিন বছর অব্যাহত ছিল।
পর্তুগাল ২-৩ জার্মানি
২০০৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। দুর্দান্ত ফর্মে রোনালদো। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লীগ শিরোপা ও চ্যাম্পিয়ন লীগ শিরোপা জয়ে অনন্য ভূমিকা ছিল রোনালদোর। ক্লাব ফুটবলে শিরোপা জয়ের দারুণ সব অভিজ্ঞতা থাকলেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন। জার্মানির কাছে হেরে যায় তার দল।
বার্সেলোনা ২-০ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল ম্যাচ। রোনালদো তখন বর্ষসেরা খেলোয়াড়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে এটি ছিল তার শেষ ম্যাচ। শুধু তা-ই নয়, পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনার বিপক্ষে তার প্রথম পরীক্ষা। কিন্তু এ পরীক্ষায় পাস করতে ব্যর্থ হন রোনালদো। গার্দিওলা তখন বার্সেলোনাকে নতুন কৌশলে অভ্যস্ত করে তুলছেন। ছোট ছোট পাসে বল নিয়ন্ত্রণের কৌশলে রোনালদোর ব্যক্তিগত সব জারিজুরি ব্যর্থ হয়ে যায়।
স্পেন ১-০ পর্তুগাল
এবার ক্লাব ফুটবলে নয়, জাতীয় দলের হয়ে ব্যর্থ রোনালদো। ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াই। স্পেনের বিপক্ষে পর্তুগালের লড়াই। রিয়াল মাদ্রিদে পুরো একটা মৌসুম খেললেন। বিশ্বকাপে মেগাস্টার হিসেবে মিশন শুরু করলেন। কিন্তু গ্রুপ পর্বে তার পারফরম্যান্স ছিল সাধারণ মানের। বিশ্বকাপ সাধারণ তারকাদের জন্য নয়। তাই তো শেষ ষোলোতে শেষ হয়ে গেল মেগাতারকা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকা রোনালদোর।
রিয়াল মাদ্রিদ ০-২ বার্সেলোনা
২০১১ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচ। আরেকটি এল ক্ল্যাসিকো। আরও একবার রোনালদোর ব্যর্থতা। মাত্র কয়েক দিন আগে কোপা ডেল রেতে গোল করে দলকে শিরোপা এনে দিয়েছেন। কিন্তু বড় টুর্নামেন্টে এসে আবার ব্যর্থ হলেন। বড় টুর্নামেন্টে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে ব্যর্থ হলেন সাবেক এই বর্ষসেরা খেলোয়াড়। আবার ঢাকা পড়লেন মেসির ছায়ায়। এ ম্যাচে হেরে রোনালদো কোচের কৌশলের সমালোচনা করেন। কোচের রক্ষণাত্মক খেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
রিয়াল মাদ্রিদ ১-৩ বার্সেলোনা
এল ক্ল্যাসিকোর সর্বশেষ ম্যাচ এটি। স্প্যানিশ লীগের লড়াই। সতীর্থদের ব্যর্থতার অজুহাত দিতে পারেন রোনালদো। সেই সঙ্গে দিতে পারেন কোচের ভুল কৌশলের অজুহাত।
কিন্তু দলকে জয় এনে দেওয়ার জন্য যা কিছু প্রয়োজন ছিল তার সবই তাকে দেওয়া হয়েছিল। দুটি দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটি সুযোগেরও সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। একাধিকবার বার্সেলোনার রক্ষণভাগের বাধা পার হওয়ার মতো পথ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু রোনালদো কিছুই করতে পারেননি। ব্যর্থ ছিলেন ফ্রি-কিকেও।

No comments

Powered by Blogger.