বাংলাদেশের শ্রমমান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শুনানি জানুয়ারিতে by আবুল কাশেম

বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারের মান নিয়ে আগামী জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে শুনানি হবে। শুনানিতে শ্রমের মান ও শ্রমিকের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিণত ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অনুকূলে না এলে দেশটির বাজারে জিএসপি সুবিধা হারাবে ঢাকা। পোশাক শিল্পে শিশু শ্রমিক রয়েছে কি-না, তা জানার জন্য জরিপ পরিচালনা করতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম


বিভাগ একটি বিদেশি সংস্থাকে নিয়োগ করেছে। ইউএসটিআরের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গেলে তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হিমায়িত মৎস্যসহ ব্যাংক, বীমা ও নৌ পরিবহন খাতেও। তাই ওই শুনানি মোকাবিলার কৌশল খুঁজছে সরকার। বাংলাদেশের শ্রমিকদের সাম্প্রতিক জীবন মানের উন্নতির চিত্র তুলে ধরে জিএসপি সুবিধা ধরে রাখতে তৎপরতা চালাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ শ্রমের মানের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের মজুরিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। বাংলাদেশ যে শিশুশ্রম মুক্ত, তা আজ স্বীকৃত। তা ছাড়া বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। তাই শুনানির সময় বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার ও শ্রমের মান নিয়ে ইউএসটিআর সন্তুষ্ট হবে বলে আমরা আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী শ্রমিক সংগঠন আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও)-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়ে ওয়াশিংটনে প্রথমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর। ২০০৯ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের শুনানির আগে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার-সংক্রান্ত বিদ্যমান অবস্থা এবং শ্রমিক অধিকার উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ইউএসটিআরের কাছে তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল উভয় শুনানিতে অংশ নেয়। দ্বিতীয় দফা শুনানির পর ইউএসটিআর বলেছিল, বাংলাদেশ আগের মতোই জিএসপি সুবিধা পেতে থাকবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, ২০০৭ সালে এএফএলসিআইওর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জিএসপি রিভিউ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০০৯ সালে এ সুবিধা এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এ সম্পর্কে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে তখন জানানো হয়, এ অর্জন ধরে রাখতে হলে তৈরি পোশাক ও হিমায়িত খাদ্য খাতে শ্রম অধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের দৃশ্যমান অবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।
তৈরি পোশাক খাতে কোনো শিশু শ্রমিক নেই বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে শিশুশ্রম পরিস্থিতি নিয়ে জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জরিপ পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শ্রম বিভাগের পক্ষ থেকে আইসিএফ মারকো নামে একটি সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে। আর আইসিএফ মারকো তাদের কাজের স্বার্থে স্থানীয় একটি সংস্থাকে দিয়ে জরিপ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
১৯৯০ সালেও এএফএল-সিআইও জিএসপি সুবিধার আওতায় বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিলের দাবি করে রিট পিটিশন করেছিল শ্রমিক অধিকার ইস্যু নিয়েই। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠনটি দেশের প্রতিটি তৈরি পোশাক কারখানায় স্কুল প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো, বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনসহ নানা সুপারিশ করেছিল। ওই সময় বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোসহ তাদের অধিকার নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়ায় ইউএসটিআর পিটিশনটি বাতিল করে দিয়েছিল।
আবদুস সালাম মুর্শেদী আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পায় না। কমপক্ষে ১৬ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না পোশাক শিল্প। তবে হিমায়িত মৎস্যসহ কয়েকটি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা ভোগ করছে। তা সত্ত্বেও ইউএসটিআরের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রতিকূলে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সব খাতের ওপরই। তিনি বলেন, চাইলেই একটি কারখানার ভেতরে স্কুল, সিনেমা হল নির্মাণ করা সম্ভব না। সরকারি সহায়তায় শ্রমিকদের এসব সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য পল্লী গড়ে তোলা দরকার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। বিপরীতে দেশটিতে প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এসব ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধার পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে ১৬ শতাংশের বেশি শুল্ক দিতে হয়। একই পণ্যের জন্য ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে শুল্ক নিচ্ছে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। এ হিসাবে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৫৫৪ মিলিয়ন ডলারের শুল্ক আদায় করেছে। কিন্তু দেশটি সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে মোট সহায়তা দিয়েছে ১৫১ মিলিয়ন ডলার।

No comments

Powered by Blogger.