পবিত্র কোরআনের আলো-সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় অনিবার্য-এটাই আল্লাহর বিধান

৮১. ওয়া মিম্মান খালাক্বনা উম্মাতান ইয়াহ্দূনা বিলহাক্কি ওয়া বিহী ইয়া'দিলূন। ১৮২. ওয়াল্লাযীনা কায্যাবূ বিআয়া-তিনা ছানাছতাদ্রিজুহুম মিন হাইছু লা-ইয়া'লামূন। ১৮৩. ওয়া উমলী লাহুম ইন্না কাইদী মাতীন।১৮৪. আওয়ালাম ইয়াতাফাক্কারূ মা বিসা-হিবিহিম্ মিন জিন্নাতিন ইন হুওয়া ইল্লা নাযীরুম্ মুবীন। ১৮৫. আওয়ালাম ইয়ানযুরূ ফী মালাকূতিচ্ছামাওয়া-তি ওয়ালআরদ্বি ওয়া মা খালাক্কাল্লা-হু মিন শাইয়িন ওয়া আন আ'ছা আন ইয়্যাকূনা


ক্বাদিক্ক্তারাবা আজালুহুম; ফাবিআয়্যি হাদীছিম্ বা'দাহূ ইউ'মিনূন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৮১-১৮৫]

অনুবাদ : ১৮১. আমি যাদের সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় আছে, যারা মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করে এবং নিজেরাও নিজেদের জীবনে ন্যায়নিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করে।
১৮২. আর যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আমি তাদের এমনভাবে ধাপে ধাপে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাব, যা তারা টেরও পাবে না।
১৮৩. আমি তাদের সুযোগ দিই, তবে নিশ্চিত জেনে রেখো, আমার গুপ্ত কৌশল বড়ই মজবুত।
১৮৪. তারা কি কখনো চিন্তা করে দেখে না, তাদের এই সাথি, অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ (সা.) মোটেও কোনো পাগল নন। তিনি তো মানুষের জন্য সুস্পষ্ট সতর্কবার্তা নিয়ে এসেছেন, আর কিছু নয়।
১৮৫. তারা কি ভেবে দেখে না, এই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর রাজত্ব কার নির্দেশে চলে এবং আল্লাহ তায়ালা এই যে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন, তা নির্দিষ্ট মেয়াদের পর বিলয় বা মৃত্যুমুখে পতিত হবে? সুতরাং এরপর আর কোন কথায় তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে?

ব্যাখ্যা : ১৮১ নম্বর আয়াতে এমন সব লোকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা সব সময় সত্য ও ন্যায়ের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানায় এবং নিজেরা সত্য ও ন্যায়ের পথে চলে। যুগে যুগেই এমন লোক পৃথিবীতে কিছু না কিছু ছিল এবং সব সময়ই কিছু না কিছু থাকবে। সমাজে যখন এ ধরনের মানুষের প্রাধান্য থাকে, তখন সমাজ হয় শান্তি, সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচারের, আর যখন সমাজে তারা নিগৃহীত অবস্থায় পড়ে যায়, তখন সমাজে নেমে আসে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা।
১৮২ ও ১৮৩ নম্বর আয়াত দুটিতে সেই সব লোকের জন্য বিপদ সংকেত দেওয়া হচ্ছে, যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে পাপাচারে লিপ্ত এবং তারা এ ধরনের নাফরমানি ক্রমেই করে যাচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হলো, আল্লাহ তায়ালা তাদের ঢিল দিয়ে রেখেছেন। এত সব নাফরমানির পরও আল্লাহ তাদের দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির মধ্যেই জীবন যাপন করতে দিচ্ছেন। অথচ তারা এ বিষয়ে একবার চিন্তা করেও দেখে না। এদের লক্ষ্য করেই এখানে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হচ্ছে যে তাদের ধাপে ধাপে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একসময় তাদের অবশ্যই পাকড়াও করা হবে, সেটা ইহকালেও হতে পারে। তবে পরকালে তাদের আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে_সেটা নিশ্চিত।
১৮৫ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল হিসেবে বিভিন্ন তাফসিরকার এ ঘটনার কথা বর্ণনা করেছেন যে রাসুল (সা.) সাফা পাহাড়ে উঠে মক্কার কোরাইশদের ইসলামের পথে আসার আহ্বান জানাচ্ছিলেন এবং তাদের বিপথগামিতার জন্য প্রাপ্য শাস্তির বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এ সময় অহংকারী কোরাইশদের কেউ কেউ সেখানে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর রাসুলকে 'পাগল' বলে গালি দিচ্ছিল। ঘটনার বিবরণ এ রকম : রাসুল (সা.) তাঁর স্বগোত্রের লোকদের আহ্বান করে বলছিলেন, হে কোরাইশরা! আমি মুহাম্মদ যদি বলি পাহাড়ের ওই পাশে আমাদের শত্রুরা লুকিয়ে আছে, তারা অবিলম্বে আমাদের ওপর আক্রমণ করবে, তবে তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, হ্যাঁ অবশ্যই বিশ্বাস করব, কারণ তুমি আমাদের গোত্রের লোক এবং তুমি ছোটকাল থেকে আল-আমিন বা বিশ্বস্ত। তখন রাসুল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের বিপথগামিতার কারণে আল্লাহ তোমাদের জন্য কঠোর শাস্তি রেখে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা ইসলামের পথে এসো। এতে কোরাইশরা বিরক্ত হয়ে তাঁকে পাগল বলে গালি দিয়েছিল। কোরাইশরা এ ধরনের গালি তাঁকে প্রায়ই দিত। এ আয়াতে তাদের চৈতন্য জাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.