প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি-সরকারের বৈরী আচরণই...

বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে কালাই উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জনতার মুখোমুখি হয়েছিলেন জয়পুরহাট-২ আসনের প্রধান দুই দলের সংসদ সদস্যপ্রার্থী বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা এবং আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সেখানে জনতার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দুই প্রার্থীই। সেখানে এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, প্রতিটি উপজেলা সদরে একটি করে সরকারি স্কুল


প্রতিষ্ঠা, বিদ্যুৎবিহীন গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ এলাকার উন্নয়নে সার্বিক ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর সেসব প্রতিশ্রুতি প্রতিশ্রুতিই থেকে গেছে।
ক্ষেতলালের মুন্দাইল গ্রামের সালাউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, 'ক্ষেতলালের প্রধান সড়কপথে সরাসরি বগুড়ার সঙ্গে বাস চলাচল শুরু করার কথা দিয়েছিলেন দুই প্রার্থীই। কিন্তু এখন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বলছেন, বিরোধী দলে থাকায় তাঁর কথা কেউ শুনছে না। আবার আওয়ামী লীগপ্রার্থী বলছেন, যেহেতু ক্ষেতলাল-কালাই-আক্কেলপুরের মানুষ তাঁকে নির্বাচিত করেনি, কাজেই এ ব্যাপারে তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তাদের এসব সমস্যা সম্পর্কে কথা বলবে কে?'
ক্ষেতলালের বেলগাড়ি গ্রামের আবদুল আলিম জানান, সংসদ নির্বাচনের আগে উন্নয়নের বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উভয় দলের প্রার্থী। কিন্তু নির্বাচনের পর গত তিন বছরে এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন চোখে পড়েনি।
আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক বাবলু জানান, ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এলজিইডি কর্তৃক প্রস্তাবিত 'দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনগ্রসর উপজেলাগুলোর গ্রামীণ সড়ক, সেতু-কালভার্ট এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন' শীর্ষক প্রকল্পের পুনর্গঠিত ডিপিপির পাঠানো চিঠিতে জয়পুরহাট জেলার কোনো নামই নেই। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, রাজশাহী, নবাবগঞ্জ এবং বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি ও শেরপুর উপজেলার কথা লেখা থাকলেও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে জয়পুরহাট জেলার নাম রাখা হয়নি। তিনি আরো জানান, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানানোর জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা জানান, জয়পুরহাট জেলার সংসদীয় দুটি আসনই বিএনপির দখলে থাকায় বর্তমান সরকার এলাকার মানুষের সঙ্গে যে বৈরী আচরণ করছে, এলজিইডির কাছে পাঠানো পরিকল্পনা বিভাগের ওই চিঠিই তার বড় প্রমাণ।
কালাই উপজেলার শাহরুল আলম জানান, এলাকার ১৫-২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় রয়েছে, যেগুলো এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য। কিন্তু বিগত তিন বছরে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। বাকিগুলোর কোনো খবর নেই।
সমন্তাহার গ্রামের রুমি চৌধুরী জানান, এই এলাকার এমপি সরকারি দলের না হওয়ায় নির্বাচনের পর থেকে এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে। রাস্তাঘাট নির্মাণের ব্যাপারে এমপিকে বার বার বলেও কোনো লাভ হয় না। তাঁর এক কথায় উত্তর_'সরকার বরাদ্দ না দিলে আমি কাজ করব কিভাবে'।

No comments

Powered by Blogger.