র ঙ বে র ঙ-উদ্ভট যত যুদ্ধ

যুদ্ধ মানেই হানাহানি, রক্তক্ষয়। এটি সব সময় অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। যুদ্ধ মানে অশান্তি হলেও এটি অনেক সময় সম্মান, যশ; এমনকি ভূমি রক্ষার জন্যও অত্যন্ত মর্যাদার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজ এমন কিছু যুদ্ধের বর্ণনা করছি, যা সংঘটিত হয়েছিল সন্দেহাতীতভাবে তুচ্ছ, এমনকি নিকৃষ্ট কারণে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সেসব উদ্ভট যুদ্ধের একটি হলো এমু ওয়ার। এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল কোনো বিবদমান দেশ বা জাতির বিরুদ্ধে নয়, এমু নামে


একটি নিরীহ প্রাণীর বিরুদ্ধে! অস্ট্রেলিয়ায় এমুর সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বাড়তে বাড়তে তা দাঁড়িয়েছিল কুড়ি হাজারে। এমুগুলো দৌড়াদৌড়ি করত কৃষকের ফসলি জমিতে। ফলে নষ্ট হয়ে যেত আবাদি শস্য। খাদ্য ঘাটতি হওয়ার ভয়ে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের দিকে অস্ট্রেলিয়ান সরকার এমু তাড়ানোর দায়িত্ব দেয় দেশটির সেনাবাহিনীকে। বাহিনীপ্রধান ভেবেছিলেন, এ আর এমন কী! গুলির শব্দ পেলেই প্রাণীটি দৌড়ে মরুভূমিতে আশ্রয় নেবে। তারা করলেনও তাই। কিন্তু এমুর তাতে কোনো বোধোদয় হলো বলে মনে হলো না। প্রাণীটি আরও বেশি করে কৃষকের জমিতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। আরও বেশি নষ্ট করে ফেলল আবাদি শস্য। হানা দিল সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত গাড়িতে, এমনকি তাঁবুতেও। ফলে বাধ্য হয়েই অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনী এমুর বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে! যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। যুদ্ধ চলেছিল মাত্র সাতদিন। আর এ স্বল্প সময়েই বধ হয় প্রায় পঁচিশশ' এমু। সীমান্ত পার হওয়া নিয়ে এল সালভাদর ও হন্ডুরাসের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল ফুটবল যুদ্ধ! হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের সীমানায় আগে কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। ফলে হন্ডুরাস থেকে অসংখ্য মানুষ ঢুকে পড়ত এল সালভাদরে। থাকত প্রায় স্থায়ীভাবে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের জুনে হন্ডুরাসের জনগণের অবাধে এল সালভাদরে ঢুকে পড়া বন্ধ করতে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী উঠেপড়ে লাগে। তারা হন্ডুরাসের কিছু মানুষকে আটক করে। এ নিয়ে শুরু হয় ফুটবল যুদ্ধ। চারদিন ধরে চলা এ যুদ্ধে নিহত হয়েছিল কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ। তিনশ' পঁয়ত্রিশ বছর ধরে যুদ্ধ চলেছিল গ্রেট ব্রিটেনের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস ও সিসিলির মধ্যে। এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে। শেষ হয়েছিল ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে। এত লম্বা সময় ধরে যুদ্ধ মানবেতিহাসে এই একবারই সংঘটিত হয়েছিল।
আমেরিকা ও ব্রিটেনের মধ্যে সংঘটিত একটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের নাম পিগ ওয়ার বা শূকর যুদ্ধ। ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীতে আগে থেকেই কুকুর, শূকর, বানরসহ নানা প্রজাতির প্রাণী অন্তর্ভুক্ত হতো। আমেরিকা-ব্রিটিশ যুদ্ধের এক পর্যায়ে একটি শূকর আমেরিকার মাটিতে ঢুকে পড়লে শুরু হয় এ যুদ্ধ। চলেছিল দীর্ঘ চার মাস!
একটি কাঠের বালতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৩২৫ থেকে ১৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বছর মোডেনা ও বোলোগনার মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল এক উদ্ভট যুদ্ধ, যে যুদ্ধটি 'দ্য ওয়ার অব দ্য ওকেন বাকেট' নামে পরিচিত।
শুধু শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য ফ্রান্সিকো সোলানো লোপাজ ও নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মধ্যেও সংঘটিত হয়েছিল যুদ্ধ। এ যুদ্ধটি ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধ বলে খ্যাত। নানা কারণে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, শুধু যুদ্ধের কারণে পার্শ্ববর্তী আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল আর প্যারাগুয়ের প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ মারা গিয়েছিল নানা রোগে।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে বুলগেরিয়া আর গ্রিসের মধ্যে মোটেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুলগেরিয়া আর গ্রিসের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাওয়া নিয়ে আছে এক মজার ঘটনা। 'দেখতে নারির চলন বাঁকা'র মতো ব্যাপার আর কি। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর গ্রিসের এক সৈনিককে কুকুর তাড়া করলে সে ঢুকে পড়ে বুলগেরিয়ার সীমান্তে। সঙ্গে সঙ্গে বুলগেরিয়ার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী গুলি করে তাকে মেরে ফেলে। এ নিয়ে বেধে যায় যুদ্ধ, যা ইতিহাসে 'দ্য ওয়ার অব দ্য স্ট্রে ডগ' নামে পরিচিত। দশদিন চলা এ যুদ্ধ মীমাংসিত হয় গ্রিসকে বুলগেরিয়ার দেওয়া পঁয়তালি্লশ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে!
ঋতা আলম

No comments

Powered by Blogger.