শুল্ক-কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিয়ে সংশয়-বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত বিভিন্ন দেশ

বিশ্ববাণিজ্যের বিশেষজ্ঞরা বহুপক্ষীয় বাজার ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য এখন গভীর সংকটে। অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধার বিষয়টিও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এসব দেশের জন্য আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বেঞ্চমার্ক ধরা হয়েছে। কিন্তু সেটি সম্ভব হবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র তার বাজার খুলছে না। এমতাবস্থায় এলডিসিগুলোকে নতুন করণীয়
ঠিক করতে হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডবি্লউটিও) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রেড অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (আইসিটিএসডি) আয়োজিত 'স্বল্পোন্নত দেশ ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা' শীর্ষক সেমিনারে এসব বক্তব্য উঠে এসেছে।
গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য দেন লেসোথোর বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ভিক্টর কেস্তো, বাংলাদেশের সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আঙ্কটাডের আফ্রিকা বিষয়ক কর্মকর্তা চার্লস গোর, জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেম ডি মেলো এবং বেসরকারি সংস্থা আইএলইএপি নির্বাহী পরিচালক ডেভিড প্রিম্যাক। আইসিটিএসডি কর্মসূচি পরিচালক ক্রিসটোফ বেলম্যান এতে সঞ্চালক ছিলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ডবি্লউটিও নয়, বরং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাই এখন গভীর সংকটে। ফলে এলডিসিকে তার আগামী দিনের করণীয় ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, এলডিসির প্রধান দাবি বাজার সুবিধা। দিনে দিনে বাজার সুবিধার বিষয়টি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কারণ, নানা অশুল্ক বাধা।
ডবি্লউটিওর অষ্টম সম্মেলনের পর কী হবে_ প্রশ্ন তোলেন দেবপ্রিয়। পাশাপাশি এবারের সম্মেলনে এলডিসির জন্য আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ যে বেঞ্চমার্ক করা হয়েছে, তাতে কোনো লাভ হবে বলে তিনি মনে করেন না।
দেবপ্রিয় বলেন, 'এ বেঞ্চমার্ক কোনো চেঞ্জমার্ক হবে না। বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এলডিসি ধারণাটিই এখন হুমকির মুখে।'
চার্লস গোর বলেন, এলডিসির বড় চ্যালেঞ্জ হলো কর্মসংস্থানের অভাব। বাজার প্রবেশাধিকার বা রফতানি না বাড়াতে পারলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন।
বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর দেশটিতে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী কাজ খুঁজছে। কিন্তু উপায় নেই। সেবা খাতে অব্যাহতি অর্থাৎ, এলডিসি থেকে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে অবাধে শ্রম রফতানির বিষয়টির ওপর জোর দেন তিনি।
জেম ডি মেলো বলেন, সবার জন্য তো বটেই, বিশেষ করে এলডিসির জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নীতিভিত্তিক বাজার ব্যবস্থা চালু জরুরি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, 'কিন্তু সব কিছুর মূলে যে ওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র! দেশটি এলডিসির জন কোনো বিবেচনাই করছে না।'
অন্যদিকে, ডবি্লউটিওর আলোচনা বা দরকষাকষি থেকে মৎস্য সংক্রান্ত (ফিশারিজ) বিষয়টি বাদ পড়ে যাওয়ায় তিনি হতাশ।
লেসোথোর মন্ত্রী ভিক্টর কেস্তো বলেন, এলডিসিগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, বেকারত্ব সমস্যাসহ সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। সীমিত আকারে দেশগুলোর রফতানি উন্নয়ন হয়েছে। এ উন্নয়ন আরও ব্যাপক হতো, যদি দোহা উন্নয়ন কার্যসূচির (ডিডিএ) সফল পরিসমাপ্তি হতো। আপাতত তিনি সে সম্ভাবনা দেখছেন না।
তবে নিজেদের অধিকার আদায়ে এলডিসিগুলোকে সব সময় একাট্টা থাকতে হবে বলে মনে করেন ভিক্টর কেস্তো।

No comments

Powered by Blogger.