সূচক বেড়েছে সামান্যই

টানা দুই সপ্তাহ সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রবণতায় চলার পর গত সপ্তাহে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। তবে সপ্তাহব্যাপী শেয়ারদর ওঠানামায় উত্থান-পতন ছিল লক্ষণীয়। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের তিনদিন দর বাড়লেও কমেছিল দু'দিন। বাজারের এ অস্থিরতার নেপথ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নূ্যনতম শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত ইস্যু গেল সপ্তাহের বাজারে সর্বাধিক প্রভাব ফেলেছিল।


এ বিষয়ে এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, পরিচালকের পদ ধরে রাখতে নূ্যনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত চ্যালেঞ্জ করে কিছু কোম্পানির পরিচালক হাইকোর্টে রিট করবেন_ এমন গুজবের এখনও সুরাহা হয়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত এসইসির নির্দেশনা বাস্তবায়িত হবে কি-না তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা-অনাস্থার দোলাচল কাটেনি। বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চলতি সপ্তাহের লেনদেনেও এ ইস্যুটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
গত সপ্তাহে সার্বিকভাবে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর সাধারণ সূচক প্রায় ৬৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। উভয় শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ শেয়ারদর বাড়লেও দরবৃদ্ধির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম ছিল বিধায় সূচক বৃদ্ধির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ছিল না।
গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ২৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৯৭টিরই দর বেড়েছে, কমেছে ৫৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১২টির দর। সাধারণ সূচক ৬৭ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বেড়ে ক্লোজ হয়েছে ৫০০০ পয়েন্টে। দৈনিক গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়ে ২৭৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২০৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৭৩টির দর বেড়েছে, কমেছে ২৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৯টির দর। নির্বাচিত খাত সূচক প্রায় ১৪৬ পয়েন্ট বেড়ে ক্লোজ হয়েছে ৯০৭২ পয়েন্টে। দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার।
ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের মোট শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের কম রয়েছে, এমন কোম্পানির প্রতিই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল সর্বাধিক। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি দরবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল এসব কোম্পানির শেয়ার।
ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতে সর্বাধিক ৪২৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৩১ দশমিক ৭২ শতাংশ। খাতভিত্তিক লেনদেনের দিক থেকে এর পরের অবস্থানে জ্বালানি ও শক্তি খাতে ১৩৯ কোটি ৭৪ লাখ, বীমা খাতে ৮৯ কোটি ৮ লাখ, বস্ত্র খাতে ৮৮ কোটি ৮৮ লাখ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৮৫ কোটি ৫৫ লাখ, প্রকৌশল খাতে ৭৮ কোটি ৮৪ লাখ, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতে ৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। একক কোম্পানি হিসেবে যমুনা অয়েলের সর্বাধিক ৬৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। শীর্ষ লেনদেনের এরপরের অবস্থানে ছিল ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, বেক্সিমকো লিমিটেড, উত্তরা ব্যাংক, আল আরাফা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ফু-ওয়াং সিরামিক্স, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
খাতভিত্তিক দরবৃদ্ধির দিক থেকে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড খাত ছাড়া অন্য সব খাতের সার্বিক দর বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র খাতের সার্বিক দর ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ৪ দশমিক ১২ শতাংশ, প্রকৌশল খাতের ২ দশমিক ০৬ শতাংশ, ব্যাংক খাতের ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ দর বেড়েছে। একক কোম্পানি হিসেবে সর্বাধিক ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ দর বেড়েছে জেমিনি সি ফুড কোম্পানির শেয়ারের। এর পরের অবস্থানে ছিল রহিম টেক্সটাইল, বিডি অটোকার, মিথুন নিটিং, রেনউয়িক যজ্ঞেশ্বর, জুট স্পিনার্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তাল্লু স্পিনিং, শাইনপুকুর সিরামিক্স ও মুন্নু স্টাফলার্স।

No comments

Powered by Blogger.