ছিনতাই করতে গিয়ে কখনো র‌্যাব-পুলিশের বাধা পাইনি

'কটি দামি করোলা প্রাইভেট কারে চড়ে রাজধানীতে ঘুরে বেড়াতাম। সুযোগ পেলেই করতাম দামি গাড়ি ছিনতাই। এভাবে পাঁচ বছর ধরে গাড়ি ছিনতাই করতে গিয়ে কখনোই রাস্তায় র‌্যাব-পুলিশের বাধার শিকার হইনি। এর আগে দুইবার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছি। কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবার গাড়ি ছিনতাই করেছি। গত পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৩০টি গাড়ি ছিনতাই করে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছি।'_কথাগুলো বলল ছিনতাইকারী দলের নেতা রাজু আহমেদ ওরফে জাকির। গত শনিবার বিকেলে দক্ষিণখানের কসাইবাড়ি রেলক্রসিং এলাকা থেকে ছিনতাইকারী দলের নেতা রাজুকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তার তত্ত্বাবধানে থাকা তিনটি প্রাইভেট কার, একটি ওয়াকিটকি, চাপাতি, ছোরা, ৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, জাল টাকা, সাতটি বিশেষ ধরনের সুই ও গাড়িতে ব্যবহারের জন্য চারটি ভুয়া নাম্বার প্লেট জব্ধ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় তার তিন সহযোগীকে।
রাজু কালের কণ্ঠকে জানায়, রাজধানীর গুলশান-বনানী থেকে শুরু করে সব এলাকাতেই সে গাড়ি ছিনতাই করেছে। এর আগে দুবার গ্রেপ্তার হলেও নিম্ন আদালতের জাহাঙ্গীর নামের এক উকিলের মাধ্যমে জামিনে ছাড়া পায় সে।
রাজু জানায়, ২০ বছর আগে কাজের সন্ধানে বরগুনার তালতলী থেকে ঢাকার বাড্ডায় আসে সে। এরপর মাসিক ৩০০ টাকা বেতনে মিরপুরের একটি হোটেলে কর্মজীবন শুরু করে। কিন্তু ওই কাজ বেশি দিন ভালো লাগেনি তার। বাড্ডায় সন্ত্রাসী রনির মাধ্যমে রাজধানীর অপরাধ জগতের সঙ্গে তার পরিচয়। একের পর এক গাড়ি ছিনতাই করতে-করতে পুলিশের তালিকায় নাম ওঠে তার। গাড়ি ছিনতাই করে মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করে সে। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে।
রাজু সম্পর্কে গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, রাজুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মোট ৫৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ডাকাতিসহ কয়েকটি হত্যা মামলাও আছে। অন্য মামলাগুলো গাড়ি চুরি ও ছিনতাই মামলা। এর আগে আরো দুবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজুর ছিনতাই মিশন : রাজু জানায়, রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সহযোগীদের নিয়ে সে গাড়ি ছিনতাই করত। তাদের টার্গেট থাকত রাস্তার পাশে রাখা দামি গাড়ি। গাড়ির চালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তারা গাড়ি নিয়ে চম্পট দিত। ছিনতাইকালে তারা কখনো কখনো নিজেদের র‌্যাব-পুলিশের লোক বলেও পরিচয় দিত। ছিনতাইয়ের কাজে ওয়াকিটকির ব্যবহার করত সে। ছিনতাই করা গাড়িগুলো দক্ষিণখানের বেরাইদ বাজারের পাশে একটি গ্যারেজে রাখা হতো।
মাদক ও জাল টাকার ব্যবসা : ছিনতাই করতে গিয়ে একদিন রায়ের বাজার এলাকার আলম নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হয় রাজুর। রাজু জানায়, আলমের কাছ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ হেরোইন কিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেকের কাছে বিক্রি করত সে। এ ছাড়া মাদক ব্যবসায় জাল টাকা ব্যবহার করত রাজু। উত্তরার রানা নামের এক জাল টাকার ব্যবসায়ী তাকে আসল দুই হাজার টাকার বিনিময়ে জাল (নকাল) ১০ হাজার টাকা দিত।
কারাগারে বসে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা : রাজু জানায়, এর আগে দুবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারেও সে সহযোগী বানিয়েছে। সহযোগীর নাম আবদুর রাজ্জাক। কারাগার থেকে বের হয়ে তারা দুজনে একসঙ্গে ছিনতাইয়ে নামে।
মামলার তদারক কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসি শহিদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজু ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। আরো তথ্য জানতে তদন্ত চলছে।

No comments

Powered by Blogger.