রাব্বানি হত্যাকাণ্ডে হাক্কানি নেটওয়ার্ক জড়িত ছিল না

হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম শীর্ষ নেতা সিরাজ হাক্কানি বলেছেন, আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট বুরহানুদ্দিন রাব্বানি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁরা জড়িত ছিলেন না। এমনকি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্সের (আইএসআই) সঙ্গেও তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
এদিকে, পাকিস্তান সরকার রাব্বানি হত্যাকাণ্ডে আইএসআইয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। আফগান সরকার অভিযোগ করেছে, আইএসআইয়ের যোগসাজশে রাব্বানিকে হত্যার পরিকল্পনা পাকিস্তানে হয়েছিল।
বিবিসি পশতুর (ভাষা) সঙ্গে এক লিখিত সাক্ষাৎকারে সিরাজ হাক্কানি এসব কথা বলেন। সিরাজ হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে এবং সংগঠনটিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
আফগানিস্তানের সরকার রাব্বানির হত্যাকাণ্ডে হাক্কানি নেটওয়ার্ক দায়ী বলে অভিযোগ করে আসছে। প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বলেন, তালেবানের সঙ্গে তাঁর সরকার আর শান্তি আলোচনায় বসবে না। রাব্বানির হত্যাকাণ্ডই তাঁর মধ্যে এ উপলব্ধির জন্ম দিয়েছে।
তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছিলেন রাব্বানি। গত ২০ সেপ্টেম্বর কাবুলে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় তিনি নিহত হন। এরপর তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।
সিরাজ হাক্কানি বলেন, ‘আমরা বোরহানুদ্দিন রাব্বানিকে হত্যা করিনি। অথচ ইসলামি আমিরাতের মুখপাত্ররা এই কথা বারবার দাবি করে আসছেন।’ ১৯৯৬ সালে তালেবান কাবুল দখল করার পর থেকে তারা আফগানিস্তানকে ইসলামি আমিরাত হিসেবে আখ্যা দেয়।
রাব্বানি হত্যাকাণ্ডে আইএসআইয়ের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে সিরাজ বলেন, ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত দখলদারির সময় মুজাহিদেরা পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।
আফগান গোয়েন্দাদের দাবি, রাব্বানি হত্যার পরিকল্পনা পাকিস্তানের মাটিতে হয়েছে। দেশটির দ্য ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটি (এনডিএস) বলেছে, তালেবানের শীর্ষ নেতারা পাকিস্তানের কুয়েটা শহরে এ হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর সঙ্গে আইএসআইও জড়িত ছিল।
পাকিস্তানের প্রত্যাখ্যান: পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে কাবুলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে একে দায়িত্বজ্ঞানহীন দাবি বলে উল্লেখ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আফগান কর্তৃপক্ষের এ ধরনের বিবৃতি না দিয়ে বরং বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা উচিত, কারা শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীদের হত্যা করছে।
তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী রাব্বানিকে হত্যার কয়েক দিন পর আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ঘোষণা দেন, তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা আর নয়—আলোচনা হবে পাকিস্তানের সঙ্গে।
অন্ধ সমর্থন দেবে না তালেবান: তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) বাজাউরের কমান্ডার ও টিটিপির উপপ্রধান মৌলভি ফকির মুহাম্মদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে অন্ধভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন দেবেন না তাঁরা। পিটিআই অনলাইনের খবরে বলা হয়, বিবিসিকে গতকাল টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৌলভি ফকির বলেন, পাকিস্তানের আদিবাসী এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র। সে যা-ই হোক, যদি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে পদাতিক বাহিনী পাঠায়, তাহলে ইসলামাবাদকে অন্ধভাবে সমর্থন দেবে না টিটিপি।

No comments

Powered by Blogger.