সঙ্গী এখন ইন্টারনেট by ফয়সাল হাসান

য়েক বছর আগেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা, ব্যক্তিগত ই-মেইল আইডি থাকা, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকায় বেশ একটা স্মার্টনেসের ব্যাপার ছিল। সে সময় যার ফেসবুক আইডি ছিল অথবা ই-মেইল আইডি ছিল, তাকে অনেকেই সমীহের চোখে দেখত। বন্ধুমহলে সে তরুণ বা তরুণী বেশি কদর পেত, যে ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য বের করতে পারত নিমেষেই। ইন্টারনেটের জগতের সঙ্গে যার পরিচয় ছিল, তাকেই অন্য দশজনের চেয়ে স্মার্ট মনে করা হতো তখন। এককথায় ইন্টারনেট ব্যবহার করাটা ছিল স্মার্টনেসের পরিচায়ক।

তখন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দরকার হতো ব্যয়বহুল মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার। কিন্তু এখন আর সে দিন নেই। এখন মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ কম্পিউটার, নেটবুক ছড়িয়ে পড়ছে হাতে হাতে। এমনকি মাত্র হাজার খানেক টাকার মুঠোফোন থেকেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় বেশ সহজেই। এবং সেটাও বেশ অল্প খরচে। মুঠোফোন সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে ইন্টারনেটের জাল ছড়িয়ে পড়েছে জেলা শহর ছাড়িয়ে উপজেলা শহর, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। বাংলাদেশে এমন অনেক গ্রাম আছে, যেগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছায়নি এখনো কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পৌঁছে গেছে ঠিকই। ইন্টারনেট ব্যবহার করাটা এখন যত না স্মার্টনেস, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন। ই-মেইল আইডি না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজের ভর্তি ফরমটা তুলতেও পড়তে হয় বিপদে। ইয়াহু! মেসেঞ্জার ছাড়া দূর দেশের বন্ধুর সঙ্গে বিনা মূল্যে ভিডিও চ্যাট হয়ে যায় অসম্ভব। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট না থাকলে বন্ধুমহলের ‘ঘরের খবর’টাও ‘বাইরের মানুষের’ কাছ থেকেই জেনে নিতে হয়। এবার আপনিই বলুন, ইন্টারনেট কি তাহলে শুধুই স্মার্টনেস, নাকি স্মার্টনেসের চেয়েও বেশি প্রয়োজন? যদি তা-ই মনে করেন, তাহলে ইন্টারনেটের জগতে আপনাকে জানাই স্বাগতম। আসুন, পাড়ি জমাই ইন্টারনেটের মহাসমুদ্রে।

সামাজিকতার অন্য নাম
ফেসবুক (www.facebook.com) যেন সামাজিকতার অন্য নাম হয়ে গেছে। আর হবেই না বা কেন! মুহূর্তের মধ্যেই কাছের অথবা বহু দূরের বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারাটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। ফেসবুকের মাধ্যমে নতুন বন্ধু তৈরি, পুরোনো বন্ধু খুঁজে পাওয়া, বন্ধুদের ছবি দেখা, নিজের ছবি, চিন্তাভাবনা অজস্র মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সবই সম্ভব। ফেসবুকে বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করা যায় গ্রুপ, পাঠানো যায় মেসেজ, আরও কত কি! হয়তো কোনো সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চান, সেটা খুব সহজেই সম্ভব হবে ফেসবুকে একটা ‘cause’ তৈরি করার মাধ্যমে। বান্দরবান থেকে অনেক মজা করে এসেছেন কয়েকজন বন্ধু মিলে। এখন সেই মজার ছবিগুলো অন্য বন্ধুদের দেখাতে চান। কোনো সমস্যা নেই, ফেসবুকে একটা ‘Photo Album’ তৈরি করে ফেললেই হলো। আবার বন্ধুর তৈরি করা ‘Photo Album’-এ ‘Like’ দেওয়া অথবা ‘Comment’ করাটা তো মামুলি ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানলেন ‘অমুক’ স্যার ‘তমুক’ ক্লাসটেস্ট নেবেন কাল সকালেই। এখন সেটা জানাতে চান অন্য ক্লাসমেটদের, যাঁরা আজ আসেননি ক্লাসে। বন্ধুদের ফোন করে জানাতে গিয়ে দেখলেন মুঠোফোনে ব্যালেন্স নেই। এখন উপায়? নো চিন্তা! নিজের ফেসবুক ‘Status’-এ লিখে দিন না ক্লাস টেস্টের কথা। অথবা বন্ধুদের ‘wall’-এও লিখতে পারেন। কোনো বিষয় নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান, অথচ বন্ধুরা সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন বিভিন্ন শহরে? কোনো সমস্যা নেই! এবারও ফেসবুক রয়েছে আপনার পাশে। এই যেমন কিছুদিন আগে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ০৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একটা গ্রুপ খুলেছেন ‘{RCS 05}’ নামে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বন্ধুরা এখন সে গ্রুপে নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন, আসছেন ‘পুনর্মিলনীর’ জন্য। অনুষ্ঠানে কী কী থাকবে, খাবার মেন্যুটাই বা কী হবে, আবার টি-শার্টের ডিজাইনের প্রস্তাব করা—সবকিছুতেই এখন সবাই অংশ নিতে পারছেন। দূরত্ব যেন কোনো সমস্যাই না। ফেসবুক সম্পর্কে যত কিছু বললাম, বাদ দিয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু! তাহলে বুঝুন, ফেসবুকে আছে কত কিছু। মোটামুটি একই ধরনের সুবিধা দেয় টুইটার (www.twitter.com), গুগল প্লাস (www.plus.google.com), লিঙ্কড ইন (www.linkedin.com), হাই ফাইভ (www.hi5.com), মাই স্পেস (www.myspace.com), অরকুট (www.orkut.com)-সহ এ ধরনের আরও বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটও। আর সবই বিনা মূল্যে। প্রয়োজন শুধু একটা ই-মেইল আইডি।

ই-মেইল আইডি
জিমেইল (www.gmail.com)
ইয়াহু! মেইল (www.mailyahoo.com), , উইন্ডোজ লাইভ হটমেইল (www.hotmail.com), ইনবক্স (www.inbox.com), মেইল (www.mail.com)-সহ আরও অনেক ওয়েবসাইটেই বিনা মূল্যে ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। আর ই-মেইলের সাহায্যে যে চোখের পলকেই হাজার মাইল দূরেও যে দ্রুত চিঠি আদান-প্রদান করা যায়, তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট পেপার অথবা প্রেজেন্টেশন বন্ধুর কাছে পৌঁছে দিতে কষ্ট করে বন্ধুর বাসায় যেতে হয়। না আর। ই-মেইল ছবি কিংবা ভিডিও সংযুক্ত করেও পাঠানো যায় খুব সহজেই। এই সময়ে একটা ই-মেইল আইডি থাকা সবার জন্যই খুব বেশি দরকারি। অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ করা থেকে শুরু করে, যেকোনো সামাজিক ওয়েবসাইটে যুক্ত হতে চাইলে বা কোনো অনলাইন জার্নালের গ্রাহক হতে চাইলে ই-মেইল আইডি লাগবেই।

ইউটিউবের জগৎ
ইউটিউব (www.youtube.com) দিয়ে যে মজার মজার ভিডিও ক্লিপ আর গান কিংবা সিনেমার ট্রেলার দেখা যায়, সেসব ভাবার দিন শেষ। কম্পিউটারের খুঁটিনাটি ঠিকঠাক করা শেখা থেকে শুরু করে, কীভাবে টাই বাঁধা যায় অথবা কীভাবে কোন ফরম পূরণ করতে হবে, আবার গবেষণাপত্র তৈরি করা অথবা তা উপস্থাপন করার সময় কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, এমন সবকিছুরই টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়।

খোঁজাখুঁজি কত সহজ
গুগল! নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। সার্চ ইঞ্জিনের জগতে গুগল সবচেয়ে এগিয়ে। কী হয় গুগল দিয়ে? গুগল (www.google.com) দিয়ে সবকিছু খুঁজে পাওয়া যায় নখদর্পণে। যেকোনো তথ্য জানতে চান না কেন, পথ দেখাবে গুগল। শুধু গুগলে ঢুকে সার্চ বক্সে একটু কষ্ট করে লিখে দিন যে বিষয়ে জানতে চান, তা। তাহলেই আপনার সামনে এসে হাজির হবে সে বিষয়ের ওপর অজস্র তথ্য, ছবি, ভিডিও। কোনো অচেনা এলাকায় যেতে চান, তবে সে এলাকার মানচিত্র থেকে শুরু করে সব তথ্যই দেবে গুগল। এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠানের শুধু ফোন নম্বর দিয়ে সার্চ দিলেও সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে গুগল। কোনো কিছুর ছবি দিয়ে সার্চ করলেও ওই একই ধরনের আরও অনেক ছবি বা তথ্য পাওয়া যাবে, এমনকি ভয়েস সার্চের সুবিধাও আছে গুগলে। আপনার জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, গুগলে শুধু ইংরেজিতে নয়, বাংলা ভাষায়ও তথ্য খোঁজা সম্ভব। গুগলের মতোই আরও কিছু সার্চ ইঞ্জিন হলো ইয়াহু! সার্চ (www.yahoo.com), মাইক্রোসফটের বিং (www.bing.com), আস্ক (www.ask.com)

গবেষণার জন্য
অনেক সময় শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয় বেশ পুরোনো সময়ের পত্রিকার তথ্য। বছর খানেক আগে পত্রিকায় প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পেতে কষ্ট করে পত্রিকা অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই আর। এখন অধিকাংশ পত্রিকাই পাওয়া যায় অনলাইনে। এটা শুধু বাংলাদেশের পত্রিকার ক্ষেত্রে নয়, বিদেশি পত্রিকার ক্ষেত্রেও। যেকোনো পত্রিকার ওয়েব ঠিকানা পাওয়া যাবে গুগলে সার্চ করলেই। গবেষণার জন্য পরীক্ষিত তথ্যের ক্ষেত্রে উইকিপিডিয়া (www.wikipedia.com) বেশ গ্রহণযোগ্য সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছে। উইকিপিডিয়া থেকে শুধু তথ্য নেওয়াই নয়, বরং নিজের গবেষণালব্ধ তথ্য যোগ করে দেওয়ার সুবিধাও রয়েছে।

দেশ-বিদেশে কথা বলা
ইয়াহু! মেসেঞ্জারের (www.messenger.yahoo.co) সাহায্যে দেশ-বিদেশে কথা বলা যায় একেবারে বিনা মূল্যে। ইয়াহুতে ভিডিও চ্যাটের ব্যবস্থাও আছে। প্রায় একই ধরনের সুবিধা দেয় গুগল টক (www.google.com/talk), স্কাইপি (www.skype.com)-সহ আরও অনেক ওয়েবসাইট।
ইন্টারনেট একজন শিক্ষার্থীকে কতভাবে যে সাহায্য করতে পারে, তা নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে। যার নিজের কম্পিউটার নেই, সে ইচ্ছা করলেই মাত্র ১০ টাকা দিয়ে আধা ঘণ্টার জন্য সাইবার ক্যাফে থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। জেলা শহর ছাড়িয়ে বিভিন্ন উপজেলা শহরেও আজ গড়ে উঠেছে সাইবার ক্যাফে। আবার মোবাইল থেকে এসব ওয়েবসাইটে ঢুকতে চাইলে, সেটাও সম্ভব। ওপরে যেসব ওয়েবসাইটের কথা বলা হলো, সেগুলোর সবকটিই মুঠোফোন সংস্করণ রয়েছে সে ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটগুলোর ওয়েব ঠিকানায় www-এর স্থলে m বসালেই চলবে।

No comments

Powered by Blogger.