চোখের জলে দুই মেয়ের চিরবিদায়

বাবার ট্রাক্টরের নিচে পড়ে প্রাণ হারানো ছোট্টশিশু দুই বোন আশা ও রানির দাফন গতকাল মঙ্গলবার সকালে সম্পন্ন হয়েছে। দুই মেয়েকে চিরবিদায় দেওয়ার পর বাবা কাবুল উদ্দিন ও মা সাবিনা বেগমের মুখে যেন কোনো কথা ছিল না। বারবার তাঁরা শুধু অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন। দুই নাতনিকে হারিয়ে একই অবস্থা দাদা ইলিয়াস ও দাদি বাহার বেগমের। গত সোমবার বিকেলেও রাজশাহীর তানোরের বিলি্ল দিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক কাবুল উদ্দিনের বাড়ি ছিল হাসি-খুশিতে ভরা। প্রথমবার মেয়ে হওয়ার পর একটি ছেলের আশায় একে একে আরো তিনটি মেয়ে হলেও কাবুলের পরিবারে কখনো এ নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি হয়নি।
বরং চার মেয়েকে নিয়ে অনেকটা সুখেই সংসার গড়ে তুলেছিলেন কাবুল ও তাঁর স্ত্রী সাবিনা। চার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু গত সোমবার বিকেলে এক সঙ্গে দুই মেয়েকে হারিয়ে সেই সুখের সংসারেই নেমে এলো যেন শোকের ঘনকালো মেঘ।
সোমবার বিকেলে বাড়ির পাশে জমিতে ট্রাক্টরে হালচাষ করছিলেন কাবুল। মেঝ মেয়ে আশা, সবার ছোট বোন রানিকে কোলে নিয়ে চড়েছিল ট্রাক্টরে, বাবার পেছনে। কিন্তু হঠাৎ ঝাঁকি লেগে নিচে পড়ে যায় আশা ও রানি। ট্রাক্টরের লোহার ফালে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় দুই বোন। এ ঘটনায় আশা ও রানির পরিবারে যেমন, তেমনি এলাকাবাসীর মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল সকালে শেষবারের মতো লাশ দেখতে এসে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিল না। তাদের কান্নায় ওই এলাকার বাতাস যেন ভারি হয়ে ওঠে। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিলি্ল দিয়াড়াপাড়া গ্রামের ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আশা ও রানিকে পাশাপাশি দুটি কবরে দাফন করা হয়। দুই মেয়েকে হারিয়ে বাবা কাবুল মাঝেমধ্যেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠছিলেন, 'আমি নিজ হাতে দুই মেয়েকে মেরে ফেললাম। কেন তাদের আমি ট্রাক্টরে তুলেছিলাম। আমি এখন কী নিয়ে থাকব। আমার দুই মেয়ে কোথায়? আমাকে তাদের কাছে নিয়ে চল।'
তানোর থানার ওসি ইসলাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি দুর্ঘটনা, তাই লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.