ভালো আছে রানু আর তাঁর পরিবার by মোছাব্বের হোসেন

শী নামের ফুটফুটে একটি মেয়েশিশু। মা-বাবা রানু ও আনোয়ার হোসেন দুজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। বোনের সংসারে থাকেন রানু। সঙ্গে থাকা বড় বোন রীতারও সংসার আছে। সংসারে অর্থের টানাপোড়েন, কাঁধে ঋণের বোঝা—সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় অবস্থা। রানু নিজেও কিছু করতে পারেন না, আবার স্বামীও অক্ষম। এই অবস্থায় নিরুপায় হয়ে বলেছিলেন, ‘অখন মরা ছাড়া কোনো বুদ্দি নাই।’ এই শিরোনামে প্রথম আলোয় ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অগণিত হূদয়বান পাঠক রানুর আর্তনাদে সাড়া দিয়েছিলেন।

একের পর এক ফোন আসতে থাকে মুঠোফোনে। সাহায্য করতে ইচ্ছুক সবাইকে রানুর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পাঠকেরা আবার প্রথম আলোর অফিসে ফোন করে রানুর পরিবারের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান। এই খবর পাঠকদের জানানোর জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর রানুর বাসা মিরপুর মধ্য পাইকপাড়ার বউবাজারে গিয়ে হাজির হই। রানু বলতে থাকেন তাঁর পরবর্তী অবস্থার কথা।
তিনি জানান, প্রথম আলোতে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য আসতে থাকে। এক ব্যক্তি একাই দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে, বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন থেকে সাহায্য আসতে থাকে। সব মিলিয়ে চার লাখ টাকার মতো সাহায্য আসে। এরই মধ্যে রানুর বড় বোন রীতা সন্তান প্রসব-সংক্রান্ত জটিলতায় গুরুতর অসুস্থ হন। ওই সময় এই সাহায্যের টাকা দিয়ে বোনের চিকিৎ সা করানো হয়।
প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সাহায্যের টাকা দিয়ে বোন নতুন জীবন পেয়েছে উল্লেখ করে রানু বলেন, ‘প্রথম আলো আমার বোনকে বাঁচিয়েছে।’ এরপর বাকি টাকা দিয়ে রানু বাসার সামনে একটি দোকান দিয়েছেন। তেল, ডাল, লবণ, সাবান থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য পাওয়া যায় এই দোকানে।
রানুর বড় বোন রীতা দোকানে বসেন। তিনি জানান, ‘অখন এই দোকান থ্যাইকা ডেইলি তিন হইতে চার হাজার টাকা বিক্রি হইতেছে। এই দিয়ে সংসারের অনেক উপকার হয়।’ ওদিকে রানু ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে টেলিফোন অপারেটরের কাজ করে মাসে ছয় হাজার টাকা পান এবং রানুর স্বামী আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ বিক্রি করেন। আর রানুর মেয়ে ঐশীকে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়েছে। সে এখন নিয়মিত স্কুলে যায়। সবকিছু মিলিয়ে সংসারটি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে।
রানু বলেন, ‘প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদের পর তাঁদের পরিবার আজ স্বাবলম্বী। প্রথম আলো আমাদের যে উপকার করেছে, তা কোনো দিনই ভুলব না, সারা জীবন ঋণী থাকব। একদিন মরতে চাইছিলাম, আর প্রথম আলো আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। এখন আর মরতে চাই না, ভালোভাবে বাঁচতে চাই।’ কথা বলতে বলতে মা-বাবার সামনে ঐশী এসে হাজির, দুষু্বমিতে মেতে ওঠে সে।
তার মুখে যেন রাজ্যের আনন্দ। সেই আনন্দের ছোঁয়া লেগেছে তার মা-বাবার মুখেও।

No comments

Powered by Blogger.