ফি'র বিনিময়ে ভারতকে নৌ ট্রানজিট দেবে বাংলাদেশ

ফি বা মাসুলের বিনিময়ে নৌপথে ভারতকে নিয়মিত ট্রানজিট সুবিধা দেবে বাংলাদেশ। পরীক্ষামূলকভাবে দুটি চালানে বিনা মাসুলে এ সুবিধা দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে ভারত থেকে জাহাজভর্তি যেসব চালান আসবে সে ক্ষেত্রে মাসুল দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। পরীক্ষামূলক ট্রানজিট সফল হওয়ায় পরবর্তী সময়ে সরকার নিয়মিত আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেবে ভারতকে।
নিয়মিত ট্রানজিট বাস্তবায়নের আগে একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরি করা হবে। নীতিমালা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে একটি আদেশ জারি করা হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন।
পরীক্ষামূলক নৌ ট্রানজিটের ফলাফল পর্যালোচনা করতে ওই বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের আওতায় ভারত থেকে যে দুটি চালান নৌপথে আশুগঞ্জ বন্দরে এসেছে সেসব চালানে কোনো ধরনের ফি বা মাসুল প্রযোজ্য হবে না। কারণ, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নৌ-প্রটোকলের আওতায় ফি নেওয়ার কোনো বিধান নেই। ভবিষ্যতে যেসব চালান আসবে সে ক্ষেত্রে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী মালপত্র খালাসের অনুমতি দেওয়া হবে। নিয়মিত ট্রানজিট বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ফি বা মাসুল ধার্য করবে।
গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ ইশতেহার অনুযায়ী চলতি
বছরের মে মাসের মধ্যে নৌপথে পরীক্ষামূলক ট্রানজিট বাস্তবায়নের কথা। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত 'প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড' সংক্ষেপে নৌ প্রটোকল চুক্তি মোতাবেক নৌপথে ট্রানজিট কার্যকর করতে দু'দেশের সরকারপ্রধানের সম্মতি রয়েছে।
জানা গেছে, পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের আওতায় ভারতের পণ্যবাহী দুটি জাহাজ গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নৌবন্দরে ভিড়ে। এর মধ্যে একটি জাহাজে ৩০৫ টন লোহাজাতীয় পণ্য রয়েছে। চুক্তির বিধি অনুয়ায়ী, কাস্টমসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে আশুগঞ্জ বন্দর থেকে মালপত্র খালাসের পর বাংলাদেশি ট্রাকে করে সড়ক পথে আখাউড়া হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। আখাউড়া বন্দর কর্মকর্তা হামিদুল হক সমকালকে বলেন, প্রথম চালানের বেশিরভাগ পণ্য ত্রিপুরা চলে গেছে। দ্বিতীয় জাহাজটি এখনও আশুগঞ্জ বন্দরে ভেড়েনি। ওই চালানে প্রায় ১২০০ টন লোহাজাতীয় পণ্য আছে। এ দুটি চালানের পণ্য বিনা ফিতে বাংলাদেশ ছাড় দিয়েছে।
নৌ প্রটোকল চুক্তিতে যা আছে : সর্বশেষ নৌ প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে গত বছরের মে মাসে। ওই চুক্তিতে আশুগঞ্জ বন্দরকে 'পোর্ট অব কল' হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। এর অর্থ হলো পণ্যভর্তি ভারতীয় জাহাজ বাংলাদেশের সীমানায় আশুগঞ্জে এসে ভিড়তে পারবে। এখান থেকে মালপত্র খালাসের পর সড়ক পথে বাংলাদেশি ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতে পারবে। ওই চুক্তিতে এর বিনিময়ে বাংলাদেশের পক্ষে কোনো ধরনের ফি বা মাসুল আদায়ের বিধান রাখা হয়নি। তবে বন্দরে মালপত্র খালাস হওয়ার পর বাংলাদেশি ট্রাকে পরিবহনের সুবিধা পাবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মে মাসে পোর্ট অব কল ঘোষণার পর এই প্রথম ভারতীয় পণ্যভর্তি দুটি জাহাজ আশুগঞ্জ বন্দরে এসেছে।
চুক্তি আগেও ছিল : নৌ প্রটোকল চুক্তি নতুন নয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল তারই আওতায় স্বাক্ষরিত হয় নৌ প্রটোকল। ফলে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে নৌ ট্রানজিট চালু আছে। কিন্তু ১৯৭২ সালের চুক্তিতে পোর্ট অব কল ছিল ময়মনসিংয়ের শেরপুরে। তখন নদী পথেই কেবলমাত্র পণ্য পরিবহনের সুযোগ ছিল। নদীর নাব্যতা না থাকায় ১৯৮০ সালের পর শেরপুর বন্দর অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরে ভারত তার নিজের সুবিধার জন্য শেরপুরের পরিবর্তে আশুগঞ্জ বন্দরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ সরকারকে। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার ভারতের জন্য আশুগঞ্জ বন্দরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণা করে।

No comments

Powered by Blogger.