দুপচাঁচিয়ার হিমাগারে আলু পচছে

গুড়ার দুপচাঁচিয়া বরেন্দ্র স্পেশালাইজড হিমাগারে প্রান্তিক কৃষকদের সংরক্ষিত আলু বীজ পচে নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিপূরণ না পেয়ে হিমাগারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে তারা। এ সময় কৃষকরা বগুড়া-নওগাঁ সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হিমাগারের মালিক সুরেশ আগরওয়ালা ও তাঁর স্ত্রীর পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ড, হিমাগারের লাইসেন্স ও সম্পত্তির দলিল জব্দ করে। সেই সঙ্গে দেড় মাসের মধ্যে দুই কিস্তিতে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে কৃষকরা অবরোধ তুলে নেয়। সোমবার এ ঘটনা ঘটে। কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার প্রায় তিন হাজার প্রান্তিক কৃষক ওই হিমাগারে ১০ হাজার বস্তা আলু বীজ সংরক্ষণ করে।
কিন্তু মৌসুম শুরুর দুই মাস আগেই কয়েকজন কৃষক হিমাগার থেকে আগাম আলু উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন তাঁদের আলু বীজে পচন ধরে গাছ গজিয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গত ২০ ও ২৩ সেপ্টেম্বর কৃষকরা তাদের আলুর সন্ধান নিতে হিমাগারে এসে ফটকে তালা দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হিমাগার কর্তৃপক্ষ ৩ অক্টোবর কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এ কারণে সোমবার সকাল থেকে কৃষকরা ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে হিমাগারের সামনে ভিড় জমায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ হিমাগারের ফটকে 'দুর্গা পূজার কারণে হিমাগার বন্ধ' বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেয়। বিষয়টি দেখে কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে হিমাগারের ফটকের তালা ভেঙে হিমাগারে ঢুকে অফিসের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। পরে তারা বগুড়া-নওগাঁ সড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছে পরিস্থিতি শান্ত করে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে নূর ইসলাম, আবদুস সামাদ, ইসরাফিল, ইয়াছিন আলী, বাবু মাস্টার বলেন, হিমাগারে বীজ আলু রাখা হয়েছিল সামনের মৌসুমে জমিতে লাগানোর জন্য। কিন্তু হিমাগার মালিকপক্ষের অবহেলার কারণে সব বীজ পচে গেছে। তাঁরা ক্ষতিপূরণের কথা বললেও মূল দরজায় তালা লাগিয়ে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে।
দুপচাঁচিয়া থানার ওসি নূর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'সড়ক অবরোধের কথা শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। হিমাগার কর্তৃপক্ষ যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগে পালাতে না পারে সেজন্য ইউএনওর নির্দেশে তাদের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।' ইউএনও সুফিয়া নাজিম বলেন, 'ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এর আগে কৃষকরা অভিযোগ করায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে আশ্বাস দিয়েছে, তা ভঙ্গ করলে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
যোগাযোগ করা হলে হিমাগারের মালিক সুরেশ আগরওয়ালা বলেন, যান্ত্রিক কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল না। যেহেতু কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে, তাই তা পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। ইউএনওর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। দেড় মাসের মধ্যে দুই কিস্তিতে ক্ষতিপূরণের টাকা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.