চলছে শিশু অধিকার সপ্তাহঃ অবহেলায় বেড়ে ওঠা

'তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে জানবে শিশু জগৎটাকে'_এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে যখন বিশ্ব শিশু দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ পালিত হচ্ছে, তখন অযত্ন-অবহেলায় বাবা-মায়ের সানি্নধ্য ছাড়াই বেড়ে উঠছে গঙ্গাচড়ার তিস্তা চরের শিশুরা। ৩৩ বছর ধরে দেশে দিবসটি পালিত হলেও চরের শিশুদের কাছে দিবসটির তাৎপর্য অন্তরালেই রয়ে গেছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের শিশু জরিপ অনুযায়ী গঙ্গাচড়ায় ৪ থেকে ১৪ বছরের শিশু রয়েছে ৭৯ হাজার ৬১১ জন। এর মধ্যে বালক ৪০ হাজার ৪৪৯ এবং বালিকা ৩৯ হাজার ১৬২ জন। ৬ থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সী ৪৫ হাজার ৭১৪ জন শিশু স্কুলে ভর্তি হলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে অনেকেই ঝরে পড়ে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরেজমিন তিস্তার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় ২৭টি চরে প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের বাস। গড়ে প্রতিটি পরিবারে দুইজন করে শিশু থাকলেও তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ হাজার। চরের শিশুদের না আছে যত্নআত্তি, না আছে পুষ্টি। বর্তমান সময়ে চরের স্কুলগুলোতে শিশুরা শখ করে ভর্তি হলেও অভাব-অনটনের কারণে খাবার জোগাতে শেষ পর্যন্ত স্কুল ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম মহীপুর এলাকায় তিস্তাবাঁধে আশ্রিত একটি পরিবারের পাঁচ মাস বয়সী কন্যাসন্তান ঘুমাচ্ছিল বাঁশঝাড়ের নিচে দোলনার আদলে ঝোলানো বস্তায়। জানা গেছে, শিশুকে ঘুমিয়ে রেখে মা-বাবা অন্যের কাজে গেছেন মাঠে। মা ফিরে এসে বুকের দুধ খাওয়াবেন। বাঁধে আশ্রিত একই এলাকার নূর বানু বলেন, 'হামরা তো এমন করিই ছাওয়া (সন্তান) মানুষ করি। নিজের ভালো খাবার জোটে না বলে ছাওয়া ঠিকমতো দুধ পায় না।' চার-পাঁচ মাস বয়স থেকেই শিশুদের ভাতসহ অন্যান্য খাবার খেতে হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। জয়রামওঝা চরের শমসের আলী বলেন, 'ছাওয়া দুইটাক স্কুলোত দিছনু। গত আলুর মৌসুমে ওমরা (দুই সন্তান) মাইনষের ভুঁইয়োত আলু কুড়াইছে, ধানের কুড়াইছে বলেই দুই দিন খাবার পাছি। তারপর থাকি ওমরা আর স্কুলে যায় না।' লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়সাল হাসান জানান, প্রতি বছর তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে চরের পরিবারগুলো। বেশির ভাগ পরিবারপ্রধান জীবন বাঁচানোর তাগিদে শ্রম বিক্রির জন্য ছুটে যান ঢাকা, সিলেট ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায়। অভাবের সংসারে চরের শিশুরা তাই বেড়ে ওঠে অযত্ন-অবহেলায়।

No comments

Powered by Blogger.