গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট হওয়া কি স্বাভাবিক?

শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াটা অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয়। মনে করা হয় যে, তিন চতুর্থাংশ গর্ভবতী নারী যাদের আগে কখনই শ্বাস কষ্ট ছিল না তাদের এই সময়ে দম ফুরিয়ে আসে বলে মনে হয়। শ্বাসকষ্ট প্রথম বা দ্বিতীয় তিনমাস-কাল থেকে শুরু হতে পারে। এটি আপনার শরীরের প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে যেহেতু এই সময় আপনার শরীর শিশুকে ধারণ করার জন্য অভিযোজিত হয়।

আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে আপনার পাঁজরের খাঁচার চারপাশে আপনার আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ গর্ভাবস্থায় আপনার পাঁজরের খাঁচা উর্ধমুখী ও বাইরের দিকে চলে আসে। আপনার ফুসফুসকে আরও বেশি ধারণ ক্ষমতা দেওয়ার জন্য এরকমটি হয়ে থাকে।

এছাড়াও গর্ভাবস্থার হরমোন প্রোজেস্টরেন ফুসফুসের মাধ্যমে রক্তের মধ্যে অক্সিজেনকে শোষণ করার পদ্ধতির সঙ্গে আপনার শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তৈরি করে তোলে। যার ফলে, আপনার শরীর আপনার সিস্টেমে উপস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইড (যে গ্যাসটি আপনি নিঃশ্বাসের সঙ্গে বের করে দেন) এর মাত্রার প্রতি অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

এই পরিবর্তনগুলোর মানে হলো অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর প্রক্রিয়াজাতকরণে আপনার শরীর ভালভাবে কাজ করছে। আপনি ঠিক একই হারে শ্বাস নিচ্ছেন যেমনটা আপনি গর্ভধারণের পূর্বে নিতেন। কিন্তু এখন প্রতিবার শ্বাস নেওয়ার সময় আপনি অনেক গভীরভাবে শ্বাস নিচ্ছেন। এটিকে আপনার শ্বাসকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।

তিন মাস-কালের শেষের দিকে আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুর আকার আপনার শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। এই পর্যায়ে, আপনার জরায়ু (গর্ভ) বাস্তবিকই উপরের দিকে মধ্যচ্ছদা (পেশীর পাতলা পর্দা যা পাঁজরের খাঁচার নিচে অবস্থিত) বরাবর ধাক্কা দেওয়া শুরু করে। পালাক্রমে আপনার মধ্যচ্ছদা ফুসফুসের ওপর চাপ দেয়। সামান্য সিঁড়ি বেয়ে যখন আপনি হাঁসফাঁস করতে থাকেন তখন যদিও আপনার নিজেকে কিছুটা ইঞ্জিনের মতো মনে হতে পারে, চিন্তা করবেন না। এই ধরনের শ্বাসকষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক ও ক্ষতিকর কিছু নয়।

গর্ভাবস্থায় উদ্বেগজনক উপসর্গ দেখা যায় সেক্ষেত্রে আপনার অবিলম্বে চিকিৎসকের উচিত, যেমন-

যদি মনে হয় যে আপনার হৃৎপিণ্ড দ্রুতগতিতে চলছে, অনিয়মিত ও হৃৎস্পন্দনের ছন্দ হারিয়ে ফেলছে, যা বুক ধড়ফড় করা নামে পরিচিত।

মারাত্মক শ্বাসকষ্ট বা কাজকর্ম আরম্ভ করার পরে নিস্তেজ অনুভব করা,

বুকে ব্যথা, বিশেষ করে আপনি কোন ভারি কাজ করার সময় এটি শুরু হলে,

শুয়ে থাকা অবস্থায় বা রাতের বেলায় শ্বাস নিতে কষ্ট হলে,

এছাড়া, আপনার রক্তে যে আয়রনের মাত্রা কম হলে (রক্তশূন্যতা) শ্বাসকষ্ট তার একটি লক্ষণও হতে পারে। যদি আপনার হাঁপানি থাকে তাহলে আপনার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করুন। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে আপনি এবং আপনার শিশু যে পরিমাণ ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন তা গর্ভাবস্থায় হাঁপানির ওষুধ নেওয়ার ঝুঁকির চাইতে অনেক বেশি।

যদি আপনার অন্য কোন উদ্বেগজনক উপসর্গ না থাকে সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট অনুভব করাটা স্বাভাবিক এবং এতে আপনার শিশুর কোন ক্ষতি হবে না।

>>ডাঃ মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টার, লালবাগ, ঢাকা।
০১৮৪২৩৫৬০৪৮

No comments

Powered by Blogger.