মাদার অব হিউম্যানিটি পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত

পাঁচটি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক’ দেবে সরকার। এজন্য ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক নীতিমালা-২০১৮’- এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক  শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মাদার অব হিউম্যানিটি বলতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওনাকে মাদার অব হিউম্যানিটির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, সেটারই প্রতিফলন হিসেবে এটা (পদক) চালু করা হচ্ছে। পাঁচটি ক্ষেত্রে এই পুরস্কার দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা নারীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনে অবদান রাখার জন্য এই পুরস্কার দেয়া হবে। প্রান্তিক, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা, আত্মনির্ভরশীলকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ, জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ইনক্লুসিভ শিক্ষা বাস্তবায়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান; সুবিধাবঞ্চিত, আইনের সংস্পর্শে আসা, আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু, কারামুক্ত কয়েদি, ভবঘুরে, নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের কল্যাণ, উন্নয়ন ও পুনঃএকত্রীকরণ এবং কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমন কোনো কর্ম যা সমাজের মানুষের মেধা ও মননের বিকাশ, জীবনমান ও পরিবেশের উন্নয়ন, সমাজবদ্ধ মানুষের মানসিক ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সর্বোপরি মানবকল্যাণ ও মানবতাবোধ সমাজ বা রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এই পুরস্কার দেয়া হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, পদকের সংখ্যা হবে প্রতি বছর ব্যক্তি পর্যায়ে তিনটি এবং সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দুটিসহ মোট পাঁচটি।
পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংস্থাকে ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম স্বর্ণের একটি পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা, ২ লাখ টাকা ও একটি সম্মাননা সনদ দেয়া হবে। ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক’ অন্যতম সর্বোচ্চ জাতীয় পদক হিসেবে গণ্য হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, প্রতি বছর ২রা জানুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় সমাজসেবা দিবস অনুষ্ঠানে এই পদক দেয়া হবে। প্রাথমিক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে হবে জাতীয় কমিটি।
পুতুলকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন: অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন (পুতুল) আবারো ইউনেস্কোর জুরি বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম বিষয়ে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন দ্বিতীয়বারের মতো ‘ইউনেস্কো-আমির জাবের আল-আহমেদ আল-সাবাহ পুরস্কার’ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় মন্ত্রিসভা তাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আগামী দুই বছরের জন্য এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে একই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এদিকে কুয়েত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই বোর্ড প্রতি বছর শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের আধুনিক পদ্ধতিতে স্বনির্ভর হওয়ার উপায় উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ইউনেস্কো-আমির জাবের আল আহমেদ আল-জাবের আল-সাবাহ’ নামে দু’টি পুরস্কার দেয়। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে ডিজিটাল পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে কাজ করছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার ডলার মূল্যের এই পুরস্কার দেয়া হয়।
শাহরিয়ার শহীদের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শাহরিয়ার শহীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে শহীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শাহরিয়ার শহীদ গত শনিবার মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। তিনি বলেন, শাহরিয়ার শহীদ দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বাসসে কাজ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। অঞ্চলভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ৩০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। হার্ট অ্যাটাকের পর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ই নভেম্বর শাহরিয়ার শহীদ মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।

No comments

Powered by Blogger.