মোড়লদের নির্দেশে গণধর্ষণ!

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলায় গ্রামের মোড়লদের নির্দেশে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক আদিবাসী তরুণী (২০)। ভিন্ন সম্প্রদায়ের এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের ‘অপরাধে’ ওই তরুণীকে প্রায় ১২ জন পুরুষ ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় গ্রামের প্রধানসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, বীরভূমের সুবলপুর গ্রামে ভিন্ন সম্প্রদায়ের এক তরুণের সঙ্গে একজন আদিবাসী তরুণীকে গত সোমবার বিকেলে একসঙ্গে আটক করা হয়। এরপর গ্রাম্য মোড়লদের সমন্বয়ে গঠিত একটি অবৈধ আদালতের (ক্যাঙারু কোর্ট) বিচারের রায়ে প্রথমে ওই তরুণীকে ২৫ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়। কিন্তু ওই জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করায় গ্রাম্য মোড়লেরা ওই তরুণীকে গণধর্ষণের নির্দেশ দেয়। এরপর সোমবার দিবাগত রাতে ওই তরুণীকে জোর করে একটি ঘরে আটকে রেখে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গণধর্ষণ করা হয়। শান্তিনিকেতন থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে লাভপুর থানার এক গ্রামে ওই তরুণী গণধর্ষণের শিকার হন। তাঁর প্রেমিক চৌহাট্টা গ্রামের। নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর মা বলেন, ওই জরিমানার অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য তাঁদের নেই।
তাঁদের গ্রামের লোকজনই তাঁর মেয়েকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। পুলিশে খবর না দিতে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়। গুরুতর আহত তরুণীকে হাসপাতালে নিতেও ধর্ষকেরা বাধা দেয়। তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে বুধবার বিকেলে এক ফাঁকে তাঁরা ঘর থেকে পালিয়ে তাঁকে প্রথমে লাভপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখান থেকে বোলপুর ও পরে সুরি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, ‘কঠোর পরিশ্রমী আদিবাসী’ বলেই ভয়াবহ নির্যাতনের পরও ওই তরুণী বেঁচে আছেন। পুলিশ কর্মকর্তা সুধাকর বলেন, মঙ্গলবার রাতে দুজনকে আটকের পর সালিস ডেকে গ্রাম্য মোড়লেরা ওই তরুণীর বিচার করেন। তাঁর প্রেমিককেও সেখানে হাজির করা হয়। দুজনকে দুটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। বিচারে দুজনকে ২৫ হাজার রুপি করে জরিমানা করা হয়। তরুণীর মা-বাবাকে ওই জরিমানা পরিশোধ করতে বলা হয়। কিন্তু তাঁরা এ অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য নেই বলে অনুনয়-বিনয় করেন। এ সময় মোড়লদের প্রধান ক্ষিপ্ত হয়ে ওই তরুণীকে গণধর্ষণের জন্য গ্রামের লোকজনকে নির্দেশ দেন।
আর ওই প্রেমিক এক সপ্তাহের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুক্তি পান। হাসপাতালে কাতরাতে কাতরাতে ওই তরুণী ক্ষীণ স্বরে বলেন, ‘একজনের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছু লোক আমাদের দুজনকে ধরে গ্রামপ্রধানের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সালিস করে আমাকে ৫০ হাজার রুপি দিতে বলেন। আমি দিতে পারব না বললে, আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন শুরু হয়।’ চাঞ্চল্যকর এই গণধর্ষণের পর ভারতে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। দিল্লিতে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে চলন্ত বাসে এক মেডিকেল ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। পরে গুরুতর আহত ওই তরুণী সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। এরপর ধর্ষণবিরোধী আরও কঠোর আইন হলেও দেশটিতে একের পর এক যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলছে। নয়াদিল্লিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে একজন ডেনিশ নারী পর্যটক তাঁর হোটেলে ফেরার পথ হারিয়ে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন এবং গণধর্ষণের শিকার হন।

No comments

Powered by Blogger.