ভারতে কংগ্রেস যুগের অবসান ঘটতে চলেছে?

আগামী মে মাসে ভারতের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই জনমত সমীক্ষায় যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে ভারতে কংগ্রেস যুগের অবসান ঘটতে চলেছে। উত্থান হওয়ার সম্ভাবনা হিন্দুত্ববাদী শক্তি বিজেপির।
ভারতীয় গণমাধ্যমের বিভিন্ন সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা তলানিতে ঠেকেছে এবং একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে আসছে বিজেপি। জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত সব সময় যে মিলে যায় তা মোটেই নয়। বরং নানা সমীকরণের অঙ্কে অনেক কিছুরই বদল ঘটতে পারে শেষ মুহূর্তে। তবে এখন পর্যন্ত সমীক্ষার ফলাফলে বিজেপি শিবিরে খুশির হওয়া। বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট এনডিএ পেতে পারে সর্বোচ্চ ২৩১টি আসন ও সর্বনিম্ন ২০৭টি আসন। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইউপিএ জোট অনেক কষ্টে পৌঁছতে পারে ১০০টিতে। সর্বোচ্চ পেতে পারে ১২৭টি আসন। কংগ্রেসের পক্ষে যে দুই অঙ্ক পেরোনো সম্ভব নয়- তা ফুটে উঠেছে সব ক’টি সমীক্ষাতেই। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে আগামী লোকসভায় তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। সমীক্ষাগুলোর অনুমান, তৃতীয় বৃহত্তম দল হওয়ার দৌড়ে জয়ললিতার এআইডিএমকে, মায়াবতীর বিএসপি ও মুলায়মের সমাজবাদী পার্টিকে পেছনে ফেলে দিতে পারেন মমতা। লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির বাইরে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, চন্ডীগড় ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে কয়েকটি করে আসন পেলেও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি দেশজুড়ে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। আইবিএন-সিএসডিএস-এর সমীক্ষা যেখানে এনডিএ জোটের সম্ভাব্য আসন হিসেবে জানানো হয়েছে ২১১ থেকে ২৩১, সেখানে ইন্ডিয়া টুডে-সি ভোটার জানাচ্ছে, এই জোট পেতে পারে ২০৭ থেকে ২১৭টি আসন। আর এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের সমীক্ষা বলছে, এনডিএ জোট পেতে পারে ২২৬টি আসন। এর মধ্যে বিজেপি একাই পেতে পারে ২১০টি আসন। অন্য দিকে কংগ্রেস-সহ ইউপিএ জোটকে আইবিএন-সিএসডিএস-এর সমীক্ষা ১০৭ থেকে ১২৭টি আসন দিলেও ইন্ডিয়া টুডে-সি ভোটার দিয়েছে ৯৮ থেকে ১০৮টি আসন। আর এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের বক্তব্য, ইউপিএ জোট পেতে পারে মাত্র ১০১টি আসন। এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে ২৬টি আসন। বামরা সব মিলিয়ে ৩০টি আসন জিততে পারে। এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের সমীক্ষায় ৫৩ শতাংশই জানিয়েছেন, তারা মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে চাইছেন। রাহুলকে চাইছেন মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ। ৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। তবে, রাজধানী দিল্লিতে ৪১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা কেজরিওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। তিনটি সমীক্ষার ফলে আসন সংখ্যায় কম-বেশি ফারাক থাকলেও একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে প্রায় ১০০টি আসনের ফারাক থাকতে পারে। কিন্তু ভারতে কে সরকার গঠন করবে? লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২-এর ম্যাজিক সংখ্যা। বর্তমান চেহারার এনডিএ এতগুলো আসন পাবে বলে কোন সমীক্ষাই মনে করছে না। যা থেকে স্পষ্ট, পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী সরকার গঠন করতে হলে বিজেপিকে নতুন শরিকের সন্ধানে নামতেই হবে। সেক্ষেত্রে, বিজেপি যদি এনডিএ জোটের পুরনো শরিকদের ফিরিয়ে আনতে পারে এবং টিআরএস-এর মতো নতুন শরিকদের কাছে টানতে পারে, তা হলে মোদীর প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসা হয়তো কঠিন হবে না। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনের পরে সরকার গঠনে আঞ্চলিক দলগুলোর ভূমিকা যে বিশেষ গুরুত্ব পাবে- সেটা এক প্রকার নিশ্চিত।

No comments

Powered by Blogger.