সহস্রাধিক ইসলামী এনজিওর কাজ চলছে অবৈধভাবে- জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ যোগাচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখার পরামর্শ আইএমএফের by শফিকুল ইসলাম জীবন

সরকারের চোখ এড়িয়ে বেআইনী আর্থিক কর্মকা- চালাচ্ছে সহস্রাধিক ইসলামী এনজিও। এরা জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থের যোগান দিচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা রয়েছে। এদের মধ্যে মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটিতে নিবন্ধিত আছে মাত্র ৪০০টি সংস্থা। বাকি সংস্থাগুলো এখনও রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেনি। ফলে এ সব এনজিওর ওপর সরকারী কোন সংস্থার নজরদারি নেই। বাংলাদেশের সমগ্র আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে গেছে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার বেপরোয়া কর্মকান্ডেও। অচিরে হুন্ডি ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন সংঘটনের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণ করারও তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ।
২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪ হাজার ২০০টি ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা রয়েছে। ২০০২ সালে এদের সংখ্যা ছিল ৬২৪টি। ২০০৮ সালে ক্ষুদ্র ঋণ দানকারী সংস্থাগুলোর অধীনে ছিল জিডিপির তিন শতাংশ অর্থ ১৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০০২ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ কিংবা ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। বিগত বিএনপি সরকারের আমলেই সিংহভাগ ুদ্র ঋণ সংস্থার লাইসেন্স দেয়া হয়। স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী লাইসেন্সগুলো ইসু্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর আমলে গড়ে ওঠা খুবই কম সংখ্যক সংস্থাই এমআরএতে নিবন্ধিত হয়েছে। ফলে বাকি এনজিওগুলোর অর্থের উৎস ও লেনদেন সম্পর্কে সরকারের কোন সংস্থার কাছেই পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এরা গ্রামাঞ্চলে ইসলামভিত্তিক রাজনীতি প্রসার, জঙ্গী ও সন্ত্রাস সংঘটনে অর্থায়ন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন এমনকি প্রত্যনত্ম গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কয়েক হাজার এনজিও। এদের বড় একটি অংশ সরাসরি ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নামের আগে ইসলাম ব্যবহার করছে অনেকে। এমআরএর নজরদারির পাশ কাটিয়ে এরা জঙ্গী ও সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের বেআইনী অর্থায়নে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা জরম্নরী হয়ে পড়েছে। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল ক্ষুদ্র ঋণ কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত এনজিওগুলোকে দ্রম্নত নজরদারির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। যার বড় একটি অংশ বিগত বিএনপি সরকারের স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মুজাহিদের আশীর্বাদপুষ্ট। তাঁর হাতেই দেয়া হয় অসংখ্য এনজিওর লাইসেন্স। ওই সব এনজিওগুলো এখন কোথায় কীভাবে আর্থিক কর্মকা- পরিচালনা করছে_তা মনিটরিং করা একানত্ম প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত ঋণ, আমানত গ্রহণ এবং সম্পদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরম্নরী হয়ে পড়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের নামে হুন্ডি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে বিভিন্ন মহলে আশঙ্কা রয়েছে। এ সব এনজিও নজরদারিতে না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আনত্মর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
আইএমএফের 'বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ওপর চালানো এক সমীায়' অভিযোগ করা হয়েছে, বাংলাদেশে কয়েক হাজার ুদ্র ঋণ সংস্থা রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৪০০টি সংস্থা মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটিতে নিবন্ধিত। বাকি এনজিওগুলো এখনও এমআরএর খাতায় নাম লেখায়নি। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেসরকারী সংস্থাগুলোর একমাত্র তদারককারী সংস্থা হিসেবে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। অসংখ্য ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা সরাসরি জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করছে। তবে জনগণের স্বার্থ রায় এদের কাছ থেকে কোন জামানত গ্রহণ করা হয় না। ফলে জনগণের অর্থ সম্পদ আত্মসাত করার ঘটনা ঘটছে। আর্থিক খাতের একমাত্র তদারক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এরা কোন লাইসেন্স গ্রহণ করেনি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো জনগণের আমানত গ্রহণ করার কারণে তাদের আমানতের নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবেই সংরণ করতে হয়। ফলে ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের স্বার্থ রায় সচেষ্ট থাকে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলো কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে একমাত্র গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো তদারক ও পরিচালনার ক্ষেত্রে এমআরএর পর্যাপ্ত শক্তি ও প্রশিতি লোকবল নেই। আইএমএফ বলেছে, যদিও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম এখনও সীমিত তার পরও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন ুদ্র ঋণ ইউনিট খুলে একই কার্যক্রম চালাতে শুরম্ন করেছে। ফলে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের তদারক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারী ও বিদেশী ৪৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রায় সাত হাজার শাখা, ২৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কিছু অফশোর ব্যাংকিং কর্মকা- এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী কিছু মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির কার্যক্রমের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পাশাপাশি দেশে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক ুদ্র ঋণ দানকারী সংস্থা। এদের মধ্যে চার শ'টি সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে এমআরএর সামান্য ধারণা থাকলেও বাকি সংস্থাগুলোর কোন হিসাব নেই। তদারকির বাইরে থাকা ুদ্র ঋণ সংস্থাগুলোর অর্থের উৎসের ওপর কড়া নজরদারি চালানো হলে দেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।
জঙ্গী ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও হুন্ডি দমনের ল্যে সরকার ২০০২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর ২০০৮ সালে এই আইনটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাস বিরোধী অধ্যাদেশ জারি করে। জাতিসংঘের সন্ত্রাসী অর্থায়ন কনভেনশন এই অধ্যাদেশকে সমর্থন করে।

No comments

Powered by Blogger.