একজন কসাই কাদের ও বাংলার বিদ্রোহ by আবদুল মান্নান

১৯৬৮ সালে যখন পাকিস্তানের লৌহমানব জেনারেল আইয়ুব খান তার দেশ শাসনের দশ বছর পূর্তির যোগার যন্তর শুরু করে তখন রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলছিল।
একই সাথে পূর্ব বাংলার ছাত্রসমাজ শুরু করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। নেতৃত্ব দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং শেখ মুজিবকে জেল হতে মুক্ত করা। এরই মধ্যে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান আর ২৪ জানুয়ারি হরতাল চলাকালে ছাত্র মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণীর ছাত্র কিশোর মতিউর রহমান। ১৫ ফেব্রুয়ারি সেনানিবাসের সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক। এ ছাড়াও ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জেলায় আরো কয়েকজন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক-জনতা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এই কয়েকটি মৃত্যু এই আন্দোলনকে বেগবান করে এবং ছাত্রদের সূচিত আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই গণঅভ্যুত্থানে ভেসে যায় পাকিস্তানের লৌহমানব আইয়ুব খান। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান এক বেতার ভাষণের মাধ্যমে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং দেশে সামরিক আইন জারি করা হয়। ১৯৬৯-এর গণআন্দোলন সফল হয়েছিল কয়েকজন অকুতোভয় তরুণ কিশোর বাঙালীর রক্তদানের কারণে। দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর পর বাংলাদেশের মানুষ এখন আর একটি গণঅভ্যুত্থান দেখছে জামায়াতে ইসলামী নামের একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এবং অবাক করার বিষয় হচ্ছে তার সূত্রপাত হয়েছে একজন মানুষ তার একাত্তরে কৃত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য প্রাপ্য শাস্তি মৃত্যুদন্ড না পাওয়ার কারণে। এই ব্যক্তিটি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা যাকে সবাই কসাই কাদের নামে একাত্তরে চিনত কারণ তখন তার পেশাই ছিল মানুষ খুন, ধর্ষণ আর গণহত্যা। সেই কাদের মোল্লা এবং তার মতো যারাই একাত্তরে মানবতাবিরোধী আর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ছিল তাদের বিচারের দাবি বাংলাদেশের জন্মলগ্ন হতেই হয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে দালাল আইন নামে একটি আইন করে এদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করেছিলেন কিন্তু তার নির্মম মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর জেনারেল জিয়া সেই আইন বাতিল করে সকল সাজাপ্রাপ্তদের মুক্ত করে দেন যাদের মধ্যে কাদের মোল্লাও ছিল। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর আগে ১৯৭৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে গিয়েছিলেন কিন্তু কোন সরকারই ২০১০ সালের আগে সেই আইন ব্যবহার করে একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রয়োজন মনে করেনি। অনেকটা জনগণের দাবির মুখে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে সরকার গঠন করলে এই ঘাতকদের বিচার কাজ শুরু করবে বলে অঙ্গীকার করে। কিছুটা দেরিতে হলেও ২০১০ সালে এই বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য সরকার ১৯৭৩ সালের আইনের অধীনে প্রথমে একটি এবং পরে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এবং কাদের মোল্লা গংদের বিচার কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে একজন অভিযুক্ত, বাচ্চু রাজাকারের বিচারকার্য শেষ করে ট্রাইব্যুনাল তাকে প্রত্যাশা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে যদিও ইতোমধ্যে বাচ্চু রাজাকার পুলিশের গাফিলতির কারণে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরের রায়টি ছিল কসাই কাদেরের এবং যেহেতু তার অপরাধের মাত্রা বাচ্চু রাজাকারের অপরাধের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সেহেতু দেশের মানুষ এটা প্রত্যাশা করেছিল কসাই কাদেরের শাস্তি অবধারিতভাবে মৃত্যুদ-ই হচ্ছে এবং তার নিজ দলও তাই আশা করেছিল। জামায়াত রায় ঘোষণার আটচল্লিশ ঘণ্টা পূর্বে ঘোষণা করেছিল কসাই কাদেরের কিছু হলে তারা দেশে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেবে। না তেমন কিছু হয়নি। বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে বলেছে, ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত এবং এই পাঁচটি হচ্ছে হত্যা, গণহত্যা আর ধর্ষণ। এর আগে একই অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ- হয়েছিল। কসাই কাদেরেরও তেমনটি হবে সেটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু হলো যাবজ্জীবন। সকলে হতবাক, এমনকী কসাই নিজেও। আদালতের ভিতরেই আল্লাহু আকবর বলে বিজয়ের চিহ্ন ‘ভি’ দেখিয়ে বিচারকদের এক প্রস্থ গালিগালাজ করে একটি অর্থবহ হাসি দিলেন। ভাবটা এমন যাবজ্জীবন তা আর এমন কী। আমরা আবার ক্ষমতায় আসলে সেটা তো রাষ্ট্রপতি তাকে দেওয়া ক্ষমতা বলে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে গণ্য করে মওকুফ করে দেবেন। আর চাই কী আবার দলীয় টিকেটে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী-মিনিস্টারও হয়ে যেতে পারি। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে তেমনটি ঘটা বিচিত্র কিছু নয়।
যে কসাই কাদেরের সাজা হওয়ার কথা মৃত্যুদ- তা যদি না হয় তা হলে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী জনগণ কেন মেনে নেবেন? তাদের প্রথম আক্রোশটা গিয়ে পড়ল সরকার তথা আওয়ামী লীগের ওপর যদিও রায়টি আওয়ামী লীগ নয় একটি ট্রাইব্যুনাল দিয়েছে। আর দল হিসেবে আওয়ামী লীগও মাঝে মধ্যে এমন সব মারাত্মক কৌশলগত ভুল করে যার ফলে তার সমালোচকরা অনেক সময় মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে যায়। যে জামায়াত সম্পর্কে ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বললেন যেখানেই জামায়াত সেখানেই প্রতিরোধ সে জামায়াতকে তার পুলিশ প্রশাসন কসাই কাদেরের রায় ঘোষণা হওয়ার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে রাজধানীর ব্যস্ততম মতিঝিল এলাকার সকল কর্মকা- স্থবির করে দিয়ে কয়েক হাজার সন্ত্রাসী ক্যাডার আর কর্মী নিয়ে নির্বিঘেœ জনসভা করতে দিল। একই ধরনের তারা সভা করেছে দেশের অন্যান্য শহরেও। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিভিন্ন স্থানে যেই ক্যাডাররা রাষ্ট্রের পুলিশকে চব্বিশ ঘণ্টা আগে বেধড়ক পিঠিয়েছে সেই ক্যাডাররাই আবার সেই পুলিশকে রজনীগন্ধা ফুল হাতে তুলে দিয়েছে। আবার পুলিশ সদস্যরাও সেই ফুল হাসি মুখে হাতে তুলে নিয়েছে। কোন কোন জায়গায় শিবির ক্যাডাররা সেøাগান দিয়েছে ‘শিবির পুলিশ ভাই ভাই সরকারের রক্ষা নাই।’ মতিঝিলে আবার জামায়াত নেতারা সরকারকে তো একহাত নিয়েছেনই তার ওপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তুমুল সমালোচনা করেছেন এবং ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছে। তাদের এই জমায়েত শেষে তারা তাদের পূর্বের কর্মসূচী অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে পুলিশ পেটানেরা কাজে লেগে যায়। এই প্রসঙ্গে আবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছেন এই প্রজন্মের জামায়াত-শিবির নিজামী প্রজন্মের চাইতে অনেক বেশি ভদ্র। যারা জামায়াত-শিবিরকে চেনেনি তারা তাদের জন্মদাতা পিতাকে চেনেনি। একটি বিষধর সাপকে বিশ্বাস করা যায় জামায়াত-শিবিরকে নয়। সরকারী লোকজনের এতসব ঘটনা আর কথাবার্তা শুনে তো মানুষ বিভ্রান্ত হবেনই। এই সবের প্রেক্ষাপটে যখন কসাই কাদের প্রত্যাশিত মৃত্যুদ- হতে রেহায় পায় তাহলে তো সত্য হোক আর মিথ্যা হোক সরকারই সমালোচিত হবে। তবে এটাও তো ভুললে চলবে না যে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে বর্তমান সরকার এবং বিচারকার্যটিও শুরু হয়েছে এই সরকারের আমলে। আর এটাও তো সত্য একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বর্তমান সরকার না করলে আর কোন সরকার করবে না। আর সার্বিক প্রেক্ষাপটে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বর্তমানে যে পর্যায়ে আছে সেখান হতে সরকারের বের হয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। আর জনগণকে ফাঁকি দিয়ে সরকার তলে তলে কারও সাথে আঁতাত করার দুঃসাহস দেখালে তা হবে সরকারের জন্য চরম আত্মঘাতী পদক্ষেপ। সুতরাং বর্তমান সরকারের কাছে জনগণের যে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা তা তো অন্য কোন সরকারের কাছে থাকবে না। সুতরাং সরকারের কিছু অপরিণামদর্শী কর্মকা-ের জন্য কেন পুরো কর্মকা- প্রশ্নবিদ্ধ হবে?
কসাই কাদেরের রায় ঘোষণা হওয়ার পর সারা জাতি হত্যাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়েছে তা ঠিক কিন্তু এই রায় একটি অসাধারণ কাজ করেছে এবং তা হচ্ছে এই একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, ঠিক যেমনটি করেছিল ঊনসত্তর আর একাত্তরে। রায় ঘোষণার পরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ব্যতিক্রম শুধু বিএনপি ও তাদের আঠারো দলীয় মিত্ররা। বিএনপি কোন প্রতিক্রিয়া না করাটা বোধগম্য কারণ তাদের আঠারো দলীয় জোটে দল বলতে ওই যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলাম। বাকিরা সকলে হোন্ডা পার্টি। তারা মনে করে জামায়াতের সমর্থন ছাড়া তাদের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। তদুপরি এই জামায়াত যে বর্তমানে দেশে বুক ফুলিয়ে রাজনীতি করছে তার কারণ বিএনপির হাতে তাদের পুনর্জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর। তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াত মায়ের পেটের ভাই। বর্তমান সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তখন বেগম জিয়াসহ তাদের সকল নেতা-নেত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, এটি বিচারের নামে একটি প্রহসন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশে বিরোধী দলকে ঘায়েল করার জন্য এই প্রহসনের আয়োজন করা হয়েছে। তবে সারা জাতিকে যে ঘটনাটি হতবাক করেছে সেটি হচ্ছে কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধপরাধীর বিচারের রায় যেন ফাঁসির রায় হয় সেই দাবিতে একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মের সারা দেশে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এটির শুরু কসাই কাদেরের রায় ঘোষণার দিন ৫ ফেব্রুয়ারি হতে। একদল তরুণ প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি ব্যবহার করে প্রথমে স্বল্প সংখ্যক তরুণকে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে একত্রিত করে। তারপর তার ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়েতে শুক্রবার নাগাদ কয়েক লাখ মানুষের জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এই তরুণরা ছাড়াও এই সমাবেশে এসেছিল গৃহবধূ হতে শুরু করে শিশু সন্তান কোলে নিয়ে মায়েরা, এসেছিলেন সরকারী কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর উপাচার্যরা, সাংবাদিক আর সংস্কৃতিকর্মীর, যুদ্ধদিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে এসেছিলেন পড়ন্ত বয়সের মুক্তিযোদ্ধারা, সাংবাদিক, পেশাজীবী কেউ বাদ যাননি ঠিক যেমনটি ঘটেছিল একাত্তরের সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, এই শাহবাগ চত্বরের কয়েক শ’ গজ দূরে, তৎকালীন রমনা রেসকোর্স মাঠে, বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখান হতে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করছেলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরা কোন রাজনৈতক দলের জনসভায় টাকার বিনিময়ে ভাড়া খাটতে আসেননি। সকলে এসেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে, প্রাণের তাগিদে, একটি ইতিহাসের অংশ হতে। সব দেখেশুনে মনে হলো লাখো শহীদের এই বাংলায় আর একটি নব বিদ্রোহের সূচনা হচ্ছে এবং তা জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে। শুক্রবার যখন লাখো জনতা গগনবিদারী আওয়াজ তুলল ‘কসাই কাদেরসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই’ তখন বুঝতে পারি আমরা অনেকেই এই নতুন প্রজন্মকে এতদিন অবমূল্যায়ন করেছি, তাদের বুঝতে পারিনি। এই প্রজন্মই তো গত নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে দেশ পরিচালনার ভার দিয়েছিল এবং সেই শক্তি কিসের আশা বা প্রলোভনে এদের প্রত্যাশাকে পায়ে ঠেলে একাত্তরের ঘাতকদের সাথে আঁতাত করবে? কি বা তার প্রয়োজন? আমরা অনেকে এই প্রজন্মকে মনে করতাম এরা একটি শেখরবিহীন প্রজন্ম যারা নিজেদের ছাড়া দেশ বা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কোন চিন্তা করে না। কিন্তু সেই তরুণরাই জামায়াত-শিবির রাজাকারের বিরুদ্ধে ইস্পাত দৃঢ় অবস্থান নিয়ে দেশের এবং দেশের মানুষকে দেখিয়ে দিল, না দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতে নিরাপদ। তারাই আগামী দিনের দেশ এবং জাতীর অতন্দ্রপ্রহরী।
অনেকেরই প্রশ্ন এই আন্দোলনের শেষ গন্তব্য কোথায়? আপাতত এর গন্তব্য হওয়া উচিত প্রাথমিক পর্যায়ে যাতে সকল যুদ্ধপরাধীর বিচার কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা, প্রয়োজনে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা কারণ বর্তমান সরকার এই কাজটি সমাপ্ত না করলে অন্য কোন সরকার এসে তা করবে না। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা বাঞ্ছনীয় আর সেটি হচ্ছে এই আন্দোলনকে সামনে রেখে অনেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টিও চেষ্টা করবে তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকা আর সরকারের উচিত হবে তাদের কাজে-কর্মে সাধারণ মানুষের মনে এমন কোন সন্দেহের উদ্রেক না হয় যে সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে কোন ধরনের গেম খেলছে। তেমনিটি যদি হয় তা হলে ষোলোআনা ক্ষতি সরকারের অন্য কারও নয়। অনেক আইনবিদ মনে করেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে কিছু গলদ রয়ে গেছে যার সুযোগ অভিযুক্তরা নিতে পারে। তা যদি হয় তা হলে সরকারের উচিত সংসদের মাধ্যমে সেই আইনের সংশোধন করা।

৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক

No comments

Powered by Blogger.