এসিআর নিয়ে অনিয়ম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে by শওকত ওসমান রচি

সরকারি চাকরিজীবীদের ‘গোপনীয় অনুবেদন’ (এসিআর) নিয়ে অনিয়ম এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পৌঁছেছে। এ অনিয়মের ফলে দেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দেশের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে এসিআর নিয়ে এখন স্বেচ্ছাচারিতা চরমে।
পদোন্নতি বা ভালো পোস্টিং পেতে দলীয় আস্থাবানেরা এসিআর পেয়ে যাচ্ছেন। পাচ্ছেন ভালো মন্তব্য। অভিযোগ উঠেছে, এ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সরকারের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মচারীরা। অভিযোগ উঠেছে, বিধি অমান্য করেই বিভিন্ন মিশন ও দূতাবাসে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসিআর লিখছেন। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং গত ২৯ জানুয়ারি এ ব্যাপারে অনুশাসন জারি করেছে। বলা হয়েছে, যেসব মিশন বা দূতাবাসে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স দায়িত্বে থাকবেন তারা কোনো এসিআর লিখবেন না। প্রকৃত অনুবেদনকারী কর্মকর্তা ও প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা ছাড়া নিজ পছন্দমতো অন্য কোনো অনুবেদনকারী কর্মকর্তা ও প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা থেকে এসিআর গ্রহণের কোনো বিষয় মিশন বা দূতাবাস লক্ষ করলে বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বলা হয়েছে, কেবল পররাষ্ট্র ক্যাডার ছাড়া অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের এসিআর মিশন প্রধান বা দূতাবাস প্রধান অনুবেদনকারী কর্মকর্তা হিসেবে স্বাক্ষর করবেন। প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা হবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব। বর্তমানে এ দুটো কাজই দূতাবাসের পছন্দের কর্মকর্তা করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওই দিকে সরকারি চাকরিজীবীদের ‘গোপনীয় অনুবেদন’ (এসিআর) ফরম যথাযথভাবে পূরণ বা প্রতিস্বাক্ষরকরণ হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে এ অনুবেদনের কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে না। এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গোপনীয় অনুবেদন ফরম পূরণ, অনুস্বাক্ষরসহ লিখন, প্রতিস্বাক্ষরকরণ, বিরূপ মন্তব্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণসংক্রান্ত বিষয়ে বিদ্যমান পরিপত্র ও নির্দেশগুলো সমন্বিত করে এ সংক্রান্ত অনুশাসনমালা যথাযথভাবে পালনে আবার পরিপত্র জারি করা হয়েছে। তাতেও কোনো ফল না হওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কতা জারি করে ২৪ ডিসেম্বর আবারো কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ এ নির্দেশে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে বিলম্বে গোপনীয় অনুবেদন দাখিল, লিখনসহ অনুস্বাক্ষর, প্রতিস্বাক্ষরের প্রবণতাসহ নানা ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে অনুবেদনাধীন কর্মকর্তাদের ডেসিয়ার সংরক্ষণ, চাকরি স্থায়ীকরণ, বিভিন্ন পদে পদায়ন পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেড প্রদান, বৈদেশিক নিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণকার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং এতে অনেক ক্ষেত্রে অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। উপরন্তু এটা শৃঙ্খলাপরিপন্থী। সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অধীন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীনে কর্মরত সংস্থা প্রধানকে তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের গোপনীয় অনুবেদন অনুস্বাক্ষরপূর্বক প্রতিস্বাক্ষরের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবের কাছে পাঠাতে হবে। বলা হয়েছে, সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত সদস্যরা তাদের সরাসরি অধীনস্থ কর্মকর্তাদের গোপনীয় অনুবেদন অনুস্বাক্ষরের পাশাপাশি প্রতিস্বাক্ষরও করবেন এবং স্বাভাবিক নিয়মে দায়িত্ব পালন শেষে পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত অধীনস্থদের গোপনীয় অনুবেদন অনুস্বাক্ষর বা প্রতিস্বাক্ষর করতে পারবেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, অন্যান্য কমিশন বা সংস্থার ক্ষেত্রে যেখানে কমিশন বা সংস্থার প্রধান সচিব পদমর্যাদার সে ক্ষেত্রে তৎকর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত অধীনস্থদের গোপনীয় অনুবেদন প্রতিস্বাক্ষরের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা উপদেষ্টা বা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করতে হবে। কমিশনের প্রধান সচিব পদমর্যাদার নিচের হলে তৎকর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত অধীনস্থদের গোপনীয় অনুবেদন প্রতিস্বাক্ষরের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের কাছে উপস্থাপন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.