হরতাল সফল করার পরিকল্পনায় পার হয় প্রতিটি দিন

১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রভাষার সংগ্রাম শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি মেনে নেয়ার ব্যাপারে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে সংগ্রাম পরিষদের চুক্তি হয়। ফলে দীর্ঘ সাড়ে চার বছর স্তিমিত থাকে ভাষা আন্দোলন।
কিন্তু ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ঢাকায় আসেন এবং ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে এক ভাষণে একমাত্র উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হবে মর্মে ঘোষণা দেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে একই ঘোষণা দিলে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের অনেক আলোচনা, সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও চার বছরের মাথায় আবার একই ঘোষণার পুনরাবৃত্তিতে উষ্মা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন মানুষের মধ্যে। তারা বুঝতে পারে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবি উপেক্ষিত হতে যাচ্ছে। উর্দুকেই এ অঞ্চলসহ সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আয়োজন চলছে। ফলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ অঞ্চলের সব সচেতন মহল সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই বাংলা ভাষার দাবি একটি আন্দোলন আকারে দানা বাঁধতে থাকে । আন্দোলনকে একটি পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।

৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং ২১ ফেব্রুয়ারি হরতালের ঘোষণা দেয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ । সরকার ২১ ফেব্রুয়ারির হরতাল বানচালের জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। ভাষা আন্দোলনরত সব সংগঠনের প্রতিটা দিন অতিবাহিত হতে থাকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে। এ দিকে অনেক আগে থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কলম ধরেন কবি ফররুখ আহমদ, কাজী মোতাহার হোসেন ও আবুল মনসুর আহমদের মতো প্রতিথযশা সাহিত্যিকেরা। তাদের লেখায় বাংলার পক্ষে জনমত দানা বাঁধতে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.