এ পাশবিকতা কতদিন!

প্রতিদিন পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার নানা খবর। এসব নিষ্ঠুরতার ধরন যেমন ভিন্ন, তেমনি কারণ আর প্রেক্ষাপটও বহুমাত্রিক। অর্থ-স্বার্থের দ্বন্দ্বে হত্যা-খুনখারাবি, এ্যাসিড নিক্ষেপ,
যৌতুকের দায়ে গৃহবধূ খুন, হরতালের নামে খুন, ভাংচুর আর জ্বালাও-পোড়াও এসব বর্বর ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটে চলেছে। এসব ঘটনার মধ্যে হালে যে ঘটনা ব্যাপকভাবে, ভয়াবহ মাত্রায় বিস্তৃত হয়ে পড়েছে তা হলো ধর্ষণ, ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা। আর এই পাশবিকতার শিকার হচ্ছে যুবতী, তরুণী, কিশোরী, গৃহবধূ এমনকি শিশু-বালিকারা পর্যন্ত। কিছু মানুষ কতটা পশু হলে এমন কাজ করতে পারে, সাধারণভাবে তা কল্পনাই করা যায় না। দিল্লীতে জ্যোতি নামের এক মেডিক্যাল ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সারা ভারতে যে বিপুল গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছিল, তা থেকেই বোঝা যায় এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে মানুষ কতটা সোচ্চার। আমাদের দেশেও ধর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে। দৈনিক জনকণ্ঠসহ সহযোগী দৈনিকগুলো প্রতিদিন এসব খবর প্রকাশ করছে। এসব পাশবিক ঘটনার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জনকণ্ঠ শুক্রবার এ সংক্রান্ত কয়েকটি প্রতিবেদন ছেপেছে একই স্থানে। এসব রিপোর্টের শিরোনাম এ রকম : গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা, খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষিত ॥ দোষীদের গ্রেফতার দাবি, শিশু ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার, ফরিদপুরে ধর্ষক আটক।
ধর্ষণের মতো এমন জঘন্য পাশবিক কাজ যারা করছে, তারা মানুষের চেহারা ও অবয়বধারী। শুধু নীচুতলার নয়, সমাজের উঁচুতলায়ও অবস্থান করে এদের কেউ কেউ; বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকের নামও ইতোপূর্বে দেখা গেছে ধর্ষকের তালিকায়। অন্য পেশার ভদ্রবেশীদেরও মাঝে মাঝে দেখা যায় এই তালিকায়। সমাজ-গবেষক ও মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ধর্ষণের মতো পাশবিক কুকর্ম এক ধরনের মানসিক বিকৃতির ফলশ্রুতি। মানুষের মানবিক বোধ যখন হ্রাস পায় বা লুপ্ত হয়ে যায়, তখন তার ভেতরকার নেতিবাচক প্রবৃত্তি তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এ অবস্থায় সেই মানবাকার অমানুষের পক্ষে যে কোন জঘন্য কাজ করা সম্ভব; খুন-ধর্ষণসহ যাবতীয় মন্দকাজ সবই করা সম্ভব।
তাহলে ধর্ষণ নামক এই ভয়াবহ মহামারী থেকে উত্তরণের উপায় কি? এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রবল সামাজিক সচেতনতা ও ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টি করা খুবই জরুরী। সেই সঙ্গে প্রয়োজন মানবতা ও কল্যাণমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এবং সুস্থ সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ। আর ধর্ষণবিরোধী আইনকে করতে হবে কঠোর; তার প্রয়োগকেও করতে হবে নিশ্চিত ও প্রভাবমুক্ত। সরকার এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এটাই সবার প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.