নিউইয়র্ক টাইমসের by সেফ হেভেন

সাউথপোর্ট শহরের ছোট্ট নর্থ কেরোলিনায় তরুণী কেটি যখন হাজির হয় তখন থেকেই তার অতীত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। সুন্দরী কেটি কোন ব্যক্তিগত সম্পর্কে না জড়ানোর প্রতি ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কিন্তু ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা তাকে দুটি অনিচ্ছুক সম্পর্কের দিকে ঠেলে দেয়। এলেক্স একজন বিপতœীক ও দুই বাচ্চার বাবা। দোকান মালিক ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী এলেক্স ঘটনাক্রমে কেটির জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়ে। কেটির জীবনের সাথে জড়িয়ে যায় স্পষ্টবাদী নিসঙ্গ প্রতিবেশী জো। কেটির মনের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ধীরে ধীরে খুলে যেতে থাকে এবং সে ধীরে ধীরে এলেক্স ও তার পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে যেতে থাকে। কেটি ধীরে ধীরে ভালবাসার মায়াজালে যত আবদ্ধ হতে থাকে ততই তার মনের গহীনে পুরনো কষ্টদায়ক অতীত নাড়া দিয়ে যায়। ভয়ঙ্কর কষ্টদায়ক যে অতীতকে পেছনে ফেলার জন্য সে দেশত্যাগ করেছে সেই অতীতই তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে এই সাউথপোর্টেও। কেটি জীবনে শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়। জো-এর নিঃস্বার্থ ভালবাসা ও সমর্থন কেটির মনের জার ফিরিয়ে আনে। কেটি বুঝতে পারে জীবনের সকল অন্ধকারের মাঝেই ভালবাসাই হচ্ছে সত্যিকারের স্বর্গ।
নিকোলাস স্পার্ক্সের সেফ হেভেন বইটি পুরোদমে একটি লাভস্টোরি। প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। কষ্টদায়ক অতীত থাকে। এই কষ্টদায়ক অতীত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভালবাসার বিকল্প কিছুই নেই। ভালবাসার বন্ধনই মানুষের জীবনে স্বর্গসুখের বার্তা বয়ে নিয়ে আসতে পারে। বইটিতে কেটির জীবনের বৈচিত্র্যময় ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এই সত্যকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

হোপলেস
মাঝে মাঝে মিথ্যাকে বিশ্বাস করার চেয়ে সত্য আবিষ্কার মানুষকে বেশি হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। এই মর্মকথা সতের বছরের তরুণী স্কাই উপলব্ধি করতে পারল যখন সে ডিন হোল্ডারের দেখা পেল। এই ব্যক্তিটির বিভিন্ন কুকর্মের জন্য কুখ্যাতির সাথে সাথে স্কাইয়ের সরলতা তাকে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করল। হোল্ডারের প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা স্কাইকে পুরনো যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যে অতীত স্কাই প্রাণপণে ভুলে যেতে চায় সেই অতীতগুলোর কাছেই হোল্ডার স্কাইকে নিয়ে যায়। স্কাই এই সব কিছু বিবেচনা করে ডিন হোল্ডারের কাছ থেকে দূরে যেতে চায়। কিন্তু হোল্ডার স্কাইকে এজন্য শিক্ষা দিতে চায়। স্কাই হোল্ডারকে ঘৃণা করলেও হঠাৎ করে স্কাই বুঝতে পারে সবকিছুর জন্য হোল্ডার দায়ী নয়। হোল্ডারের এ ধরনের খারাপ ব্যবহারের পেছনেও গোপন কিছু কথা আছে। যখন হোল্ডারের সেই গোপন কথাগুলো প্রকাশিত হলো তখন থেকে চিরতরের জন্য স্কাইয়ের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। এই বইটিতে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তিকে ভালবাসার কথা যেমন প্রকাশ করা হয়েছে তেমনি ব্যক্ত হয়েছে আবেগী পরিপক্বতা। আলোর পেছনে যেমন অন্ধকার আছে তেমনি অন্ধকারের পেছনেও আলো আছে। এই কথাটিই মূলত স্কাই ও হোল্ডারের জীবনপ্রবাহের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয়েছে। কিছু কিছু ঘটনা মানুষকে যেমন হতাশাগ্রস্ত করে তোলে তেমনি আবার কিছু বিষয় মানুষের জীবনে নিয়ে আসে আমূল পরিবর্তন। এই সারকথার ওপর ভিত্তি করেই কলিন হুভার রচনা করেছেন হোপলেস বইটি।

আ মেমোরি অফলাইট
আমেরিকান লেখক রবার্ট জর্জন এবং ব্রান্ডন সেন্ডারসনের ফ্যান্টাসি সিরিজ দ্য হুইল অব টাইমের ১৪তম এবং সর্বশেষ বই এ্যা মেমোরি অব লাইট। এই বইটি অসমাপ্ত রেখে জর্জন মারা গেলে বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করে সেন্ডারসন। এই বইটি তিনটি খ-ে প্রকাশিত হয়। টারমন গেইডনদের জন্য প্রস্তুতিস্বরূপ ওয়েস্টল্যান্ডে সৈন্যদের সমবেত করা হয়। অন্যদিকে ম্যাট্রিম কেথন, কুইন ইলায়ান ট্রেক্যান্ড এবং ইলুমিনেটর এলুদ্রা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পৃথিবীর প্রথম কামান দখল করার জন্য দ্য ফরসেকেন ডেমান্ড্রেড ক্যামেলন শহরের দিকে ট্রলক্সের নির্দেশে যাত্রা শুরু করে। টালমাসন ডেলোভাইন্ডি এবং দ্য ব্যান্ড অব দি রেড হ্যান্ড পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে শহরের বাইরে নিরাপদে কামানটিকে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। কিন্তু তাদের হাত থেকে ক্যামেলন শহরটি হাতছাড়া হয়ে যায়। সারা বিশ্বের সব জায়গা থেকে আলো হাতে নিয়ে সব মানুষ যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে আসে। এই যুদ্ধ সকল কিছুর পরিসমাপ্তির জন্য। ব্যান্ড অল থরের ভূমিকায় থাকে দ্য ড্রাগন রিবর্ন যে ফিল্ড অব মেরিলরে পশ্চিমের সকল জাতি-গোষ্ঠীর সভা আহ্বান করে, কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে টারমন গেইডনের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। যুদ্ধ শুরু হয় ক্ষমতার জন্য, অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য। যুদ্ধকেন্দ্রিক এই বইটি পাঠকের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।

দ্য কলোম্বাস এ্যাফেয়ার
পারিবারিক গোপনীয়তা, নির্মম সত্য এবং আমেরিকার উন্মক্ত অস্ত্রের ঝনঝনানি সবকিছুই গেঁথে আছে একটা মাত্র সূত্রের সম্ভাবনায়। আমরা যেভাবে জানি, আমেরিকা যেভাবে আবিষ্কার হয়েছেÑআসলেই কি তা মিথ্যা? ১৪৯২-তে কলম্বাস যখন আমেরিকায় পদচিহ্ন ফেলে, এর মাঝে কি কোন গোপনীয়তা বা রহস্য ছিল? যদি পাঁচ শ’ বছর আগের সেই গোপনীয় অংশ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই পৃথিবীর সামনে আসে তখন কি দাঁড়াবে? পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী সাংবাদিক টম সাগান বিভিন্ন তীর্যক প্রবন্ধ লিখেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে যখন একটি অজানা সত্য সামনে চলে এলো তখনই দেখা গেল বিপত্তি। তার পেশাগত সুখ্যাতি প্রায় হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু কিভাবে সে এখান থেকে মুক্তি পাবে? এমনই সংঘাতপূর্ণ সময়ে সে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় এক আন্তর্জাতিক বিতর্কিত বিষয়ে। যা শুধু ওয়াশিংটন ডিসিরই মাথাব্যথার কারণ নয়, এর সাথে জেরুজালেম ও সম্পৃক্ত। এমনই এক ইঁদুর-বিড়াল খেলায় সাগানকে বাধ্য করা হয় ভিয়েনা, প্রাগ এবং পরবর্তীতে জ্যামাইকার ব্লু মাউন্টেন্সের দিকে ছুটে যেতে। যা তাকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়Ñকে বন্ধু কে শত্রু। এই রকমই এক ঘটনায় এগিয়ে গেছে এই বইটির কাহিনীÑযা শুধু চমকপ্রদই নয় অনেকটাই জীবন সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনার ঘোরপাকে হারিয়ে যায়। স্টিভ বেরির দ্য কলম্বাস এ্যাফেয়ার বইটিতে আমেরিকা আবিষ্কারে কলম্বাসের কাহিনীর সাথে সাংবাদিক সাগানকে তুলে ধরা হয় সমসাময়িক রাজনৈতিক ডামাডোলে।
মো. আরিফুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.