আরেক বিপ্লবের পথে মিসর? by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া

আবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। অব্যাহত সহিংসতা বন্ধে শেষ পর্যন্ত সুয়েজ, ইসমাইলিয়া ও পোর্ট সৈয়দ এই তিন শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো কড়া ব্যবস্থা নিতে হয়েছে তাঁকে।
মিসরীয় বিপ্লবের দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল কায়রোসহ দেশের কয়েকটি শহর। তার ওপর ফুটবল দাঙ্গা মামলার রায় ক্ষোভের আগুনে নতুন করে ঘি ঢালে। অনেকে বলছেন, কায়রোর আল-আহলি ক্লাবের সমর্থকদের সঙ্গে (যারা পরিচিত ‘আল্ট্রা’ নামে) আরও সংঘাত এড়াতেই হস্তক্ষেপ করলেন মুরসি।
খেলা নিয়ে দাঙ্গায় জড়িত থাকায় স্থানীয় ফুটবল ক্লাব আল-মাসরির ২১ জন সমর্থককে আদালত মৃত্যুদণ্ড দিলে গত শনিবার পোর্ট সৈয়দে সহিংসতা শুরু হয়। প্রায় এক বছর আগের ওই দাঙ্গায় ৭৪ জন নিহত হয়েছিল। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ছিল খেলা দেখতে কায়রো থেকে আসা আল-আহলির সমর্থক। এখনো অনেকে ধারণা করেন, আল-আহলির সমর্থকদের শাস্তি দিতেই মোবারকের অনুগত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা ওই দাঙ্গা বাধানোর ব্যবস্থা করেন। কারণ, তাহরির স্কয়ারে হোসনি মোবারকবিরোধী বিক্ষোভের অগ্রভাগে ছিল আল-আহলি সমর্থকেরা। পোর্ট সৈয়দে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে মিলে উত্তেজিত আল-মাসরি সমর্থক ও জনতা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। হামলা করা হয় বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে। পুলিশ কুলিয়ে উঠতে না পারলে নামানো হয় সেনা। কয়েকদিনের বিক্ষোভ-সহিংসতায় ৫০ জনের বেশি প্রাণহারান।
ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থকসহ উদার মিসরীয়দের অনেকেই ইতিমধ্যে নানা কারণে প্রেসিডেন্ট মুরসির ওপর বীতশ্রদ্ধ। সাম্প্রতিক সহিংসতা তাদের হতাশা ও ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমর মোবারক নামের পোর্ট সৈয়দের এক বাসিন্দার অভিযোগ, হোসনি মোবারকের সময় থেকে আসলে বদলায়নি কিছুই। তাঁর সঙ্গে মুরসির কোনো পার্থক্য নেই।
বিপ্লবের পর থেকে দেশ পরিচালনায় প্রেসিডেন্ট মুরসির ভূমিকা নিয়ে মিসরে মানুষের মধ্যে রয়েছে মিশ্র অভিমত। অনেক সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট বিপ্লবের মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। দলীয় আদর্শের চিন্তা থেকে দেশকে নিয়ে গেছেন ইসলামীকরণের পথে। বিপ্লবের পর শুধু তাঁর নিজের দলের লোকের উন্নতি হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে ডিক্রির মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা নিজের হাতে নেওয়ার সময় খুবই সমালোচিত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। পরে সেসব ডিক্রির অনেকগুলোই তিনি বাতিল করেন। তবে মুরসি-সমর্থকদের ভাষ্য, বিপ্লব-পরবর্তী মিসরে শক্ত হাতে দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই ক্ষমতা তাঁর দরকার ছিল। তা ছাড়া অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন। সব মিলিয়ে মিসরীয় সমাজ এখন দ্বিধাবিভক্ত।
তবে মুরসির কার্যক্রম সমর্থন করা নিয়ে যে ভিন্নমতই থাকুক, এ বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি মিসর এখন গভীর সংকটে। মুরসির আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধী দলগুলোর জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্ট। বস্তুত, আলোচনার সাফল্য নিয়ে বিরোধীরা বিশেষ আশাবাদী নয়। অন্যদিকে রাজপথে বিক্ষোভও সহজে থামছে না। এ পরিস্থিতিতে মিসর আরেকটি বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কি না সে প্রশ্ন অনেকেরই।

No comments

Powered by Blogger.