নয়া অর্ডিন্যান্স ১৬তেই- প্রাপ্তবয়স্ক ধরবে ধর্ষককে

বাজেট অধিবেশনের আগেই অর্ডিন্যান্স জারি করে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন কড়া করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অপরাধে বয়স ১৬ বছর হলেই অভিযুক্তকে প্রাপ্তবয়স্ক বলে মনে করার প্রস্তাব রয়েছে অর্ডিন্যান্সে।
মনমোহন সরকার মনে করছে, দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনায় আমজনতার মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা প্রশমিত করতে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন। বর্তমানে ফৌজদারি আইন সংশোধন সংক্রান্ত বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বাধীন কমিটি ফৌজদারি আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যে সংশোধনের সুপারিশ করেছে, তা-ও স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হচ্ছে। তবে স্থায়ী কমিটির সুপারিশ আসার পরে সে সব খতিয়ে দেখে বিলে পরিবর্তন করে সংসদে পাশ করাতে করাতে দেরি হয়ে যাবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভয়। তাই তার আগেই অর্ডিন্যান্স জারি করে কড়া আইনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ক্যাবিনেট নোট তৈরি করছে।
নর্থ ব্লক সূত্রের খবর, ধর্ষণে অভিযুক্তের নাবালকত্বের বয়সসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছরে নিয়ে আসার বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি একমত। রাজ্য পুলিশের ডিজিদের বৈঠকেও এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের ছ’জন অভিযুক্তের মধ্যে এক জন নিজেকে নাবালক বলে দাবি করেছিল। স্কুলের শংসাপত্র অনুযায়ী তার বয়স এখন ১৭ বছর ৬ মাস। জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডও ওই অভিযুক্তকে কিশোর বলেই রায় দিয়েছে। কিন্তু ২৩ বছরের তরুণীর উপর গণধর্ষণ এবং যৌন অত্যাচারে সে-ই সবথেকে নৃশংস ভূমিকা নিয়েছিল। বর্তমান আইন অনুযায়ী তার সর্বাধিক তিন বছরের সাজা হতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আগামী জুন মাসে তার বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখনই সে ছাড়া পেয়ে যেতে পারে, কারণ ১৮ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরে দোষী সাব্যস্ত হলেও তাকে অন্য কিশোরদের সঙ্গে সংশোধন আশ্রমে রাখা যাবে না। আবার তাকে নাবালক ধরে নিয়ে বিচার হয়েছে বলে নাবালক বিচার আইন (জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট) অনুযায়ী তাকে জেলে পাঠানোরও নিয়ম নেই।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বর্মা নিজেও চান অর্ডিন্যান্স এনে তাঁদের কমিটির সুপারিশগুলি দ্রুত কার্যকর করা হোক। তবে তাঁর কমিটি এই বয়সসীমা কমানোর পক্ষে রায় দেয়নি। কারণ, শিশু অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, যে কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে দোষীদের শোধরানোটাই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। বয়সসীমা কমিয়ে আনা হলে যে ধর্ষণ কমে যাবে, তার কোনও মানে নেই। এক জন কিশোর ১৮ বছরের আগেই অপরাধী হয়ে উঠলে তার দায় সমাজকেও নিতে হবে। বর্মা কমিটি এই যুক্তি মেনে নিলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কিন্তু দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি-দের মত মেনে নিয়ে বয়সসীমা কমানোর প্রস্তাবই করতে চাইছে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, বর্মা কমিটির পথে হেঁটে অর্ডিন্যান্সে ইভজিটিং, বিরক্ত করা, অনুসরণ করা, মহিলাদের ব্যক্তিগত অবস্থায় লুকিয়ে দেখার মতো অপরাধে এক বছর থেকে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান থাকবে। গণধর্ষণের অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডেরও ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া, যৌন নির্যাতনের সংজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করে তার আওতা বাড়ানো হবে।
সূত্রঃ আনন্দ বাজার

No comments

Powered by Blogger.