মনে পড়ে- আমার প্রিয় সিদ্দিকা দাদু

সিদ্দিকা কবীর আমার দাদুর বড় বোন। তাঁর নানা গল্প আমি দাদুর মুখে অনেক শুনেছি। সিদ্দিকা দাদু একজন রন্ধনশিল্পী, কিন্তু ছোটবেলায় তিনি তেমন রান্নাই নাকি জানতেন না। তা হলে কী হবে? তাঁর অনেক গুণ ছিল যে! যে কাজ করতেন খুব মন দিয়ে করতেন।
যেমন তিনি সাত বছর বয়সে কোরআন খতম করেছিলেন, ক্লাসে ফার্স্ট হতেন, বড় হয়ে অঙ্কের শিক্ষিকা হয়েছিলেন, আমেরিকায় গিয়ে ‘পুষ্টি’ নিয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি হোম ইকোনমিকস কলেজের প্রিন্সিপাল হয়েছিলেন। সিদ্দিকা দাদু খুব দয়ালু ছিলেন। সবার সঙ্গে নরম স্বরে কথা বলতেন, কখনো রাগ হতেন না, তাই সবাই তাঁকে পছন্দ করত।
সিদ্দিকা দাদু সব সময় রান্নার বিষয়ে ছোট-বড় সবার কাছে জানতে চাইতেন, এমনকি আমাকেও জিগ্যেস করতেন, ‘আরিশা প্যানকেকটা কীভাবে করেছ।’
তারপর আমার পদ্ধতিটা জেনে নিয়ে আরও কিছু টিপস দিতেন। তিনি আমাকে খাওয়ার টেবিলের সঙ্গে মাপ দিয়ে বলতেন, আমার পেট যখন টেবিল বরাবর আসবে, তখন আমাকে টিভিতে রান্না করার জন্য ডাকবেন। আমি অপেক্ষায় ছিলাম কবে আরও বড় হব।
মাঝে মধ্যে আমাদের পারিবারিক পিকনিক হয়, তখন সিদ্দিকা দাদু সেখানে কোন গাছের কী নাম সেটাও জিগ্যেস করতেন, না পারলে বলে দিতেন। তারপর কোন ফলে কতটা পুষ্টি আছে সেটাও বলে দিতেন। খাওয়ার সময় সেদিন আমি দেখেছিলাম তিনি সব খেয়েছিলেন, কিন্তু পরিমিতভাবে।
দাদু, তুমি চলে গেছ আজ এক বছর হলো। আমি অনেক বড় হয়েছি। তোমার রেসিপির বই দেখে নানা রকম কেক বানাতে চেষ্টা করি। ডাইনিং টেবিলটা আমার এখন পেটসমান কিন্তু তুমি তো দাদু আর রইলে না। দাদু, তোমাকে মনে পড়ে আর অনেক ভালোবাসি।
 আরিশা তাহ্নী
১০ বছর, সানবিমস স্কুল

No comments

Powered by Blogger.