শুল্ক ফাঁকি- বিলাসে বাহুল্য, দায়িত্বে ঘাটতি

যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, সেখানকার রাজপথে বিএমডবি্লউর মতো বিলাসবহুল গাড়ির ভিড় কতটা মানানসই, মুক্তবাজার ব্যবস্থার যুগে সেই প্রশ্ন অবান্তর মনে হতে পারে। বিলাসবহুল গাড়ি বাড়লে জ্বালানির চাহিদা কতটা বাড়ে, সেটাও আপাত প্রান্তিক বিষয়।
বরং অনেকেই এসব গাড়িকে স্বাচ্ছন্দ্যের সূচক হিসেবে সওয়ার করতে পছন্দ করেন_ বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। নাগরিকের একটি অংশের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এর চুইয়ে পড়া সুফল দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীও পেতে পারে, যদি এসব গাড়ির মালিক রাষ্ট্রের পাওনা ঠিকমতো শোধ করেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, আয়করের নয়ছয় তো আছেই, খোদ গাড়িগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ আমদানি করা হয় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, মাত্র কিছুদিন আগেও ৩০০ বিলাসবহুল গাড়ি দেশে এসেছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে। মূলত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাংলাদেশ ভ্রমণ বা সাময়িক অবস্থানের জন্য এসব গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা হয়। নিয়ম হচ্ছে, কাজ শেষে এগুলো উৎস দেশে ফেরত যাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খোঁজ নিয়ে দেখেছে, শুল্কমুক্তভাবে আসা অনেক গাড়ির হদিস নেই। ফিরে যায়নি উৎস দেশেও। খুব সম্ভবত এগুলো এখন প্রভাবশালীদের শোভা বর্ধন করছে। আমরা জানি, বিএমডবি্লউ ধরনের বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির শুল্ক অনেক বেশি। সেদিক থেকে এই আশঙ্কাও অমূলক নয় যে, শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রয়োজনের কথা বলে গাড়িগুলো আনা হয়েছিল। 'স্ক্র্যাপ' বা পরিত্যক্ত সরঞ্জামের কনটেইনারে করেও দামি ব্রান্ডের গাড়ি আমদানির ঘটনা ধরা পড়েছিল। এনবিআর সম্প্রতি আসা ৩০০ গাড়ির খোঁজখবর করছে দেখে আমরা স্বস্তিবোধ করছি। আশা করি, দায়ীরা যত প্রভাবশালী হোক, ছাড় পাবে না। দেশের রাজস্ব খাত শক্তিশালী করতে হলে, সচ্ছল নাগরিকদের রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল করে তুলতে হলে এর বিকল্প নেই। একই সঙ্গে আগে আসা গাড়িগুলোর হদিসও করা উচিত। ভালো হয়, গাড়ি আমদানি করার ক্ষেত্রে শুল্ক অব্যাহতির সুযোগ প্রত্যাহার করা গেলে। গুরুত্বপূর্ণ পর্যটকরা যখন বাংলাদেশে আসবেন, তখন এখানে বিদ্যমান পরিবহন ব্যবহার করলে কী এমন ক্ষতি? আর কেউ যদি বিএমডবি্লউ হাঁকাতেই চান, তাহলে উপযুক্ত শুল্ক পরিশোধের মানসিকতাও রাখতে হবে

No comments

Powered by Blogger.