বগুড়ায় ছাত্রলীগের হামলায় ৩ জামায়াত-শিবিরকর্মী নিহত- হরতালে ব্যাপক সহিংসতা

জামায়াতের ডাকা হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সরকার-সমর্থকদের সাথে হরতাল সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে জামায়াত-শিবিরের তিন নেতাকর্মী, একজন পুলিশ এবং একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছেন।
দেশব্যাপী আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। গ্রেফতার হয়েছে চার শতাধিক জামায়াত-শিবির  নেতাকর্মী। বগুড়ায় জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ব্যাপক সংঘর্ষে তিন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বগুড়ার আযিযুল হক কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রুহানি রয়েছেন। বগুড়ায় র‌্যাবের গুলিতে শিবিরের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বগুড়ায় শনিবার হরতাল ডেকেছে জামায়াত।  যশোরে জামায়াত-শিবিরের সাথে সংঘর্ষের একপর্যায়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পুলিশের এক কনস্টেবল। ফেনীতে হরতাল চলাকালে পিকেটারদের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় এক গাড়িচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

রাজধানীতে পুলিশ-র‌্যাবের কড়া নজরদারির মধ্যেও জামায়াত-শিবির বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও বিক্ষোভ করে। পুলিশ মিরপুর, শনির আখড়াসহ কয়েকটি স্থানে হরতাল-সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। রাজধানীতে অর্ধদিবস হরতাল ঘোষিত থাকলেও হরতালের আমেজ ছিল সন্ধ্যা পর্যন্তই। হরতাল চলাকালে রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাট যান্ত্রিক বাহনশূন্য ছিল। রাস্তা ছিল রিকশা-ভ্যানের দখলে। রাজধানীর দোকানপাট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, মার্কেট বিপণিবিতান, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দূরপাল্লার কোনো বাস-লঞ্চ রাজধানী থেকে ছেড়ে যায়নি এবং রাজধানীতে আসেওনি। তবে ট্রেন ও বিমান যথানিয়মে চলাচল করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক। তবে পুলিশ বলেছে, রাজধানীতে গ্রেফতারের সংখ্যা ২২ জন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিরোধী দলের কার্যালয়গুলো গতকালও অবরুদ্ধ ছিল। অভিযোগ রয়েছে গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ নিরপরাধ মানুষকে আটক করেছে। রাজধানীতে গতকালও পুলিশকে ব্যাপক মারমুখী দেখা গেছে। পুলিশ যাদেরকে আটক করতে পেরেছে গতকালও তাদেরকে থানায় নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর বাইরের খবর নিয়ে আমাদরে ব্যুরো, অফিস ও সংবাদদাতাদের প্রতিবেদন :

বগুড়া অফিস : বগুড়ায় হরতাল চলাকালে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলা এবং র‌্যাব-পুলিশের গুলিতে তিন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। র‌্যাব-পুলিশের গুলি ও টিয়ার শেলের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক শিবির কর্মী। প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার বগুড়া জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত। শহরজুড়ে তীব্র উত্তেজনা এবং থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যদর্শীরা জানান, হরতাল চলাকালে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে শহরের ফুলবাড়ীতে সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজের সামনে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আলরাজী জুয়েলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল অস্ত্রধারী ক্যাডার ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ছুরিকাঘাতে শিবিরের চার নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা হলো সাব্বির (২২), আদনান রফিক (২২), শাহীন মিয়া (৩০) ও আবু রোহানী (২৩)। আহতদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর আবু রোহানী মারা যান। নিহত রোহানী সরকারি আযিযুল হক কলেজ শাখা (পুরাতন ভবন) শিবিরের সভাপতি ও বগুড়া শহরতলীর এরুলিয়া মণ্ডলপাড়ার আবু বকর ছিদ্দিকের ছেলে এবং সরকারি আযিযুল হক কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

এর কিছুণ পর শহরতলীর সাবগ্রাম বাজারে ছাত্রলীগের কর্মীরা মিজানুর রহমান (৩০), সাখাওয়াত হোসেন ও আব্দুল কাদের নামে তিন জামায়াত ও শিবির কর্মীকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। হাসপাতালে নেয়ার পর জামায়াত কর্মী মিজানুর রহমান মারা যান। গুরুতর আহত শিবির কর্মি সাখাওয়াত ও সাব্বির কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। শজিমেক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ছয়জন ভর্তি রয়েছে।

তিন জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা বিুব্ধ হয়ে উঠেছে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে হাজার হাজার নেতাকর্মী উত্তেজিত হয়ে ওঠে। বিুব্ধ জামায়াত-শিবির কর্মীরা বেলা ২টায় শহরের ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে বিােভ মিছিল নিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথার দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় জামায়াত-শিবির কর্মীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় গোটা এলাকা রণেেত্র পরিণত হয়। বিুব্ধ জামায়াত-শিবির কর্মীদের ঠেকাতে বৃষ্টির মতো টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ জামায়াত-শিবির কর্মীদের ল্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। এতে জামায়াত ও শিবিরের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জামায়াত দাবি করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে সাধারণ মানুষ প্রাণভয়ে দিগি¦দিক  ছোটাছূটি করতে থাকে।

এ ঘটনার পর শহরের কামারগাড়ীতে একটি ছাত্রাবাসে আগুন দেয় বিুব্ধরা। এর কিছুণ পর বিপুল র‌্যাব-পুলিশ শিবির অধ্যুষিত জামিলনগরে অভিযান চালালে শিবিরকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সময় র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা শিবিরকর্মীদের ল্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে কমপে ১০ নেতাকর্মী গুলি বিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ শিবির কর্মীদের হাসপাতালে ভর্তির পর আব্দুল্লাহ (২২) মারা যান। তার পূর্ণ পরিচয় জানা যায়নি। গুরুতর আহত শিবির কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে গেলে পুলিশ ২৫ শিবির নেতাকর্মীকে আটক করেছে।

বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল জানিয়েছেন, নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদে জামায়াত বগুড়ায় আগামীকাল শনিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে।

বগুড়া সদর থানার ওসি সৈয়দ সহিদ আলম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ সুপার মোজম্মেল হক জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন।

এ দিকে বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্য শাহাবুদ্দিন ও সেক্রেটারি অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন এক বিবৃতিতে নেতাকর্মী খুূনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ােভ প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এবং শনিবার সকাল-সন্ধা হরতাল পালনের আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ছাত্রলীগ ও পুলিশের হাতে নিহত তিন জনের লাশ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হেেছ। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিহতদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

যশোর অফিস জানায়, যশোরের মনিরামপুরে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ গুলিবর্ষণ ও হামলা করেছে। এতে জামায়াত-শিবিরের দু’জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ চার শিবিরকর্মীকে আটক করেছে। এ সময় দায়িত্ব পালনকালে হার্ট অ্যাটাকে পুলিশ কনস্টেবল জহুরুল হক অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। সংঘর্ষে পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন বলে গুজব উঠলেও যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, ওই পুলিশ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তার মুখে কেটে যাওয়ার একটি চিহ্ন আছে উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, হার্ট অ্যাটাকে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় জহুরুল মুখে আঘাত পেয়েছিলেন।

মনিরামপুর উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ফজলুল হক ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের যশোর জেলা পূর্ব সভাপতি আবু মুসা জানিয়েছেন, সকাল ৭টার দিকে মনিরামপুর বাজারে হরতালের সমর্থনে তারা একটি মিছিল বের করে। ওই সময় এক দিকে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের মিছিলে গুলিবর্ষণ, দেশীয় অস্ত্র ও বোমা নিয়ে হামলা চালায়। অপর দিকে একই সময়ে পুলিশ মিছিলে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিপে করে। এতে জামায়াত নেতা নুর মোহাম্মদ ও শিবিরকর্মী মোবারক হোসেন গুরুতর আহত হন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ দিকে, মনিরামপুর থানার ওসি আলী আজম দাবি করেছেন, শিবিরের হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

ফেনী অফিস : ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের খাজুরিয়া নামক স্থানে গতকাল দুপুরে বেপরোয়াভাবে সিএনজি চালাতে গিয়ে ইমাম উদ্দিন (২০) নামে সিএনজিচালক নিহত হন। সিএনজিতে থাকা মহিলা ও শিশুসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে বেপরোয়াভাবে (ফেনী থ ১১-৪৫০০) সিএনজি চালানোর সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এ সময় চালক ইমাম উদ্দিনসহ যাত্রীরা গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন চালককে উদ্ধার করে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোয়া ১ টায় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইমাম উদ্দিন চৌদ্দগ্রাম থানার শিললী গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে। আহতরা ফেনীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

ফেনী মডেল থানার ওসি মাঈনুল আফসার জানান, দ্রুতগতিতে সিএনজি চালানোর সময় গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে আহত চালক হাসপাতালে মারা যান।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, জামায়াতে ইসলামীর ডাকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মহানগর এলাকায় অর্ধদিবস ও জেলায় পূর্ণ দিবস হরতাল বড় ধরনের কোনো অঘটন ছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত এবং শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। তবে হরতালে বিছিন্নভাবে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন, সড়কে টায়ার পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। হরতাল চলাকালে সভা সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে সরব উপস্থিতি ছিল জামায়াত ও শিবিরকর্মীদের। হরতাল চলাকালে পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। হরতালের সময় জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা লালদীঘির পাড়, সিনেমা প্যালেস, রাহাত্তারপুল, বহদ্দারহাট মোড়, বাস টার্মিনাল ও খাজা রোড, চট্টগ্রাম বন্দর বিমান চত্বর, হালিশহর, এ কে খান মোড়, অলঙ্কার মোড়, সিটি গেট, মুরাদপুরসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে খণ্ড মিছিল ও সমাবেশ করে। হরতাল চলাকালে নগরীর চকবার ও লালদীঘি এলাকায় দু’টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে বেশ ক’টি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

নগরীতে সকাল থেকে বিপুল পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়ে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি হরতাল সমর্থক জামায়াত ও শিবিরকর্মীরা ফজরের নামাজের পরপরই রাস্তায় নামেন। অন্যান্য হরতালের তুলনায় গতকালের হরতালের চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। সরকারি ছত্রছায়ায় অন্যবারের মতো গতকালের হরতালে তেমন কোনো যানবাহন রাস্তায় নামেনি। ফলে নগরীর রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। হরতালের কারণে খোলেনি বেশির ভাগ দোকানপাট। অফিস আদালত, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। অফিস-আদালতগামী লোকজনের রিকশা ছিল ভরসা। চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল আনানেয়া বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। শিা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিকেরা উপস্থিত হলেও ছাত্রছাত্রীরা যায়নি। ফলে কাস-পরীা হয়নি।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে রাজশাহী মহানগরীর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

হরতাল চলাকালে মহানগরীর বেশির ভাগ ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান ও দোকান বন্ধ ছিল। রাজশাহী বাসটার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার ও লোকাল রুটের কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। কিছু রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে কয়েকটি রুটের আন্তঃনগর ও লোকাল মেইল ট্রেন ছেড়ে যায়।

হরতালের সমর্থনে নগরীতে বিশাল মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী। পরে হেতেম খাঁ বড় মসজিদসংলগ্ন এলাকায় সমাবেশ করে। এতে বক্তব্য রাখেন মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এমাজউদ্দিন মণ্ডল, জামায়াত নেতা সারওয়ার জাহান প্রিন্স প্রমুখ। জামায়াতের রাজপাড়া, শাহমখদুম, মতিহার, বোয়ালিয়া পূর্ব ও পবা পশ্চিম সাংগঠনিক থানা ও কাঁটাখালী পৌর শাখার উদ্যোগে পৃথকভাবে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া নগরীর বিনোদপুর ও কাজলা এলাকায়ও মিছিল হয়েছে।

এ দিকে হরতালে যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে ভোর থেকেই নগরীজুড়ে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, আলুপট্টি, সোনাদীঘি মোড়, বিনোদপুর, তালাইমারী, ভদ্রা, বাসটার্মিনাল, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট, শালবাগানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নিয়মিত টহল দেয় পুলিশ ও র‌্যাব।

এ ছাড়া জেলার বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, বাগমারা, তানোর ও পবা উপজেলায় শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের খবর পাওয়া গেছে। এসব উপজেলায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে জামায়াত নেতাকর্মীরা।

জামায়াতের বিবৃতি : জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করায় রাজশাহীবাসীকে মোবারকবাদ জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরী আমির আতাউর রহমান।

গতকাল দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় কর্মসূচি পালন করতে চাই। কিন্তু এক শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তা সরকারকে খুশি করার জন্য আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালাচ্ছে। অথচ মিছিল মিটিং করা আমাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। পুলিশ আমাদের দুশমন নয়। কিন্তু সরকার পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশের সর্বনাশ করছে। আমরা অনেকবার বলেছি পুলিশ আমাদের হামলা না করলে একটি ঢিলও পড়বে না। আজ রাজশাহীতে তা প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি পুলিশ সদস্যদের সরকারের উসকানিমূলক কথায় কান না দিয়ে সংযত আচরণ করার এবং সরকারের পতন ঘটাতে দেশবাসীকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। তবে সকালে খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে।

গতকাল হরতাল চলাকালে খুলনার অফিস আদালত, ব্যাংক বীমার প্রধান দরজা বন্ধ ছিল। ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, শপিংমল ও দোকান বন্ধ ছিল। সীমিত আকারে রিকশা-ভ্যান চললেও কোনো ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল করেনি। মহানগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি ল করা যায়। খুলনা মহানগরী জামায়াত অফিস পুলিশি বেষ্টনীতে থাকে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সূত্র জানায়, হরতালে শহরজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়। ভোর থেকে রাস্তায় পুলিশ ও র‌্যাব টহল দেয়। তবে কোথাও কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

হরতাল সফল করতে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং করা হয় বলে জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগরী সূত্র জানায়। সকাল ৯টায় নগরীর শান্তিধাম মোড় থেকে মিছিল বের করা হয়। বিােভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি মু. সাইদুর রহমান সাইদ, খানজাহান আলী থানা আমির আজিজুর রহমান স্বপন, খুলনা সদর থানা জামায়াতের সেক্রেটারি মো: ওয়ালিউল্লাহ, আবুল বাশার প্রমুখ।

হরতাল চলাকালে খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করে পিকেটারেরা। এ সময় খুলনা-ঢাকা-রাজশাহী রেললাইনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বেশ কিছু সময় তারা অবরোধ করে রাখেন। ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, জামায়াত-শিবিরকর্মীরা প্রথমে দামোদর মন্দির এলাকায় দু’টি বাস ও একটি ট্রাক ভাঙচুর করে। পরে আলকা এলাকায় আরো ছয়টি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় তারা। তিনি জানান, এ ঘটনার পর সরকারি বিএল কলেজের শিার্থী রাশেদ ও আব্দুস সামাদকে আটক করা হয়েছে। এ দিকে পাইকগাছা উপজেলার জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা পিকেটিং করেছে। রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলা সদরে বিােভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

লক্ষ্মীপুর : সকাল ৮টায় জেলা প্রশাসনের রিকোজিশন করা কৃষি ব্যাংকের ডিজিএম মো: ইউসুফের গাড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় শহরের আলিয়া মাদরাসার সামনে শিবির কর্মীরা ওই গাড়ির চালক আবুল হাশেমকে মারধর করে গাড়ি ভাঙচুর করেন। একই সময়ে একটি মাইক্রোবাসও ভাঙচুর করে তারা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিপে করে। এ সময় শিবিরকর্মী আনিছ ও মাশরুসহ চারজন আহত হন। এ ছাড়া চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, দালালবাজার, জকসিন মিয়ার রাস্তার মাথা ও বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থানে হরতালকারীরা টায়ারে আগ্নিসংযোগ ও গাছের গুঁড়ি ফেলে পিকেটিং করেন। এ সময় শিবিরকর্মীরা বিপুল পরিমাণ ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আটটি গাড়ি ভাঙচুর ও দুই শিবির কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

জানা গেছে, ভোরে জামায়াত-শিবির কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০-১২টি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করেন। এ সময় তারা আটটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। সকাল ৯টায় ডলি রিসোর্ট এলাকায় পিকেটিংকালে পুলিশের গুলিতে দুই শিবির কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের একজনের নাম মাসুম। অপর দিকে হরতাল সফল করায় জামায়াত নেতারা জনসাধারণকে অভিনন্দন জানান।

লালমনিরহাট : হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভকালে বুড়িমারীতে ছাত্রলীগ ও সন্ত্রসী রিপনের নেতৃত্বে অতর্কিত মিছিলে আক্রমণে জামায়াতের জেলা যুগ্ম সেক্রেটারি অধ্যাপক আতাউর রহমানসহ ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় জামায়াতের মোমিনুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করেছে পাটগ্রাম থানা পুলিশ। জামায়াত সমর্থিত ছয়জনের দোকান এ সময় ছাত্রলীগ ভাঙচুর ও ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। যাদের দোকান ভাঙচুর করেছে তার মধ্যে ফরিদুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, আব্দুর রহমান, হাবিবুর রহমান, আজিজুল ইসলাম ও মামুনের দোকান লুটপাট করে।

কিশোরগঞ্জ : সকালে শহরের একরামপুর ও বড়বাজার এলাকায় ছাত্রশিবির ঝটিকা মিছিল করে। এ দিকে পুলিশ সকাল ১০টায় পিকেটিং করার সময় কিশোরগঞ্জ উত্তর জেলা শিবিরের সভাপতি খালেদ হাসান জুম্মন, মাদরাসা শাখার সভাপতি নুরুল আলমকে নগুয়া বটতলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া পুলিশ বেলা ১১টায় বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো ৯ জন শিবিরকর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার করে। তারা হলেন তওহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, শাহান শাহ, সোহেল রানা, নাজিম উদ্দিন, ফাহিম, হাসান, বোরহানউদ্দিন ও অনিক।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের ডাকা পূর্ণদিবস হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সকাল থেকেই শহরের দোকানপাট বন্ধসহ মহাসড়ক ও সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল।

গাজীপুর : হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সদর উপজেলার নলজানি এলাকায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে পিকেটিং করেছে। এ ছাড়া টঙ্গী, শ্রীপুর, কালিয়াকৈরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। রাতে টঙ্গীর শিলমুন এলাকা থেকে মোস্তা কামাল নামে এক জামায়াত নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

নওগাঁ : সকাল ৭টায় শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় পিকেটিং করার সময় সাজ্জাদ হোসেন (২০) ও তানজুল হক (১৮) নামে দুই শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটক সাজ্জাদ রানীনগর উপজেলার নগর পাচুপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। আটক তানজুলের বাবার নাম নুর মোহাম্মদ। তার বাড়ি নওগাঁ সদরের প্রতাবনগর গ্রামে।

সিরাজগঞ্জ : হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা গতকাল ভোরে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে এবং জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে দেয়। পিকেটারেরা সিরাজগঞ্জÑরায়গঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের তেলকুপি এলাকায় একটি ট্রাক ভাঙচুর চালিয়ে তাতে অগ্নিসংযোগ করে।

শহরের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও রিকশা ভ্যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক ছিল। দূরপাল্লা বা অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। পৌর এলাকার সমাজকল্যাণ মোড়ে পিকেটিং করার সময় স্থানীয় জামায়াত নেতা আব্দুল আজিজকে আটক করেছে পুলিশ। খোকশাবাড়িতে পিকেটারেরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় শিবির সন্দেহে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।

জুড়ী (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের জুড়ীতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলাকালে সকালে উপজেলার মানিকসিংহ, ভুয়াই, বাছিরপুর, নয়াবাজার, সাগরনাল ও ফুলতলা এলাকায় পিকিটিংকালে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় জামায়াত নেতা লুৎফুর রহমান আজাদী, লোকমান হোসেন ও ফখরুল ইসলাম আহত হন এবং ফুলতলা ইউনিয়নের রজব আলীর ছেলে, ছাত্রশিবির জুড়ী টিএন খানম ডিগ্রি কলেজ সেক্রেটারি এমদাদুল হক বোরহানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাকে মৌলভীবাজার জেলহাজতে পাঠানো হয়।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে দুই জামায়াত নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি শেখ হাবিবুর রহমানর, পিতা শেখ জালাল উদ্দিন (৬০), একই উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের নুরুল আবেদীন বিশ্বাসের ছেলে খালিদ বিশ্বাস (৩৫), কাশিয়ানী উপজেলা জামায়াতের আমির কাওসার সিকদার (৪৫), মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়ন জামাতের আমির আকরামুজ্জামান আকরাম (৩২), গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় দণিপাড়া আলিয়া মাদারসার শিক হাফেজ ও ফিরোজ মোল্লা (৪৭)।

ধামরাই (ঢাকা) : ঢাকার ধামরাইয়ে গাউতারা এলাকা থেকে মো: ইউসুফ আলী (৪৫) নামে এক জামায়াত কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের গাউতারা গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ মিয়ার ছেলে জামায়াত কর্মী মো: ইউসুফ আলীকে আটক করা হয়েছে। ইউসুফ আলীর পরিবারের দাবি সে জামায়াত কর্মী নয়। সে বিএনপির কর্মী।

সিলেট ব্যুরো : সিলেটের বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ, বিপ্তি পিকেটিং, পুলিশের টিয়ার শেল, গুলি বর্ষণ ও পিকেটারদের গাড়ি ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। সকালে হরতাল চলাকালে পিকেটিংয়ের দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

জামায়াতের প থেকে দাবি করা হয়েছে, নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় পুলিশের ছোড়া শটগানের গুলিতে তাদের তিন কর্মী আহত হয়েছেন।

রূপগঞ্জ সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের দুই কর্মীকে গত বুধবার রাতে গোলাকান্দাইল ও চারিতাল্লুক এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন : গোলাকান্দাইল এলাকার মৃত ফয়েজুর রহমানের ছেলে ডা: আজিজুর রহমান (৬৫) ও চারিতাল্লুক এলাকার হাফিজউদ্দিনের ছেলে আবদুল মাজেদ (৫০)।

বাগেরহাট সংবাদদাতা : জামায়াতের ডাকে দেশব্যাপী হরতাল চলাকালে পিকেটিং করার সময় বাগেরহাটে জামায়াত ও শিবিরের পাঁচ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সকাল ৮টায় বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের সদর উপজেলার মেগনীসতলা এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করার সময় তাদের আটক করা হয়। এ ছাড়া সংবাদপত্রবাহী একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।

আটককৃতরা হলেনÑ বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস শেখের ছেলে শেখ আরিফ বিল্লাহ (২৩), শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের সামসুদ্দোহার ছেলে মাসুম বিল্লাহ (২৫), নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার নয়া গ্রামের দৌলাতুল্লার ছেলে আলী হোসেন (১৮), চিতলমারী উপজেলার বটতলা গ্রামের সলেমানের ছেলে আলামিন (২১) ও শহরের খারদার এলাকার আমিন মোল্লার ছেলে টুটুল মোল্লা (২৬)।

দিনাজপুর সংবাদদাতা :  হরতাল চলাকালে পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে ছয় জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করেছে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রানীরবন্দরে শিবিরের সভাপতি (জেলা উত্তর) জাকিরুল ইসলাম ও স্থানীয় জামায়াত নেতা মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বিােভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা রানীরবন্দর বাজারে এক সমাবেশ করে।

জামালপুর সংবাদদাতা : হরতালের কারণে গতকাল জামালপুর থেকে দূরপাল্লার কোনো যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক ছেড়ে যায়নি। শহরের পাঁচটি পয়েন্টে জামায়াত-ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করেছে।

এ দিকে গত বুধবার দুপুরে জেলার মেলান্দহ উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মামুনুর রশিদ মামুন এবং রাত সাড়ে ১০টায় শহরের পাঁচরাস্তা মোড়সংলগ্ন একটি মেছ থেকে ছয় ছাত্রশিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল জামায়াত নেতা মামুন, ছাত্রশিবির কর্মী মাহামুদ হোসাইন, কামাল হোসেন, মেহেদী হাসান ও নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ তাদের আদালতে সোপর্দ করেছে।

ফরিদপুর অফিস : শহরসংলগ্ন বায়তুল আমান এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে আটক ১৫ ছাত্রসহ ফরিদপুর ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা ফারুক হোসেনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার রাত ১টায় রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র রাশেদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, আসিফ মিয়া, রাকিব হোসেন, পিকুল হোসেন, তুহিন শেখ, আরিফুর রহমান, সুমন মিয়া, আবদুল্লাহ, বাবু মিয়া, ছাব্বির হোসেন, ছালাউদ্দিন, তুহিন খান ও আশিকুর রহমানকে ছাত্রাবাস থেকে আটক করা হয়। একই দিন সকালে ব্যাংকে যাওয়ার পথে গ্রেফতার করা হয় ফারুক হোসেনকে।

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা : কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় হরতালে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের লক্ষ্মীপুর এলাকায় জামায়াত-শিবির ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় শিবির সমর্থক জাহিদুল ইসলাম নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। আটক জাহিদ উপজেলা লক্ষ্মীপুর গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে।

বড়াইগ্রাম সংবাদদাতা : জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বড়াইগ্রামে মিছিল, পিকেটিং ও ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। হরতালের সমর্থনে পাবনা-নাটোর মহাসড়কের কদিমচিলানে শিবির নেতা শামীম হোসেন এবং ধানাইদহে জামায়াত নেতা আলহাজ সোলায়মান হোসেনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে পুলিশ ধানাইদহ কয়েন থেকে স্কুলছাত্র নাসিম (১৪) ও কদিমচিলান এলাকা থেকে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাদিম হোসেন তোহাকে (১৮) আটক করেছে।

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বাত্মকভাবে পালিত হয়েছে। এ ছাড়া সকাল ৮টায় শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পিকেটিংকালে শিবিরকর্মী আমিনুল ইসলামকে পুলিশ আটক করে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশকোচগুলো নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে। বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা : জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার পানিয়ালা সড়কের কেথুড়ি বাজারে পিকেটিং করার সময় ৩ নম্বর ভাদুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে শিবির কর্মীদের ধাওয়া করে। এ সময় শিবির কর্মী সন্দেহে মাহবুবুর রহমান পলাশ নামে এক ছাত্রকে আটক করে তারা পুলিশে সোপর্দ করে।

মহেশপুর সংবাদদাতা : ঝিনাইদহের মহেশপুর থানা পুলিশ কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়ায় দুই জামায়াত নেতাকে আটক করেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল শুরুর আগেই ভোরে পুলিশ কোনো আটকাদেশ ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই মহেশপুর উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ফারুক আহম্মেদ ও পৌর কাউন্সসিলর জামায়াত নেতা মকবুল হোসেনকে তাদের বাড়ি থেকে আটক করে। এ দিকে বিনা কারণে দুই জামায়াত নেতাকে আটক করায় মহেশপুর উপজেলা আমির মাওলানা আব্দুল হাই তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।

ভাণ্ডারিয়া সংবাদদাতা : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় দুই জামায়াত কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে ভাণ্ডারিয়া থানা পুলিশের পাঁচ-সাতজনের একটি টিম অভিযান চালিয়ে উপজেলার দণি শিয়ালকাঠী গ্রামের নিজ-নিজ বাসা থেকে জামায়াত কর্মী আ: মালেক হাওলাদার ও মো: বাচ্চু খানকে আটক করে তাদের গতকাল সকালে কোর্টে পাঠায়।

চান্দিনা (কুমিল্লা) সংবাদদাতা : গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে কুমিল্লার চান্দিনায় আকস্মিক পৃথক হামলায় পিকেটারেরা দুটি বাস ও তিনটি ট্রাক ভাঙচুর করে এবং একটি ট্রাক পাঙ্কচার করে মহাসড়ক অবরোধ করে। অপর দিকে দেবিদ্বারে পিকেটিং করার সময় জাহিদুল ইসলাম নামে এক শিবিরকর্মীকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত জাহিদুল ইসলাম দেবিদ্বার উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে।

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : ঝিনাইদহ হরতাল চলাকালে মহেশপুর উপজেলা জামায়াতের সহসম্পাদক ফারুক আহমেদ, পৌর কাউন্সিলর ও জামায়াত নেতা মাহবুব হোসেনকে মহেমপুর থেকে এবং ঝিনাইদহের ভুটিয়ারগাতি থেকে অপর এক জামায়াত কর্মীকে গতকাল পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বিয়ানীবাজার (সিলেট) সংবাদদাতা : জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে পুলিশ জামায়াত-ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় তিলপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মো: এখলাছ উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে এএসআই সিকান্দার তাকে প্রহার করে। এরপর তাকে পুরনো একটি পুলিশ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়।

সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা : জামায়াত আহূত হরতাল চলাকালে গতকাল শিবিরকর্মীরা উপজেলার পন্থিছিলা ও নুনাছড়া এলাকায় একটি কাভার্ট ভ্যান ও একটি পিকআপ ভ্যানে ভোর ৬টায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সীতাকুণ্ড থানার ডিউটি অফিসার জানান, শিবিরের জোরালো যেকোনো তৎপরাতার আশঙ্কায় সীতাকুণ্ডের সর্বত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল হরতাল চলাকালে দূরপাল্লার যানবাহন চলেনি। এ সময় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতাল চলাকালে গতকাল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও দোকানপাট, অফিস, আদালত স্বাভাবিক ছিল। হরতাল চলাকালে জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি।

এ দিকে হরতালের আগের দিন বুধবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মধ্য গৌরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুর মমিনের ছেলে আব্দুল বাতেনকে (৫০) তার মুদি দোকান থেকে ও বাসুদেবপুর গ্রামের মোজাফফর রহমানের ছেলে জহুরুল ইসলামকে (২৪) শহরের নিমতলা মোড় থেকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা : জামায়াতের ডাকা সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল গতকাল আশুলিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। তবে হরতালের আগের রাতে ভাদাইল, গাজীরচট ও নয়ারহাট এলাকা থেকে জামায়াত সন্দেহে নিরীহ পথচারী, ব্যবসায়ী ও ধর্মপ্রাণ লোকদের আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকালে নয়ারহাট এলাকায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল করায় পুলিশ বাদি হয়ে ওইদিন গভীর রাতে জামায়াত ও বিএনপির ৩৩ নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছে।

গতকাল জামায়াতের ডাকা হরতালে আশুলিয়ার কোনো সড়কপথেই দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেনি। হরতালের আগের রাতে সাতজন ব্যবসায়ী ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। ভাদাইলের ইবনে সিনা ফার্মেসির ইসমাইল হোসেন, বুড়িবাজার এলাকার ফার্মেসি ব্যবসায়ী আবদুল কাদির, বগাবাড়ি এলাকার মুদি ব্যবসায়ী এনামুলসহ সাতজনকে জামায়াত সন্দেহে আটক করে।

ময়মনসিংহ অফিস : ময়মনসিংহে জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে শহরের বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকেরা মিছিল ও পিকেটিং করে এবং কয়েকটি টেম্পো ভাঙচুর করে। পাটগুদাম র‌্যালির মোড়ে পুলিশ টুপি দাঁড়িওয়ালা নিরীহ পথচারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।

রংপুর ব্যুরো : গতকাল সকাল ৮টার দিকে নগরীর দমদমা কারিগরি কলেজের সামনে শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি বি?োভ মিছিল বের করে। এ সময় তারা রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পিকেটাররা একটি পিকআপ ভাঙচুর করে। এ ছাড়া হরতাল চলাকালে নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে দুই পিকেটারকে আটক করে পুলিশ।

কেশবপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সন্দেহে কেশবপুরের রামচন্দ্রপুর গ্রাম থেকে দুই যুবককে পুলিশ গত বুধবার রাতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ রামচন্দ্রপুর গ্রামের বক্কার আলীর ছেলে আনিছুর রহমান (৩০) ও আবুল কাশেমের ছেলে শাহিন আলম (২৮)। তাদের গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ফুলতলা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, খুলনার ফুলতলায় রেললাইনে অগ্নিসংযোগ, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে গতকাল জামায়াত আহূত হরতাল পালিত হয়েছে। পুলিশ ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমিরসহ তিনজনকে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে আটক করে।

গতকাল দুপুরে পুলিশ ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আলী আকবর মোড়লকে আটক করে। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় পুলিশ শিবির সন্দেহে দামোদর গ্রামের নিজ নিজ বাসা থেকে ফুলতলা বি এম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সাইফুল্লাহ সামাদ (১৭) ও রাশেদুলকে (১৬) আটক করে। তবে তারা কেউ-ই শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত নন বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশ গত বুধবার রাতে উপজেলার চাম্বল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ সাহাবউদ্দীন, শফি আলম ও আবদুল আলিম। গ্রেফতারকৃত তিনজনকে গতকাল আদালতে চালান দেয়া হয়। বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুস সবুর জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে বাঁশখালীতে উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক জহিরুল ইসলামসহ ১৯ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সাতীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিােভকালে পুলিশের সাথে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষে সাত পুলিশ ও ১০ শিবির কর্মী আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে দুইজনকে।

পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেল ৫টায় সাতক্ষীরা শহরের মিলবাজার এলাকায় শিবিরকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করেন। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিপে করে। এতে গোটা এলাকা রণত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ ও শিবিরকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সময় সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের মধ্যে পুলিশের আবদুর রহমান, কনস্টেবল পবিত্র সরদার, শহীদ ও সুকেশ রায়কে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

শিবির সভাপতি রোকনুজ্জামান দাবি করেন তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিপে করে। পরে পুলিশ শিবিরকর্মীদের ওপর ব্যাপক মারধর করে। এ সময় শিবিরের ১০ নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ জুয়েল নামে এক জামায়াতকর্মীকে আট করে। এ সময় আর এক পথচারীকে আটক করে।

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সানারপাড় এলাকায় জামায়াত- শিবিরকর্মীরা গতকাল ভোরে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় শিবিরকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শিবিরকর্মীরা পিছু হটলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

নাটোর সংবাদদাতা জানান, নাটোরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল, পিকেটিং ও গাড়ি ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। এ সময় পুলিশ দোহা নামের এক শিবিরকর্মীসহ দুই হরতাল সমর্থককে আটক করে।

নাটোর-পাবনা মহাসড়কে লালপুরের কদিমচিলান ও বড়াইগ্রামের কয়েনবাজার এলাকায় ব্যাপক পিকেটিং ও মিছিল করে শিবিরকর্মীরা। কদিমচিলানে দোহা নামের এক শিবিরকর্মীসহ কয়েনবাজারে আরো এক হরতাল সমর্থককে আটক করে পুলিশ।

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে।

গতকাল সকালে রামগতি উপজেলার রামগতির হাটে পিকেটিং করার সময় পুলিশ ছাত্রশিবিরের রামগতি দক্ষিণ অঞ্চলের সভাপতি রাশেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।

এ দিকে, বুধবার রাতে উপজেলার বালুরচর বাংলাবাজার এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা মো: আকবর হোসেন নামের এক শিবিরকর্মীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করলে গুরুতর অবস্থায় তাকে লক্ষ্মীপুরের একটি কিনিকে ভর্তি করা হয়।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাসবেতকা এলাকায় জেলা ছাত্রশিবিরের মেসে দুই দফা অভিযান চালায় পুলিশ। তবে এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।

শিবিরের জেলা সেক্রেটারি হাফেজ রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় এবং গতকাল দুপুর ১২টায় পুলিশ মেসে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ তিনটি কম্পিউটার, ছয়টি মোবাইল সেট, কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা এবং বেশ কিছু সিডি, ইসলামি সাহিত্য ও বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে যায়।

 টাঙ্গাইল ডিবির ওসি হুমায়ুন কবীর আকন্দ শিবিরের মেসে অভিযান চালানোর কথা স্বীকার করেন। গতকাল সারা দেশের মতো টাঙ্গাইলেও হরতাল পালিত হয়েছে। টাঙ্গাইলের ওপর দিয়ে উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের কোনো বাস চলাচল করেনি।

হরতাল চলাকালে বগুড়ায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় এক জামায়াতকর্মী ও এক শিবির নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তৃতা করেন পৌর জামায়াতের আমির আহসান হাবীব মাসুদ, সেক্রেটারি আলমগীর হোসেন, শিবিরের জেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহর শিবিরের অফিস সম্পাদক মো: হাবীবুল্লাহ।

শিবগঞ্জ (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মহাস্থান বন্দর আগমনি হিমাগারের সামনে শিবিরকর্মীরা অবস্থান নেন। এ সময় তারা রাস্তায় বড় বড় গাছে ও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে দেয়। এতে পুলিশের সাথে শিবিরকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অপর দিকে দুপুরে হরতালের সমর্থনে মহাস্থান বন্দরে ইসলামী ছাত্রশিবির এক ঝটিকা মিছিল বের করে।

পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, জিয়ানগর থানা পুলিশ হাবিবুর রহমান নামে এক জামায়াত সমর্থক ও ভাণ্ডারিয়া থানা পুলিশ বাচ্চু ও আবদুল মালেক নামে দুই জামায়াত সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া জেলাব্যাপী অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ করে জিয়ানগর উপজেলার হাটবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজনগর (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের রাজনগরে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। উপজেলার চৌধুরীবাজারে পুলিশের সাথে শিবিরকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ শিবিরকর্মীদের একটি মোটরসাইকেল আটক করেছে। হরতালের দিনে ভোর থেকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা উপজেলার মহলাল, চৌধুরীবাজার, উত্তরভাগ ও তারাপাশায় গাড়ি আটকে ও টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করেছে।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় জামায়াতের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাগধা ইউনিয়নের জামায়াতকর্মী চাঁদত্রিশিরা গ্রামের আবদুল ওহাব মিয়ার ছেলে আবদুল রাজ্জাককে হরতালে নৈরাজ্যের সৃষ্টির আশঙ্কায় গতকাল সকালে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশের এসআই মোস্তাফিজুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। হরতালের কারণে গতকাল জামায়াত কর্মীকে বরিশাল আদালতে প্রেরণ করতে পারেনি পুলিশ।

শিবপুর সংবাদদাতা  জানান, নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার সর্বত্র সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। উপজেলার ইটাখলা ও সৈয়দনগর এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল ও পিকেটিং হয়েছে। শিবপুর মডেল থানা পুলিশ সৈয়দনগর থেকে দুপুরে নরসিংদী শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহফুজুল হক নাঈমকে গ্রেফতার করেছে। তার বাড়ি শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের দরগারবন্দ গ্রামে। শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম ফিরোজ আল-জালাল জানান, গ্রেফতারকৃত নাঈমের বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলা হয়েছে। সে থানাহাজতে আটক রয়েছে।

জয়পুরহাট সংবাদদাতা জানান, জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে জয়পুরহাটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। গতকাল সকালে সদর উপজেলার পুরানাপৈল বাজার এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও  চার রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এ ছাড়াও লালমনিরহাট, মাগুরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, টঙ্গী, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ ও রাঙ্গামাটিতে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.