যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবেঃ প্রধানমন্ত্রী by আসাদুজ্জামান আসাদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে। তারা ’৭১ সালে মা-বোনদের ইজ্জত নিয়েছে ছিনিমিনি খেলে নির্যাতন করেছে, অত্যাচার করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে।
রাজাকার আলবদররা মা-বোনদের হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। তাই তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। আমার বাবা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান তাদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ’৭৫-এ তাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা বানিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তিনি গতকাল বিকেলে পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণকালের এই জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন। পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি আরো বলেন, বিগত চার বছরে সারা দেশে যত নির্বাচন হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে হয়েছে। একটি নির্বাচন নিয়েও কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন। তারা স্বাধীনভাবে ভোট দিয়েছে। এবার আমরা জনগণের মতায়ন ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। আজ তাদের বিচার শুরু হয়েছে। অথচ এ দেশের বিরোধী দল বিএনপি নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে হরতাল, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও জ্বালাও পোড়াও করছে। এক মুসলমান অপর মুসলমানকে হত্যা করতে পারে না। অথচ বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়ে হত্যা করছে। তারা মতায় থাকাকালে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। পরে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ যখন মতায় আসে, তখন দেশের উন্নতি হয়। তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক ও পঞ্চগড় বোদা-দেবীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সাথে ব্যবসায় বাণিজ্য শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে পঞ্চগড়ের গুরুত্ব আজ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত চার বছরে পঞ্চগড়ের অনেক উন্নয়ন হয়েছে।

অতীতে পঞ্চগড়ে চা বাগান ছিল না। আমরা ’৯৬ সালে মতায় আসার পর পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু করেছি। চা বাগানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানকার চা এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে মাস্টার্স এবং পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স কোর্স চালু হবে।

পঞ্চগড় জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রাথমিক ও গণশিা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজাহারুল হক প্রধান, সংরতি মহিলা সংসদ সদস্য ফরিদা আখতার হিরা প্রমুখ। এ সময় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী হাসান আলী, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী, ইকবালুর রহিম এমপি উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিার উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নতুন শিা বছরে ২৭ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এখন আর বাবা-মায়েদের বইয়ের কথা চিন্তা করতে হয় না।

প্রধানমন্ত্রী তার ২৫ মিনিটের বক্তব্যের শেষাংশে সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ মতায় থাকলে দেশের মানুষ শান্তি ও নিরাপদে থাকে। তাই দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশসেবা করার সুযোগ দিন। আমরা আপনাদের উন্নয়ন দেবো।

এর আগে সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে তিনি দেবীগঞ্জে পৌঁছেন। সেখানে করতোয়া নদীতীরে ময়নামতির চরে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় রোভার মুট ও পঞ্চম জাতীয় কমডেকার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে পৌনে ১টায় সড়কপথে পঞ্চগড়ে পৌঁছে নবনির্মিত এক শ’ শয্যাবিশিষ্ট মকবুলার রহমান ডায়াবেটিক হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। বেলা সোয়া ২টায় পঞ্চগড় চিনিকল মাঠের জনসভাস্থলে নবনির্মিত পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া জাতীয় মহাসড়ক উদ্বোধন, পার্বতীপুর-পঞ্চগড় ১৫০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইনের পঞ্চগড় অংশের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, পঞ্চগড় গ্রিড সাবস্টেশনের উদ্বোধন ও নবনির্মিত তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেণাগারের উদ্বোধন করেন।

No comments

Powered by Blogger.