থ্রিজি কেন- জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে টুজি মোবাইলফোনের সেবা উন্নয়নে আরও বেশি তৎপর হওয়া দরকার। জনগণও তাই চায়

মোবাইলফোন সারা পৃথিবীকেই বদলে দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা এখন অনেকাংশে মোবাইলফোনের ওপর নির্ভরশীল।
এটাকে একটি সত্যিকার গণমুখী প্রযুক্তি বলা যায়। কারণ এখানে শুধু উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ মোবাইলফোন ব্যবহার করে না; নিম্ন আয়ের খুব সাধারণ মানুষের কাছেও এখন মোবাইলফোন পৌঁছে গেছে। মাত্র ২০ বছর আগেও এক জেলার গ্রাম থেকে অন্য জেলার গ্রামে চিঠি পাঠাতে সময় লাগত চার পাঁচদিন; এখন রাজধানী থেকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে তেঁতুলিয়া বা টেকনাফে যে কারও সঙ্গে নিমিষেই কথা বলা যায়। আমেরিকায় বসে পুত্র কন্যারা অনায়াসে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে পারে। আসলে মোবাইলফোন সামাজিক জীবনে নীরব বিপ্লব এনেছে। মোবাইলফোন প্রযুক্তিকে মানবজীবনে আশীর্বাদ বলে মেনে নিতে এখন কারোরই আপত্তি নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীরা মোবাইলফোনকে নেতিবাচক কাজে ব্যবহার করছে; তাই বলে প্রযুক্তি উন্নয়নকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তবু প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিকল্পনা ও কৌশলগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে। উন্নত দেশে সামাজিক চাহিদা ও বাণিজ্যিক লাভের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেভাবে অতি দ্রুত প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছেÑতার সঙ্গে আমরা অনেক সময়ই তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। যেমন ঘটেছে বাংলাদেশে থ্রিজি মোবাইলফোন চালুর ক্ষেত্রে। এখানে টেলিটক উন্নতমানের থ্রিজি মোবাইলফোন চালু করতে গিয়ে সুবিধার বদলে বরং অসুবিধাই সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে টেলিটকের থ্রিজি সেবা নিয়ে বেশিরভাগ গ্রাহক বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থার কথা বিবেচনা করে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, আমাদের দেশের জন্য এখনই এই ‘তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইলফোন প্রযুক্তি’র প্রয়োজন আছে কিনা।
কারণ ইতোমধ্যে আমাদের এখানে চালু হওয়া টুজি মোবাইলফোনের কিছু অসুবিধা কিংবা বাধা এখনও দূর হয়নি। কেউ কেউ মনে করেন, দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা করে কলচার্জ আরও কমানোর অবকাশ রয়েছে। কলচার্জের ক্ষেত্রে ফোন কোম্পানিসমূহের মধ্যে এখনও যথেষ্ট বৈষম্য আছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সর্বক্ষণিক তদারকি অপরিহার্য। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, দেশব্যাপী টুজি মোবাইলফোনের সেবার মান আরও উন্নত করা; গ্রাহকের খরচ আরও কমানোর উদ্যোগ নেয়া। তা না করে উন্নত বিশ্বের থ্রিজি মোবাইলফোন এখানে তড়িঘড়ি করে চালুর চেষ্টার পেছনে মূলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যই কাজ করেছে। এখানে যে থ্রিজি প্রযুক্তি চালু হয়েছে তা খুবই মন্থর গতিসম্পন্ন।
অথচ সম্প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে আরও বিদেশী অপারেটরকে থ্রিজি লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে ভারতের দুটি ও ব্রিটেনের একটি কোম্পানির কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, থ্রিজি মোবাইলফোন কিছুটা ব্যয়বহুল। এছাড়া এই মোবাইল প্রযুক্তির বিষয়ে দেশের গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। তাই জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে টুজি মোবাইলফোনের সেবা উন্নয়নে আরও বেশি তৎপর হওয়া দরকার। জনগণও তাই চায়। একই সঙ্গে সম্পূর্ণ ত্রুটিহীনভাবে থ্রিজি মোবাইলফোনের সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রাহক যাতে সস্তায় থ্রিজি ফোন ব্যবহার করতে পারে সেদিকে মনোযোগী হতে হবে। বিদেশী অপারেটরদের বদলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থ বেশি দেখতে হবে। থ্রিজি মোবাইলফোনে যে ভিডিও কল, ডাউন লোডিং ও মোবাইল টিভির ব্যবহার আছেÑতার দ্বারা জনগণ উপকৃত হতে পারে। তবে গোটা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও কল্যাণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার

No comments

Powered by Blogger.