প্রাণের গভীরে- যদি বন্ধু থাকত তাহলে ...

প্রাণের গভীরে জমা থাকা বুদবুদের মতো জমা হয়ে আছে অনেক কথা! এক সময় সে কথার ওপর মরিচা পড়ে। জীবনের টানে আবার মরিচা তোলার চেষ্টা করি।
সুন্দর তুমি আমার মনের ইনবক্সের সব এসএমএস! একা একা পড়তে থাকি এক সময় একা আর পড়তে ভাল লাগে না!
তখন যদি একজন ভাল বন্ধু আমার কাছে থাকত তাহলে হয়ত তাকে বলব সেই মনের কথাগুলো। কিন্তু আমার তো কোন বন্ধু নেই! যদি বন্ধু থাকত তাহলে হাসি-কান্না ভাগাভাগি হতো দু’জনে। আর কখনও একা চাঁদ দেখতে হতো না। নদীর পারে বসে গল্প করতাম দু’জনে। দেখতাম মাঝে মধ্যে মোবাইলের স্ক্রিনের ওপর কখন আসবে বন্ধু তোমার ফোন! তাই আমি ডি প্রজন্মের মাধ্যমে একজন ভাল বন্ধু চাই। বন্ধু হবে তো?
আল আমীন
০১৭৩৮১৫১৯৩৫


হারানো প্রেম
যদি বন্ধু থাকত তাহলে
কোন এক পড়ন্ত বিকেলে বাঁধন-হারা পাখির মতো বেশ কিছু শিশুর ভিড়ে জানালার ফাঁক গলে এক কিশোরীর চোখে চোখ পড়ে যায় অঞ্জনের। কাছে যেতে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে সেই কিশোরী। অঞ্জন তার নাম জানতে চাইলে হৃদয় ভোলানো হাসি দিয়ে সে বলে, তার নাম নিশি। এভাবে প্রতিদিন ঐ একই স্থানে নিশির সাথে কথা হতো অঞ্জনের। কয়েকদিন যেতেই অঞ্জন নিশিকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেয়। এরপর জ্যোৎস্না-স্নাত রাতে মাকে ফাঁকি দিয়ে অঞ্জনের সাথে দেখা করা, ঠোঁটে ঠোঁটে অস্পষ্ট অনুভূতির একান্ত বিনিময়, বাসার সেল ফোন দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলা, সব মিলিয়ে বেশ ভালোই যাচ্ছিল অঞ্জন আর নিশির সময়। এভাবে দেখতে দেখতে কেটে যায় দুটি বছর। হঠাৎ এক সময় বেশ ঘটা করে একটি চাকুরে ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায় নিশির। এ অবস্থায় পারিবারিক আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে অঞ্জন ছিল অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। আপাতদৃষ্টিতে মরণ হয় দুটি মনের।
দুই বছর পর...
হঠাৎ একটা অপরিচিত নম্বর থেকে অঞ্জনের ফোনে কল এলো। ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে সুমধুর কণ্ঠে কেউ বলল, হ্যালো! অঞ্জন!
অঞ্জন বিস্মিত কণ্ঠে পাল্টা প্রশ্ন করেÑআপনি কে বলছেন? প্রশ্নের উত্তর এল না। অপর প্রান্ত থেকে প্রশ্ন ভেসে এলো আপনি কি অঞ্জন বলছেন? এবার অঞ্জন বলে, জ্বি বলছি।
সত্যিই তুমি আমাকে চিনতে পারনি! অঞ্জন! আমি নিশি। হ্যাঁ! তোমার নিশি। স্যরি, আমার নিশি মানে কি? আমি তো কোন নিশিকে চিনি না। যাকে চিনতাম সে আর এখন আমার নেই। সে অনেকদিন আগে অন্যের হয়ে গেছেÑবলল অঞ্জন। প্লিজ, অঞ্জন বিশ্বাস কর নিশি আজও তোমারই আছে। নিশির এমন কথা শুনে অঞ্জন অনেকটা বাকরুদ্ধ।
এতদিন পরে আপনি কেন আবার ভুলে যাওয়া স্মৃতি মনে করাতে এসেছেন?
সত্যিই কি তুমি তোমার নিশিকে ভুলতে পেরেছ?
অঞ্জন যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
প্লিজ অঞ্জন, আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা কর!
আপনার হাজবেন্ড কোথায়?
ওঁ বাসায় নেই। তাই তোমাকে ফোন করলামÑবলল নিশি।
এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কেন ফোন করছেন? বিষয়টা আপনার হাজবেন্ড জেনে গেলে আপনার ক্ষতি হয়ে যাবে। এভাবে অঞ্জন নিশিকে বোঝানোর চেষ্টা করে। তবু নিশি যেন কিছুই বুঝতে চাইছে না। সে সোজা কথায় বলে দেয়, আমার যা হবার হোক। বিশ্বাস কর অঞ্জন এখানে আমার একদম দম বন্ধ হয়ে আসছে। আর একটি মুহূর্তও এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
এসব আপনি কি বলছেন? এখন এসব কথা বলে নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছেন? আপনাকে একটা কথা বলি, পেছনের সব কিছু ভুলে যান। একটু কষ্ট হলেও ভুলে যানÑ বলল অঞ্জন।
নিশি বলল, অঞ্জন একটা রিকোয়েস্ট করি! প্রমিস কর রিকোয়েস্টটা রাখবে!
অঞ্জন বলল, ঠিক আছে বলুন। সাধ্য মতো রাখার চেষ্টা করব।
নিশি বলল, এটা আমার নাম্বার, যদি আমি তোমাকে ফোন করে একটু কথা বলতে চাই, তুমি কোন দিন কথা বলা বন্ধ কর না প্লিজ!
অঞ্জন বলল, ঠিক আছে। এভাবে নিয়মিত কথা বলার এক পর্যায় বিষয়টি নিশির হাজবেন্ড আতিক জেনে যায়। নিশির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে তার এবং অঞ্জনের সম্পর্কের কথা আতিককে সাফ জানিয়ে দেয়।
ছি! নিশি ! শেষ পর্যন্ত একটা হিন্দু ছেলের সাথে! ছি! তুমি যদি ঐ হিন্দু ছেলেটাকেই ভালোবাসবে তবে আমাকে বিয়ে করলে কেন? Ñবলল আতিক।
নিশি বলল, সত্যিই আমি ভুল করেছি। আজ পুরনো ভুলগুলো শুধরে নিতে চাই।
ভাবতেও লজ্জা হয় তোমার বয়ফ্রেন্ড একটা হিন্দু! অঞ্জনকে নিয়ে আরেকটাও বাজে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি। নিশির এমন আচরণে আতিক প্রচ- বিব্রত। সে নিশিকে তার বাবার বাড়ি চলে যেতে বলে। নিশি কোন কথা না বলে বাবার বাড়ি চলে আসে। কিছুদিন পর আতিককে ডিভোর্সের সব কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয় নিশি। এভাবে অবসান ঘটে দুই বছরের বৈবাহিক জীবনের। নিশির এমন অবস্থার কথা অঞ্জন জানলেও এখন আর অঞ্জনের কিছুই করার নেই। এখন অঞ্জন আর নিশি দুজন দুই প্রান্তের দুটি খসে পড়া নক্ষত্রের মতো আলোহীন আঁধার পথের যাত্রী।
মোস্তাসিম
০১৭২২৭২৫০৮৮

No comments

Powered by Blogger.